ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে কেড়ে নিলো জীবনের সব স্বপ্ন

0
430

মেঝেতে পড়ে আছে তৈজসপত্র। সাদাসিধে চৌকিতে অগোছাল বিছানা, চৌকির নিচেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য। বিছানাতেই পড়ে আছে ব্যবহারের আয়নাটা। দেয়ালে ঝুলছে লাল-কালো রঙের হাতব্যাগ।

রাজধানীর উত্তরখানের বেপারিপাড়া এলাকার ১০ নম্বর বাসার ছোট্ট ওই কামরায় আসবাবপত্র কম থাকলেও অভাব ছিল না ভালোবাসার। গত শুক্রবার রাতেও সেখানে প্রাণ ছিল, ভালোবাসা ছিল নতুন সংসারে। আজ সুনসান নীরবতা, আগুনের ভস্ম ছড়ানো-ছিটানো চারদিকে। সেখানে নেই হাজারো স্বপ্ন নিয়ে সদ্য শুরু করা সংসারটির দুজন সারথি। বলছিলাম গত শুক্রবার ভোররাতে গ্যাস বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত আজিজুল-উর্মি দম্পতির কথা। শুধু ওই দম্পতি নয়, অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে গতকাল রবিবার সুফিয়া নামে আরেক নারী মারা গেছেন। জানা গেছে, আজিজুলের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার গৌরীপুর গ্রামে। উর্মির সঙ্গে তাঁর পরিচয় ফোনে। পরিচয় থেকে প্রণয়ে গড়ানো সম্পর্ক কিছুদিনের মধ্যেই পরিণয়ে রূপ নেয়। ছয় মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয়। পারিবারিক টানাপড়েনের মুখে তাঁরা চলে আসেন ঢাকায়। উত্তরখানে ভাড়া বাসায় ওঠেন তাঁরা। সংসারে সচ্ছলতা আনতে আজিজুল মুরগির খামারে খাবার সরবরাহের কাজ নেন। উর্মি নেন তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি। প্রতিবেশীরা জানায়, খুব মিশুক ও মিষ্টভাষী ছিলেন উর্মি। সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন এ দম্পতি। কিন্তু আগুন শেষ করে দিল তাঁদের স্বপ্ন। গত শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে উত্তরখানের বেপারিপাড়া এলাকায় ১১০/এ নম্বর তিনতলা একটি ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে ঘটে সেই দুর্ঘটনা। অগ্নিকাণ্ডে যারা বেঁচে গেছে, তাদের দাবি, চুলার গ্যাসলাইনের লিকেজের কারণে আগুন লেগেছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরাও বলছেন, গ্যাসলাইনে লিকেজ থাকায় আগুন লেগেছে। বাড়ির মালিক ও পুলিশের দাবি, গ্যাসের চুলা বন্ধ না করে ঘুমিয়ে যাওয়ার কারণেই ঘটেছে দুর্ঘটনা। একই সুর তিতাসেরও। অসাবধানতাবশত চুলা বন্ধ না করায় গ্যাস ছড়িয়ে ভোররাতে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় সংস্থাটি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সংস্থাটি দাবি করে, গ্যাসলাইনে কোনো ত্রুটি ছিল না। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনার শিকার ফ্ল্যাটটিতে ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা অপ্রতুল ছিল। ফ্ল্যাটের রান্নাঘর এবং তিনটি কক্ষ ঝলসানো অবস্থায় ছিল। কিন্তু রান্নাঘরে গ্যাসের চুলাটি হাউস লাইনের সঙ্গে হোস পাইপের সাহায্যে সংযুক্ত অবস্থায় সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে আজিজুলের স্ত্রী উর্মির শরীরের ৯৮ শতাংশ, আজিজুলের ৯৯ শতাংশ এবং সুফিয়া বেগমের ৯৯ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া সুফিয়া বেগমের মেয়ে পূর্ণিমা ৮০ শতাংশ, পূর্ণিমার ছেলে সাগর ৬৬ শতাংশ এবং ডাবলু মিয়া ৬৫ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে ঢামেক বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। আজিজুলের বোন আঞ্জু বেগম এবং ভাগনে সৌরভ আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘দগ্ধ তিনজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তবে আঞ্জু আরা বেগম ও সৌরভ আশঙ্কামুক্ত।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 2 =