আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইন করা হচ্ছে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি

0
792

ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এমপি. বলেছেন, আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানের অপব্যবহার যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইন করা হচ্ছে। জনগণকে ক্ষেপিয়ে দেয়ার কৌশল এটা নয়, যারা এ বদমায়েশি করছে জনগণ তাদের ছেড়ে দিবে না। এর প্রতিশোধ জনগণ নিবে।
আজ রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন (এফবিজেও) কর্তৃক ‘জাতীয় শোক দিবস ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এ কথা বলেন।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন (এফবিজেও) এর চেয়ারম্যান এস এম মোরশেদ এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ, সাহিত্যিক ও গবেষক সেলিম রেজা, সঞ্চালক এম এ মোতালিব, লায়ন নূরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান মনির, আহাম্মদ আবু জাফর, আজগর আলী মানিক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেন, প্রযুক্তি জ্ঞানের প্রসার ঘটিয়ে জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার প্রত্যয় নিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার অথচ সেই প্রযুক্তিরই অশুভ ব্যবহার ঘটিয়ে এদেশের শান্ত পরিবেশকে বিঘœ ঘটানোর অপপ্রয়াস চালাচ্ছে এক ষড়যন্ত্রকারী অশুভ মহল। প্রযুক্তির অশুভ ব্যবহারকারী ষড়যন্ত্রকারীদের থেকে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ভূমিমন্ত্রী শরীফ আরও বলেন, জাতীয় শোক দিবস ও আমাদের করণীয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য একটি বিষয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতার কথা, আদর্শের কথা, মানুষের উন্নত জীবনের অধিকারের কথা বলে গিয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অর্থায়নে ২০০টি এমজি ও ৫০টি বিজি কোচ সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এডিবি অর্থায়নে ৪০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ, ৭৫টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ লাগেজ ভ্যান এবং ৫৮০টি মিটারগেজ ও ৪২০টি ব্রডগেজ ওয়াগন সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
দেশের বন্ধ হওয়া রেললাইন চালুকরণে গৃহীত কার্যক্রম
পুনর্বাসন শেষে বন্ধ হয়ে যাওয়া কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া সেকশন (৭৫.৫০ কি:মি:) ০২.১১.২০১৩ তারিখে এবং সৈয়দপুর-চিলাহাটি সেকশন (৫২.২০ কি:মি:) ২৮.০১.২০১৫ তারিখে উদ্বোধন করা হয়।
বিরল-রাধিকাপুর সেকশনের পুনঃসংযোগের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ অংশের পার্বতীপুর হতে বিরল পর্যন্ত মিটার গেজ সেকশনকে ডুয়েল গেজে রূপান্তরের জন্য জেডিসিএফ অর্থায়নে মোট ১০৬৪.১৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় ও কাঞ্চন-বিরল মিটার গেজ সেকশনকে ডুয়েল গেজে এবং বিরল-বিরল বর্ডার সেকশনকে ব্রড গেজে রূপান্তর শীর্ষক প্রকল্প ১৫.০৪.২০০৯ তারিখে একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ০৮ এপ্রিল ২০১৭ তারিখে বিরল-রাধিকাপুর সেকশনে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রেল সংযোগ পুনঃস্থাপিত হয়।
যানজট নিরসনে বাংলাদেশ রেলওয়ে
২০ সেট ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) সংগ্রহ: রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শহরের যানজট নিরসনে চীন হতে বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ২০ সেট (৩ ইউনিটে একসেট) ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট (ডিইএমইউ) সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে ১৬ জোড়া কমিউটার ট্রেন এবং জয়দেবপুর-ঢাকা সেকশনে ৪ জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, ময়মনসিংহ-জয়দেবপুর, আখাউড়া-কুমিল্লা, লাকসাম-কুমিল্লা-চাঁদপুর, লাকসাম-কুমিল্লা-নোয়াখালী, সিলেট-আখাউড়া, পার্বতীপুর-ঠাকুরগাঁও, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম শহরে সার্কুলার কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এতে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য জনবহুল শহরগুলোতে যানজট অনেকাংশে লাঘব হয়েছে।
সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত কার্যক্রম
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন সেকশনের মোট ৭৯টি স্টেশনের সিগন্যালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে, এর ফলে অধিকতর নিরাপত্তার সাথে ট্রেন চলাচল নিশ্চিত হয়েছে। আরো ৫১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নতুন ট্রেন চালুকরণ ও নতুন যাত্রীবাহী কোচ সংযোজন
গত ২৫-০৬-২০১৬ তারিখে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা এর মধ্যে বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস নামে নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে। গত ০৮-০৯-২০১৬ তারিখে ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে আন্তঃনগর ট্রেন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে আরও একটি নতুন ট্রেন উদ্বোধন করা হয়। ফলে ২০০৯ সালের শুরু থেকে অদ্যাবধি আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনসহ সর্বমোট ১১৪টি নতুন ট্রেন বিভিন্ন রুটে চালু করা হয়েছে এবং ৩৬টি ট্রেনের সার্ভিস বর্ধিত করা হয়েছে। এছাড়া নতুন, আধুনিক ও উন্নতমানের যাত্রীবাহী কোচ আমদানির মাধ্যমে বিদ্যমান ট্রেনসমূহের পুরাতন যাত্রীবাহী কোচ পরিবর্তন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে মহানগর প্রভাতী ও তূর্ণা এক্সপ্রেস, ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস, জয়ন্তীকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস, ঢাকা-খুলনা রুটে চিত্রা এক্সপ্রেস ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস, ঢাকা-রাজশাহী রুটে পদ্মা, সিল্কসিটি ও ধুমকেতু এক্সপ্রেস, ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস, ঢাকা-দিনাজপুর রুটে দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও একতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নীল সাগর এক্সপ্রেস-সহ বেশীরভাগ গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনসমূহের বিদ্যমান পুরাতন কোচ পরিবর্তন করে নতুন কোচ সংযোজন করা হয়েছে।
স্টেশন ও ট্রেনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি
রেলওয়ে স্টেশন ও ট্রেনের অভ্যন্তরে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হচ্ছে। ট্রেনের টয়লেটের বৈদ্যুতিক আলো, পানি, সাবান, টিস্যু পেপার ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে এবং টয়লেটসমূহ নিয়মিত পরিস্কার করা হচ্ছে। যাত্রীদের সুবিধার্থে বিভিন্ন স্টেশনে বিশ্রামাগার ও টয়লেট সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য ঢাকা, ঢাকা বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম স্টেশনসহ মোট ২৬টি স্টেশনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ডধঃবৎ অরফ, ইধহমষধফবংয-এর সহযোগিতায় বিভিন্ন ষ্টেশনে পানি শোধনাগার স্থাপন করা হয়েছে। ফলে যাত্রীসাধারণ উন্নত সেবা পেয়ে রেলওয়েতে ভ্রমণে আকৃষ্ট হচ্ছে এবং আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ডিজিটাল সার্ভিস প্রবর্তন
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের অংশ হিসাবে রেলওয়েতেও ডিজিটাল সার্ভিস প্রবর্তন করা হয়েছে। ফলে রেলওয়েতে যাত্রী পরিবহনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ট্রেনের অভিমুখ, ট্রেন ছাড়ার সময়, ট্রেনের অবস্থান, পরবর্তী স্টপেজ ইত্যাদি তথ্য মোবাইলে ঝগঝ-এর মাধ্যমে জানতে ঞৎধরহ ঞৎধপশরহম ধহফ গড়হরঃড়ৎরহম ঝুংঃবস (ঞঞগঝ) ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে ;
ট্রন চলাচল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি ডিসপ্লে মনিটরের মাধ্যমে যাত্রী সাধারণের জন্য সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে ঢাকা, ঢাকা বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ঈড়সঢ়ঁঃবৎরুবফ ঞৎধরহ ওহভড়ৎসধঃরড়হ উরংঢ়ষধু ঝুংঃবস প্রবর্তন করা হয়েছে। এ ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
যাত্রীদের সুবিধার্থে ঢাকা, ঢাকা বিমান বন্দর এবং চট্টগ্রাম স্টেশনে ফ্রি ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। এছাড়া, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারি সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা এক্সপ্রেস এবং মহানগর প্রভাতী ট্রেনে স্নিগ্ধা শ্রেণির যাত্রীদের সুবিধার জন্য ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে।
যাত্রী সাধারণের সুবিধার্থে ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ট্রেনের টিকেট ক্রয়ের জন্য ই-টিকেটিং সুবিধা চালু করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × five =