বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের প্রায় দেড় বছর পরও পীরগঞ্জের স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি

0
814

কাজ শেষ দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের প্রায় দেড় বছর পরও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও শহীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর মাঝে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হানা দেয় পীরগঞ্জে। এদিন বিভিন্ন পেশাজীবীকে ধরে নিয়ে যায় পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও সড়কের ভাতারমারী ইক্ষু খামার এলাকায়।

সেখানে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুজা উদ্দিন আহম্মেদ, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, ব্যবসায়ী মোজাফ্ফর হোসেন, আব্দুল জব্বারসহ ৯ জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে তারা। ১৯৯৮ সালে ডাক বিভাগ অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও শহীদদের স্মরণে নির্মাণ হয়নি স্মৃতিসৌধ, সংরক্ষণ করা হয়নি তাঁদের সমাধি। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে আত্মদানকারী ৯ জনের সমাধি। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে শহীদ পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর দাবি দীর্ঘদিনের। এ অবস্থায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণে একটি প্রকল্প নেয়। ভাতারমারী ফার্ম এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণে দরপত্র (টেন্ডার) প্রক্রিয়াসহ যাবতীয় কাজ কাগজে-কলমে সম্পন্ন করে পরিষদ। ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু এবং ২৫ মে শতভাগ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে ঠাকুরগাঁও রোড এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘আরফান ট্রেডার্স’-এর নামে বরাদ্দকৃত সব টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ তখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি। কয়েক মাস আগে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়ার তত্ত্বাবধানে গত জুন মাসে (২০১৮) স্মৃতিসৌধ নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে মুক্তিযোদ্ধা, এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি আসে। কিন্তু কয়েক দিন পর বন্ধ করে দেওয়া হয় নির্মাণকাজ। শহীদসন্তান সলেমান আলী বলেন, ‘বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়। এ সরকারের আমলে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না করে প্রকল্পের সরকারি অর্থ তুলে আত্মসাতের পাঁয়তারা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা লজ্জিত, মর্মাহত। এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ একই রকম কথা বলেন শহীদসন্তান এনামুল কবীর, আজগর আলী ও আজাহারুল ইসলাম। পীরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কায়সার রহমান ডাবলু বলেন, তাঁর ইউনিয়নে এমন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন দেখিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা দুঃখজনক। অনেক চাপাচাপির পর কাজ শুরু হলেও এখন বন্ধ। এটা জাতির সঙ্গে প্রতারণা। পীরগঞ্জ উপজেলা উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক হোসেন বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা প্রকৌশলী কাগজে-কলমে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে আরফান ট্রেডার্সের নামে টাকা উত্তোলন করে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করেই ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, এটি উপজেলা চেয়ারম্যান করেছেন। তিনি বাধ্য হয়েই কাজ সমাপ্তের নোট দিয়েছিলেন। পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম অর্থ উত্তোলনের সত্যতা স্বীকার করে বলছেন, দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প করতেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজে বিলম্ব হয়েছে। কাজ দ্রুতই শেষ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × five =