১২ নারী-কিশোরীকে আটক, নিখোঁজ ৫

0
604

গাজীপুর নগরের মোগড়খাল এলাকার মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের দোতলার জানালার গ্রিল কেটে পালানোর পর ১২ নিবাসীকে আটক করা হয়েছে। আরো পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছে। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পালানোর খবর পাওয়ার পরপর রাতেই পুলিশ ওই কেন্দ্রের ছাদ থেকে দুজন এবং গাজীপুর নগরের ওয়্যারলেস গেট এলাকা থেকে দুজনকে আটক করে।

গতকাল শনিবার টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে আটক করা হয় এক শিশুসহ আটজনকে। আটক করার পর ওই নিবাসীরা কেন্দ্রের নানা অব্যবস্থাপনার বিষয়ে অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, অতিষ্ঠ হয়ে পালিয়েছিল তারা। এ ঘটনায় কেন্দ্রের হোস্টেল সুপার জোবাইদা খাতুন জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। দুটি তদন্ত কমিটিও করা হয়েছে। নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের সহকারী হোস্টেল সুপার পারভীন আক্তার জানান, কেন্দ্রে ৩৪ জন নিবাসী রয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু আছে দুটি। বাকিরা কিশোরী ও নারী। বিভিন্ন মামলায় আদালতের নির্দেশে তারা নিরাপদ হেফাজতে ছিল। তিনি জানান, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে কেন্দ্রের ভবনের দোতলায় অস্বাভাবিক শব্দ পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, জানালার গ্রিল ভাঙা। নেমে যাওয়ার জন্য খাটের কাঠ ও বিছানার চাদর দিয়ে সীমানা দেয়াল পর্যন্ত মইয়ের মতো করে বানানো। পরে গুনে দেখা যায়, ১৭ নিবাসী নেই। তখনই ঘটনাটি জয়দেবপুর থানায় জানানো হয়। তিনি আরো জানান, আটককৃতারা দাবি করেছে যে গ্রিল কাটার জন্য তারা চামচ ব্যবহার করেছে। পালানোর পরিকল্পনা করেছিল তিনজন। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ নওয়াজ দিলরুবা জানান, গতকাল দুপুরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁর নির্দেশে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফরিদা ইয়াসমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। নিবাসীদের অভিযোগ থাকলে তদন্ত কমিটি সেটা অনুসন্ধান করে দেখবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, রাত ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযানে নামে। রাত ২টার দিকে নগরের ওয়্যারলেস গেট এলাকার মায়া হোটেল থেকে দুই হেফাজতিকে আটক করা হয়। অন্যদিকে ভোগড়া ফাঁড়ির পুলিশ নিরাপদ হেফাজত কেন্দ্রের ছাদ থেকে আরো দুজনকে আটক করে। এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর রেলস্টেশনের কাছ থেকে এক শিশু, দুই কিশোর ও পাঁচ নারীকে রোহিঙ্গা সন্দেহে আটক করা হয়। পরে জানা যায় তারা গাজীপুরের মহিলা, শিশু ও কিশোরী হেফাজতিদের নিরাপদ আবাসন কেন্দ্রের নিবাসী। তাদের সঙ্গে থাকা এক কিশোরকেও আটক করা হয়। ওই কিশোর হলো সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা উপজেলার তিন নান্দিনা গ্রামের তারেক তালুকদার (১৭)। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গতকাল সকালে মির্জাপুর স্টেশন থেকে হেঁটে উপজেলা সদরের দিকে যাওয়ার সময় কথাবার্তা ও আচরণে সন্দেহ হলে তাদের আটক করা হয়। বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে তারেকের সঙ্গে মির্জাপুর পর্যন্ত এসেছে তারা। তারেক তালুকদার জানায়, বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ওই আটজনের সঙ্গে দেখা হয় তার। একপর্যায়ে তাদের নিয়ে সে ট্রেনে করে মির্জাপুর আসে। উদ্দেশ্য ছিল সিরাজগঞ্জ যাওয়া। মির্জাপুর থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তারা গাজীপুরের ওই নিরাপদ হেফাজতখানা থেকে পালানোর কথা স্বীকার করে। তারা জানায়, তারেকের সঙ্গে পরিচয়ের পর তারা কাজ করার কথা বলেছিল। তারেক তাদের সিরাজগঞ্জ নিয়ে যাচ্ছিল। আটক করার পর ওই নিবাসীরা পুলিশকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ হেফাজতে থাকায় এবং হেফাজত কেন্দ্রের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় অতিষ্ঠ হয়ে তারা পালিয়েছিল। বিশেষ করে খাবারের সমস্যা ছিল ভয়ানক। পরিমাণের চেয়ে কম খাবার দেওয়া হয়। সরকারি নিয়মমাফিক তরকারি দেওয়া হয় না। এমনকি গত দুই ঈদেও মাংস দেওয়া হয়নি। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, নিবাসী পালানোর ঘটনায় জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 10 =