আর কোন উপায় নেই সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে -রিজভী

0
547

সরকার পতনের মহালগ্ন উপস্থিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আর কোন উপায় নেই। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে। পরশু দিনের প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে দাপট থাকলেও চেহারায় ছিল অন্যমনস্কতা ও দুঃশ্চিন্তার ছাপ। তবে আমরা সুস্পষ্টভাবে আবার জানিয়ে রাখি, গণদাবি উপক্ষো করলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।

মঙ্গলবার (৪ সেপ্টেম্বর ) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, দেশের ভোটারদের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভিত্তিত্বে ভাগ করে ফায়দা লুটার অভিনব চক্রান্ত শুরু করেছে আওয়ামী মন্ত্রী ও নেতারা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, জাতীয় ঐক্যের নামে সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত হচ্ছে, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। আকস্মিকভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের আওয়ামী নেতার বক্তব্য অশুভ চক্রান্তের ইঙ্গিতবাহী। আবহমান বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্টকরে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে নেমে পড়েছেন ওবায়দুল কাদের সাহেবরা। জনসমাজে সাম্প্রদায়িক ঐক্য যখন অটুটবন্ধনে গ্রথিত, তখন ওবায়দুল কাদের সাহেবের আচমকা সাম্প্রদায়িকতা টেনে আনা দেশের মানুষকে পরিকল্পিত বিভাজনের দিকে ঠেলে দেয়ার এক গভীর চক্রান্ত। শান্তি ও সহবস্থানের মধ্য দিয়ে ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নির্বিশেষে জণগনের নির্বিঘ্নে বসবাসের ওপর ওবায়দুল কাদের বক্তব্য মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার শামিল। ক্ষমতার মোহে মশগুল হয়ে আওয়ামী নেতারা মনের বিকারে প্রলাপ বকতে গিয়ে এখন সাম্প্রদায়িকতাকে সামনে নিয়ে আসছে। তারা ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্র সমাজের স্থিতিকে ভেঙ্গে ফেলতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ শাসকগোষ্ঠি ক্রমাগত জনবিচ্ছিন্ন হতে হতে ব্যর্থতার অন্ধগলিতে পথ হারিয়ে এখন চক্রান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সেই জন্য তারা সাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাতুলে কোন খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের সাহেব সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা করছেন কেন? তাহলে কি তারাই সাম্প্রদায়িক হামলা করে কোন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করবেন কিনা এ প্রশ্ন জনগনের মধ্যে দীর্ঘতর হচ্ছে। এখনও বর্তমান সংবিধানে যতটুকু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার আছে অর্থাৎ সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার সম্বলিত যে বিধান সংরক্ষিত আছে ওবায়দুল কাদের সাহেবের বক্তব্য সেই অধিকারকেও বিপন্ন করার উস্কানি। জনবিচ্ছিন্ন সরকার ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন। বিএনপির এই নেতা বলেন, কাদের সাহেবকে পরিস্কার বলতে চাই- কোন প্রকার উস্কানি দিয়ে লাভ হবে না। এদেশের সকল ধর্মীয় সম্প্রদায় অটুট ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ। বরং  শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে মন্দির গীর্জা ও প্যাগোডায় সবচেয়ে বেশী আক্রমণ হয়েছে। তাঁর আমলেই সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশী নির্যাতিত ও নিরাপত্তাহীন। তাদের ব্যক্তিগত, সাংগঠনিক ও ধর্মীয় সম্পত্তির ওপরও আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ-ছাত্রলীগের লোকেরা হামলা করেছে। আওয়ামী লীগের লোকেরাই তাদের ঘর-বাড়ি জায়গা জমি দখল করেছে,   আগুন দিয়ে মন্দিরসহ তাদের উপাসনালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে। ধর্মীয়সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর খুন, জখম, ধর্ষণ,অত্যাচারের বর্বোরচিত পৈশাচিকতা আওয়ামী লীগের শাসন আমলেই ঘটে, আওয়ামী লোকজনদের দ্বারাই। আওয়ামী এ আমলেও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অনেক ঘটনা এখনও রহস্যজনক। রিজভী বলেন, কয়েকবছর আগে একটি বেদনাদায়ক ঘটনা ব্লগার অভিজিৎ হত্যাকান্ড। ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে পুলিশের উপস্থিতির ১০ গজের মধ্যে এ হত্যাকান্ড ঘটে। সে সময় বই মেলা চলায় সারা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। তাহলে কিভাবে অভিজিৎ রায় খুন হলেন। এর দায়তো সরকারের। এবাবে পুরোহিত, গীর্জার ধর্মীয়যাজকসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ধর্মগুরুদের হত্যা করা হয়েছে-যার রহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি। হীনউদ্দেশ্য নিয়েই ওবায়দুল কাদের সাহেবরা সাম্প্রদায়িক বিভাজনের জিকির তুলছেন। তোফায়েল আহমেদ কার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন প্রশ্ন তুলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন,   আওয়ামী লীগ নেতা ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাহেব বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এক লাখ মানুষকে হত্যা করা হবে। এ তথ্য কোন পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে সংগ্রহ করেছেন তোফায়েল আহমেদ-এটি জানতে জানতে চায়। এ তথ্যের উৎস কি হাসানুল হক ইনু,  না সজিব ওয়াজেদ জয় ? এক লাখ লোক মারা যাওয়ার আশংকা করছেন কেন তোফায়েল আহমেদ? আপনাদের কোন অপকর্মের কারণে আপনাদের এ আশঙ্কা করছেন ? বিএনপি তো এর আগে অনেকবার ক্ষমতায় এসেছে কিন্তু কোথাওতো রক্ত ক্ষরণের কোন দৃষ্টান্ত নেই। আপনাদের কোন অন্যায় অপরাধের কারণে এত ভয় পাচ্ছেন? আপনাদের এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা ঘরবাড়ি ছেড়ে দোকান পাট, গরু ছাগল বিক্রি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দেখামাত্র আওয়ামী লীগ হামলা করে, জখম করে। বিরোধী দল ও মতের যে কোন ব্যক্তিই ভোলা এলাকায় বসবাস করতে পারছে না। নিজেদের অপকর্মের প্রতিশোধ হতে পারে এ আশঙ্কায় কি তোফায়েল আহমেদ সাহেবরা মানুষ হত্যার কাল্পনিক তথ্য দিচ্ছেন? আসলে ভবিষ্যতে ব্যাপক হত্যার ভীতি ছড়িয়ে জনসমাজে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি করছেন। বিরোধী দল দমনে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করছেন? বিএনপি প্রতিহিংসা প্রতিশোধের রাজনীতি করে না। বিএনপির সময়ই মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পেরেছে। এ ধরণের গুজবের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগনকে সতর্ক ও সজাগ। সারাদেশে আবারও নতুন করে মামলা গ্রেফতার শুরু হয়েছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন,  দেশব্যাপি আবারও নতুন করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে অথবা নিজেরাই নাশকতার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে নির্বাচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবুল খায়ের ভূইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সরাফত আলী শপু, আব্দুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + ten =