শোনা যায়না ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক! নোয়াখালীতে বিলুপ্তির পথে ডাহুক পাখি

0
3609

ইয়াকুব নবী ইমন: পাখি জগতের প্রাকৃতির অপরূপ সৃষ্টির মধ্যে একটি ডাহুক পাখি। কালের আবর্তে আজ এই পাখিটি বিলপ্তির পথে। নোয়াখালীর বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে এক সময় রাত-বিরাতে ডাহুক পাখির ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক শুনা যেত। ভোর রাতে অন্যান্য পাখির ডাকের সাথে ডাহুক পাখির ডাক শুনে অনেকের ঘুম ভাঙতো। এখন সবই ম্মৃতি। আর শোনা যায়না ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক!

ডাহুক এখন আর আগের মতো দেখা যায় না। শুনাও যায়না তার ডাক। ডাহুক জলের পাখি। এই পাখি খুবই ভীরু প্রকৃতির। যে কোন পুকুর, ডোবা-নালার আশপাশের ঝোঁপঝাড়ে লুকিয়ে থাকা এই পাখিটি মাঝারি আকৃতির। লেজ ছোট। পা লম্বা। পায়ের আঙুলগুলোও বেশ লম্বা। পিঠের রং ধূসর থেকে খয়েরি-কালো, মাথা ও বুক সাদা। লেজের নিচের অংশে লালচে আভা। ঠোঁট হলুদ রঙের, ঠোঁটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট্ট দাগ আছে। এই পাখির বাচ্চাদের সবগুলোর রং কালো।  উদ্ভিদের ডগা এদের প্রিয় খাবার, এছাড়া জলজ পোকা-মাকড়, শ্যাওলাও খায়। ডাহুক বাসা তৈরি করে মাটিতে, বা ঝোঁপের তলায়। জলজ উদ্ভিদের বীজ, কচুরিপানা ও কলমি ঝোপে পানির ওপর এরা খড়কুটো এবং শুকনো শ্যাওলা ও জলজ উদ্ভিদ দিয়ে গোলাকার পরিপাটি বাসা বানায়। পানি এদের প্রধান আশ্রয়। পুকুর, খাল, জলাশয়, বিল, নদ-নদীর গাপন লুকানো জায়গা এদের খুব প্রিয়। পায়ের নখগুলো লম্বা লম্বা, ফলে পদ্ম ও শাপলা পাতায় দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে এবং কচুরিপানার ওপর ছোটাছুটি করতে পারে। রাতে ডাহুকের ‘কোয়াক’ ‘কোয়াক’ ডাক শুনে সহজেই এই পাখিটি চেনা যায়। বর্ষাকালে বেশি শোনা যেতো। আগে নোয়াখালীর বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপঝাড়, জলাশয় এবং কচুরিপানা সমৃদ্ধ পুকুরে এদের অবাধে বিচরণ ছিলো। কিন্তু এখন নদ-নদী ও উপকূল ছাড়া এদের দেখা যায়না। সর্বত্র নগরায়ন, পাখিদের চোরা শিকারিদের উৎপাত আর বাসস্থানের অভাবে পাখিটি হারিয়ে যাচ্ছে জেলা থেকে। বলতে গেলে ডাহুক এখন একটি বিপন্ন পাখি। এছাড়া পোষা ডাহুক দিয়ে ফাঁদ পেতে এক শ্রেণীর শিকারি ডাহুক ধরে বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। তবে এই শিকারিদের আইনের আওতায় আনা বা পাখিটি রক্ষায় এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিষ্ঠানকে উদ্যেগ নিতে দেখা যায়নি।  নোয়াখালীর তরুণ লেখন ও আঞ্চলিক গবেষক এ এইচ এম ইউনুছ অক্ষোপ করে বলেন, আগে আমাদের গ্রামের বাড়িতে আমার ঘরের জানালার ফাঁক দিয়েই পুকুরে ও মাঠে ডাহুক পাখি দেখতাম, রাতে তাদের ডাক শুনে মনে অনেক প্রশান্তি পেতাম। এখন সবই ম্মৃতি। পাখিটি এখন আর দেখা যায়না। এর জন্য আমরাই দায়ী। আমরা পাখিদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারছিনা। আমরা সুযোগ ফেলে তাদের শিকার করে খাচ্ছি। প্রাকৃতির এই সৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের স্বার্থে। এই জন্য উদ্যেগ নিতে হবে সরকারকেই।  পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় প্রাকৃতির সৃষ্টি ডাহুক পাখিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সরকার ও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন পাখি প্রেমিদের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × five =