ভারী বর্ষণে যে কোন সময় ভয়াবহ পাহাড় ধস এবং ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে

0
754

কক্সবাজারের চকরিয়ায় পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছে অন্তত লাখো মানুষ। এসব পাহাড়ে কম করে হলেও ২০ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। ভারী বর্ষণে যে কোন সময় ভয়াবহ পাহাড় ধস এবং ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের বাসিন্দা সাঈদুল হক চৌধুরী জানান, বর্ষা মৌসুমের প্রথম দফার লাগাতার ভারী বর্ষণে বার আউলিয়া নগর গ্রামে অসংখ্য পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে।

তবে এসব পাহাড়ের পাদদেশ বা উঁচুতে কোন বসতি না থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। অবশ্য পাহাড় ধসে পড়ার ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরপরও পাহাড়ের উঁচুতে এবং পাদদেশে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করা অন্তত তিন শতাধিক পরিবার চরম ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে। তাদেরকে সরিয়ে না নিলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে। এ বিষয়ে লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা কাইছার বলেন, ‘পাহাড় ঘেরা বার আউলিয়া নগর গ্রামটি কাকারা ইউনিয়নেরই অংশ। তবে সেখানে লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের কয়েকশ ভোটার পরিবার-পরিজন নিয়ে পাহাড়ি জায়গায় বসতি নির্মাণ করে রয়েছেন। এসব পরিবারকে অনেক আগে থেকেই তাগাদা দেওয়া হয়েছে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে দূরে থাকতে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। বিষয়টি ইতিমধ্যে আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছি।’ কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলাম নগর গ্রামের মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক লাগোয়া ইসলাম নগর নামের পুরো গ্রামটিতে পাহাড় আর পাহাড়। এখানে পাহাড়ের ওপর এবং পাদদেশে ব্যাপক সংখ্যক বসতি গড়ে উঠে। কিন্তু যেভাবে চারিদিকে ভয়াবহ পাহাড় ধস এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এখন ঘোর বর্ষাকাল, এই সময় লাগাতার ভারী বর্ষণ শুরু হলে ইসলাম নগর পাহাড়ি এলাকায়ও পাহাড় ধসের মতো বড় ধরণের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মক্কী ইকবাল হোসেন বলেন, আমার ইউনিয়নের ইসলাম নগর পাহাড়ি এলাকায় কম করে হলেও দুই হাজার বসতি রয়েছে। সেখানে চরম ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের উুঁচনিচু টিলা এবং পাদদেশে বসবাস করছে প্রায় তিন হাজার মানুষ। পাহাড়ে বসবাসে চরম ঝুঁকি থাকলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় এসব মানুষ পাহাড় ছাড়তে চাচ্ছেন না। তাদেরকে ইতিমধ্যে অনেকবার সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি এসব বিষয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও অবহিত করা হয়েছে।’ একইভাবে খুটাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামও পাহাড় বেষ্টিত। সেখানেও ব্যাপক ঝুঁকির মুখে পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এ বিষয়ে খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রহমান জানান, সম্প্রতি পার্বত্যাঞ্চলে ভয়াবহ পাহাড় ধস এবং ব্যাপক সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনার পর স্থানীয় চৌকিদারদের মাধ্যমে খুটাখালী ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী লোকজনকে দফায় দফায় সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব আহমেদ বলেন, ‘চকরিয়ার বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে। ইতোপূর্বেও এখানকার অনেক এলাকায় পাহাড় নিধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। যেসব এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে যৌথ অভিযান চালানো হবে। লাগাতার ভারী বর্ষণের সময় কাটা পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায়। এতে একসময় পাহাড় ধসে পড়ে। সামনে ভারী বর্ষণ হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।’ বিশেষ করে পাহাড় নিধনকারীদের একটি তালিকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চকরিয়াকে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী পূণরায় অভিয়ান চালানো হবে। এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দিন মো: শিবলী নোমান বলেন, ‘উপজেলার যেসব ইউনিয়নগুলোতে পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে মানুষ বসবাস করছে তাদেরকে স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এর পরেও যেসব এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ তা শনাক্ত করে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া হবে।’ তিনি আরো বলেন, যারা পাহাড় নিধন করে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − 6 =