সারি সারি বাস থামানো হচ্ছে মূল সড়ক দখল করে

0
503

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে আটটি লেনের কোথাও কোনো বাস বে (বাস থামানোর জায়গা) নেই। সারি সারি বাস থামানো হচ্ছে মূল সড়ক দখল করে। গতকাল শনিবার দুপুরে আনসার ক্যাম্প, গাবতলী ও বিভিন্ন স্থান থেকে আব্দুল্লাহপুর কিংবা নতুনবাজার রুটের কোনো বাসেই চালকের ছবিসহ লাইসেন্স সংরক্ষণ করে রাখার দৃশ্য চোখে পড়েনি।

অথচ নিরাপদ সড়কের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত মাসে দেওয়া ১৭ দফা নির্দেশনার একটি হলো বাসের দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর প্রদর্শন নিশ্চিত করা। আকিক পরিবহনের একটি বাসে এসব দেখতে না পেয়ে কারণ জানতে চাইলে ওই বাসের চালকের সহকারী মো. দুলাল বলেন, ‘লাইসেন্স তো পুলিশ চাইলে দেখাব, বাসে ঝুলিয়ে রাখব কেন?’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৭ দফা নির্দেশনায় আরো আছে—ঢাকা শহরে গণপরিবহন চলাকালে সব সময় দরজা বন্ধ রাখা এবং বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানো সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয় বিআরটিএ ও ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি)। গতকাল অবশ্য সিটিং সার্ভিসের নামে দরজা বন্ধ রেখে বাস চলতে দেখা গেছে মিরপুর, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে। নিরাপদ সড়কের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই পাঁচটি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সমন্বিত ব্যবস্থায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ১৭টি নির্দেশনা। তবে অভিযোগ আছে, এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে চান না বেসরকারি পরিবহন মালিক ও নেতারা। বিভিন্ন সংস্থারও গাফিলতি আছে; যেমন—সিটি করপোরেশন জ্রেবাক্রসিং তৈরি করছে না, করছে না বাস বে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সাড়া-জাগানো আন্দোলনের এক মাস পার হয়েছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিশেষভাবে আগ্রহী হলেও স্বল্পমেয়াদি ও ব্যয়সাশ্রয়ী উদ্যোগ নিতে তেমনটা আন্তরিক নয় বলে জানা গেছে। তবে বিআরটিসির বাসে চালকের ছবিসহ লাইসেন্স ঝোলানো হয়েছে। বিআরটিসির বাস পরিষ্কার রাখার জন্য আগামী ৮ সেপ্টেম্বর থেকে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া এক লাখ নতুন চালক তৈরি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসিসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে গঠিত ১৮ সদস্যের কমিটির সদস্য ও বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভুইয়া গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ৩৬ হাজার দক্ষ চালক তৈরি করতে উদ্যোগ নিচ্ছি নির্দেশনানুসারে।’ ১৮ সদস্যের কমিটি হওয়ার পর গত ২৭ আগস্ট আরেকটি সভা হয়েছে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি পেশ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে রাজউক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকেই (ডিএসসিসি) বেশি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাস বে করা, ইউলুপ করার মতো কাজ করতে হবে তাদের। বেশি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলা হয়েছে পুলিশকে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ২৯ জুলাই। তবে এর আগে ঈদুল ফিতরের সময় সড়কে প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ জুন মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বিষয়টি আলোচনায় আনেন। বৈঠকে সড়ক নিরাপত্তার ১৫টি বিষয় উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ পাঁচটি নির্দেশনা দেন। এসব নির্দেশনার মধ্যে ছিল কোনো চালকের টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, দূরপাল্লার যানবাহনে বিকল্প চালক রাখা, ফিটনেসহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি। এ নিয়ে পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বৈঠক করে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য বিআরটিএর চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ৯ সদস্যের কমিটি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট দূরত্বে সার্ভিস সেন্টার বা চালকদের জন্য বিশ্রামাগার করা, গাড়ির চালক ও তাঁর সহকারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সিগন্যাল মেনে পথচারী পারাপারে জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করা বা অবৈধভাবে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা এবং চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধা নিশ্চিত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গত ৩ জুলাই এক সভায় দূরপাল্লার যানবাহনে চালকের টানা পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি না চালানো, চলন্ত গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও পরিবহন মালিকদের। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা খুলনা জাতীয় মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য সওজ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দক্ষ চালক তৈরির জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ ট্রেড চালু করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে। মহাসড়কে যেখানে-সেখানে যাত্রী পারাপার বন্ধ করতে মহাসড়ক পুলিশ ও পরিবহন সংগঠনগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলোর প্রায় সবই মোটরযান অধ্যাদেশে আছে। আইন অনুযায়ী এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের। মোটরযান অধ্যাদেশ অনুসারে কোনো চালক টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি যানবাহন চালাতে পারবেন না। এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ আট ঘণ্টা গাড়ি চালানো যায়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণ ছিল বিশ্রাম না নিয়ে একটানা গাড়ি চালানো। কিন্তু ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা আন্তরিক নন। তাঁরা চালকদের তদারকির মধ্যে আনতে পারেননি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যাহ অবশ্য কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা চালকদের সঙ্গে নিয়মিত সভা করছি, তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। গাড়ির মালিকদের বলেছি মুনাফার জন্য যেন চালকদের নির্ঘুম গাড়ি চালাতে না হয়। তবে আমরা শতভাগ সাফল্য পাইনি। এ সাফল্য পেতে সময় লাগবে।’ এনায়েত উল্ল্যাহ আরো বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বাস বে করলে যেখানে-সেখানে বাস থামানোর বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি থেকে রেহাই মিলত। আমরা বেসরকারি সব বাসে চালকের ছবিসহ লাইসেন্সের ফটোকপি রাখার জন্য এ সপ্তাহে সার্কুলার দেব। আমাদের কাউন্টারের জন্য জমি দেওয়া হলে আমরাই তা বানাব।’ ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম জানান, বাস বে ও জেব্রা ক্রসিং করার কাজে হাত দেওয়া হয়েছে। সব কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। তবে মহাসড়কে বিশ্রামাগার নির্মাণ করার নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি হয়েছে। এ বিষয়ে দায়িত্ব পাওয়া সওজ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিশ্রামাগার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এ সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। গত বছর ২৫ অক্টোবর এ পরিষদের সভা হয়েছিল। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এবার পরিষদের সভা হয়েছে গত ২৭ আগস্ট। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সড়ক ও মহাসড়কে ধীরগতির যান চলাচলের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের। নসিমন, করিমন, ভটভটি, ইজি বাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও লেগুনা চলাচল বন্ধ করতে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়কে ধীরগতির গাড়ি চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারণ গত ঈদুল আজহার আগে থেকেই হালকা যানবাহনে প্রাণহানির হার ছিল বেশি। সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ বাস, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের অননুমোদিত এঙ্গেল, হুক ও বাম্পার। এগুলো অপসারণ করা হয়েছে ৯০ শতাংশ। জানা গেছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয় জোরেশোরে। তবে নির্বাহী হাকিমের সংকটের কারণে এ অভিযান পর্যাপ্ত নয় বলে সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন। এ অবস্থায় নির্বাহী হাকিম আটজন থেকে বাড়িয়ে এরই মধ্যে ১১ জন করা হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের ৮০ কিলোমিটার গতিসীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে মহাসড়ক পুলিশ ও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির অভিযোগ আছে। সড়ক উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত শতভাগ বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্যানুসারে, ঢাকার সড়কে অর্ধেকের বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে পথচারীদের। রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং হাতে গোনা। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভাকে দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কাজ করাতে পারছে না বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান উদ্যোগী হয়ে বারবার বৈঠক করেন বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে। সর্বশেষ গত ২০ আগস্ট ১৮ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও নিরাপদ সড়কের জন্য বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তার জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে। মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের কর্ম-উদ্যোগের এক মাস পূর্তি হবে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর। আমরা এদিন পর্যালোচনা করব। কোন সংস্থা কি করেছে, কে দায় এড়াল, সব তখন বোঝা যাবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা আনতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে কোনো অজুহাত শোনা হবে না।’ ওই কমিটিতে সদস্য রাখা হয়েছে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, সওজ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, বিআরটিসি, রাজউক, ডিএনসিসি, ডিএসসিসি, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের প্রতিনিধিকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে হেলমেট পরিধান ও সিগন্যালসহ ট্রাফিক আইন মানতে বাধ্য করার নির্দেশনা ছিল। গত কয়েক দিনে ঢাকার সড়কে দেখা গেছে, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট না পরে তা চালাচ্ছে। গতকাল সকালে বিজয় সরণিতে মোটরসাইকেল চালক মো. আলী হোসেন বলেন, আগে কড়াকড়ি ছিল। এখন তা কমে গেছে। ছুটির দিনে ট্রাফিক পুলিশও কম। সব সড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (বিশেষত দূরপাল্লার বাসে) চালক ও যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহারের নির্দেশনা ছিল। তার দায়িত্ব ছিল বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সিট বেল্ট সংযোজন করতে সময় লাগবে। ঢাকা শহরের যেসব স্থানে ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস আছে সেসব স্থানের উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করা কিংবা ফুট ওভারব্রিজ বা আন্ডারপাসে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; আন্ডারপাসে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপনসহ ব্যবহার করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হয়নি। ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। গত ১৮ আগস্টের মধ্যে ঢাকা শহরের সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাত হকারমুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা, সব সড়কের নামফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ডিএনসিসি ও ডিএসসিসিকে। এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রগতি নেই বলে জানা গেছে। একইভাবে ঢাকা শহরে রিমোট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগন্যালিং পদ্ধতি চালু, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ঢাকা শহরের সব সড়কের রোড ডিভাইডারের উচ্চতা বাড়িয়ে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া, মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউন) ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত দৈব চয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করার নির্দেশনা ছিল। শহরের অন্য সব স্থানেও প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ীভাবে অনুরূপ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশনায় অবশ্য অগ্রগতি হয়েছে। ঢাকা শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি বা আরম্ভ হওয়ার সময় জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট ও বিএনসিসির সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা অবশ্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে। অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং ফিটনেস দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অবশ্যই পরিবহন দেখে নেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়নে গতি নেই বিআরটিএতে। রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার নির্দেশনার বিষয়েও সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুরোদমে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ‘লারনার’ দেওয়ার আগে ড্রাইভিং টেস্ট নেওয়া এবং উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের দ্রুততম সময়ে লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিআরটিএ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করছে বলে জানা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তা পূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএসহ বিভিন্ন সংস্থা বেশ উদ্যোগী বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্র মতে, বিআরটিএ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বলেছে, বিআরটিএ অফিসে দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। প্রশিক্ষণকেন্দ্রের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরি করা হবে। এমনভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে যাতে অযোগ্য কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স না পায়। বাড়তি ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে বোর্ড গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে বিআরটিএ। তবে এসব বাস্তবায়নে বিআরটিএর উদ্যোগ লোক দেখানো। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা দ্রুত লাইসেন্স ও ফিটনেস পরীক্ষার কাজ করতে আরো বেশি উদ্যোগ নিয়েছি। তবে সব ক্ষেত্রে কি পরিবর্তন দ্রুত আনা সম্ভব? সময় লাগবে। আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়মিত পরিচালনা করছি।’

অকর্মণ্যদের সরানো হবে : প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের কাছে গত রাতে অগ্রগতি ও পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি  বলেন, ‘বিআরটিএ এবং বিআরটিসিসহ বিভিন্ন সংস্থার অকর্মণ্য কর্মকর্তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাঁদের স্থলে অন্যদের পদায়ন করা হবে, যাঁরা সক্ষম ও কাজে উৎসাহী। আমরা নিরাপদ সড়ক গড়তে সক্ষমতা অর্জন করতে চাই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে চাই। এ জন্য দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে। আমাদের উদ্যোগের ফল দৃশ্যমান হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন আন্ডারপাস ও ওভারব্রিজে আমাদের আকস্মিক অভিযান চলছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করা হচ্ছে কি না তা আমরা নিবিড়ভাবে তদারক করছি। আমরা সময় বেঁধে দিয়ে সংস্থাগুলোকে কাজ করতে বেশি জোর দিচ্ছি।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − 7 =