একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভার আকারে বড় কোনো পরিবর্তন নাও আনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে কবে নাগাদ মন্ত্রিসভা ছোট হতে পারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাকে যে ছোট করব সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।.
..বড় থাকলে অসুবিধা আছে?’ গতকাল সোমবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফর নিয়ে তথ্য জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হলেও প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজনীতিসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে খুনি, দুর্নীতিবাজ, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসন্ত্রাসীসহ স্বার্থান্বেষী মহলের ঐক্য বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি এই জোটকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘জনগণ এই জোটকে গ্রহণ করলে আমার কোনো আপত্তি নেই।’ নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শুরুতে সৌদি আরব সফরের নানা বিষয় তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পরে প্রায় এক ঘণ্টা সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন, সড়ক দুর্ঘটনা, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কটূক্তির প্রসঙ্গসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কটূক্তি প্রসঙ্গে নারীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা প্রতিবাদ করেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যা করার করবে। আপনারা মামলা করেন আমরা যা করার করব।…আমাদের মেয়ে সংগঠন সব প্রতিবাদ করবে।’ আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কারো কারো সংশয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখানে সরকারের কোনো ভূমিকা নাই। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, তারা স্বাধীনভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করতে চাচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য কী? তারা চায় না গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা হোক। এতে তাদের কিছু সুযোগ হয়, তাই তো? এ দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ষড়যন্ত্র চলবে, ষড়যন্ত্র থাকবে। কিন্তু এর মধ্যেই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে ষড়যন্ত্র তো কম হয়নি। পারছি কারণ আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করি।…অবশ্যই এ দেশে যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা একটি নির্বাচনে সফল হব। নির্বাচন কমিশন যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে তখনই নির্বাচন হবে। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার শক্তি আওয়ামী লীগের আছে।’ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন ঐক্যটা কাদের সঙ্গে করেছেন! দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িতরা, মানি লন্ডারিংয়ে যুক্ত যা বিদেশের আদালতে প্রমাণ হয়েছে, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে সেই হত্যাকারীরা সব এক হয়েছে। খুনি, যুদ্ধাপরাধী, দুর্নীতিবাজ, অগ্নি-সন্ত্রাসী—এরা যেখানে এক হয়েছে সেখানে রাজনীতিটা কোথায়? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। আমি তো দেখতে পাচ্ছি এখানে সব স্বার্থান্বেষী মহল এক হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই খুনিদের সঙ্গে, যারা আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, এটা তো দিবালোকের মতো সত্য। এটা তো কেউ লুকাতে পারবে না। সেই খুনিদের নেতৃত্বে, দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছে তার নেতৃত্বে ড. কামাল হোসেন গং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এখানে আমার তো কিছু বলার নাই। বাংলাদেশের মানুষই তাদের বিচার করবে।’ ঐক্যফ্রন্ট সংলাপের জন্য চিঠি দিলে তাতে সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো তো চিঠি পাইনি। চিঠি না পেলে মনোভাব কিভাবে জানাব!’ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে তো চার দফা ছিল এখন সাত দফা। আমি অপেক্ষা করে আছি তাদের দফাটা কতদূর যায়। তার পরে আমি আমার বক্তব্য দেব।’এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল সব মিলে এক হয়েছে : অন্য এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে, সবাই মিলে যদি রাজনৈতিকভাবে সফলতা পায় তাতে অসুবিধাটা কিসের? তবে একটু খেয়াল করা দরকার, কারা কারা এক হচ্ছে। সেটা একটু খুঁজে দেখবেন। যারা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে তারা কে কোন ধরনের, কে কোন চরিত্রের, কার কী ভূমিকা, তাদের বাচনিক ভঙ্গি, এমনকি মেয়েদের প্রতি কী ধরনের কটূক্তি করার প্রতিযোগিতা তা তো আপনারা দেখেছেন। এই যে এ গাছের ছাল ও গাছের বাকল সব মিলে যে এক হয়েছে তারা ভালো করুক—এটাই আমরা চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ—এটা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। বরং এটা ভালো হয়েছে। এখানে স্বাধীনতাবিরোধী আছে, এখানে জাতির পিতার হত্যাকারীদের মদদদাতা যারা খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল তারা, এমনকি যারা জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল, যারা বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল তারা আছে। এ রকম সবাই মিলে কিন্তু এক জোট হয়েছে। এমনকি জোটের এমনও সদস্য যারা আপনাদের এক নারী সাংবাদিককে এমন নোংরা কথা বলতে পারে তারা সব এক। তাদের জোট আমরা খারাপ কিছু দেখছি না। তারা রাজনৈতিকভাবে যদি কিছু অর্জন করতে চায় করুক।…এরই মধ্যে অনেকেই তো একসময় আওয়ামী লীগ করেছে। তারা এখন আওয়ামী লীগ থেকে দূরে চলে গিয়ে জোট করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।…রাজনীতি করার স্বাধীনতা সবার আছে। এখন তো জরুরি অবস্থাও নাই, মার্শাল লও নাই।’ মন্ত্রিসভার আকার ছোট না করার ইঙ্গিত : এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাকে যে ছোট করব সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না।…বড় থাকলে অসুবিধা আছে?’ আইনে অসুবিধা নেই বলে মনে করিয়ে দিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনেও নাই কোথাও নাই। ২০১৪ সালের আগে আমরা চেয়েছিলাম সব দল মিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আন্দোলন করছিলেন, নির্বাচনে আসতে চাচ্ছিলেন না। সে জন্য আমরা বলেছিলাম আসেন, অসুবিধা নাই, যেকোনো মিনিস্ট্রি চাইলে দিয়ে দেব। সংসদে আমাদের দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি আছে। যাদের সংসদ সদস্য আছে তাদের প্রতিনিধি নিয়ে কিন্তু মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। ইতিমধ্যে সেভাবেই কিন্তু মন্ত্রিসভা নিয়ে চলছি। আগে তো শুধু আমাদের মন্ত্রিসভা, শুধু আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ছিল। যাদের সংসদে জনপ্রতিনিধি আছে তাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। এখন সকল প্রতিনিধি নিয়েই কিন্তু মন্ত্রিসভা রয়ে গেছে। আমি জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁকে জিজ্ঞেসও করেছি।…তাঁকে বলেছি, আপনারা যেভাবে চান আমরা করতে পারব। যেহেতু মন্ত্রিসভায় সব দলের প্রতিনিধি আছে এখন জানি না এটার প্রয়োজন আছে কি না।’প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আর কাটছাঁট করলে তো আমাদের মন্ত্রীরা, সত্যি কথা বলতে কী এতগুলো প্রজেক্ট ইতিমধ্যে আমরা পাস করেছি, এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি একজনের হাতে দিই তাহলে এতগুলো কাজ একসঙ্গে, মাত্র দুই-তিন মাস আছে, এত অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কাজ আমাদের করতে হবে। এই কাজগুলো করতে গেলে পরে এখন জানি না সেখান থেকে কাউকে সরাতে গেলে সে কাজ ব্যাহত হবে কি না। সে সমস্যা রয়ে গেছে। কারণ আমি দ্রুত কাজগুলো শেষ করতে চাই। আপনারা দেখছেন যে আমরা কিভাবে পরিশ্রম করছি। এক দিনে ১৭টা-১৮টা প্রজেক্ট পাস করে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। যতটুকু সময় পাচ্ছি দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। এখন দেশের উন্নয়নে কোনো বাধা হবে কি না সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। সেই চিন্তাটা করছি। আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলছি। অন্য যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে সেখানেও কথা বলেছি। যেমন, অস্ট্রেলিয়ায় আছে, নিউজিল্যান্ডে আছে, ব্রিটেনে আছে বা ভারতে আছে। কেউ কিন্তু কোনো পরিবর্তন করে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন দেখা হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করেছি। ওরা বলেছে না, এ রকম তো কোনো পরিবর্তন হয় না। এখন দেখা যাক কী হয়! যদি ডিমান্ড করে অপজিশন তখন করব। না হলে কিছু করার নেই।’মন্ত্রিসভায় নাগরিকসমাজের প্রতিনিধি যুক্ত করার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুশীলরা সুশীলই থাকুক। আবার মন্ত্রী হলে তো সুশীল থাকবে না। তখন তাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। ক্ষতি হয়ে যাবে না? বড় করার ইচ্ছে নেই। যদি…ছোট করা যায়।’সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পথচারীদের সচেতন হতে হবে : সড়কে প্রাণহানি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি বলতে পারবেন, যাদের অ্যাকসিডেন্টটা হলো তারা রাস্তার কোথায় ছিল? পথচারীদের সচেতন হতে হবে, কিন্তু সেটা কি হয়েছে? কেন হয়নি? আপনাদের পত্রিকায় ছবি দেখছি, গাড়ি চলছে, ওই গাড়ির ফাঁক দিয়ে, ভালো শিক্ষিত মানুষ বের হচ্ছে। তখন যদি কেউ অ্যাকসিডেন্ট হয়ে মারা যায় আপনি কাকে দোষটা দেবেন? পাশে ফুটপাত, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস রয়ে গেছে। বাচ্চা নিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হতে যাচ্ছে। তখন যদি অ্যাকসিডেন্ট হয় কাকে দোষ দেবেন? সচেতনতাটা কার? এখন আমার সড়ক পরিবহনে কে আছেন, মালিক সমিতিতে কে আছেন তাদের পিষে মারলেও তো আমাদের স্বভাব পরিবর্তন হচ্ছে না। যারা পথচারী তারা যদি নিজেরা সচেতন না হয় তাহলে কিভাবে ঠেকাবেন সেটা আমাকে বলেন। আমি বলি যে কয়েকটা অ্যাকসিডেন্ট হয় এই অ্যাকসিডেন্টের কারণটা আগে খুঁজে বের করেন। কোন কারণে কার দোষে হয়।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সড়ক পরিবহন আইন করে দিয়েছি, সব কিছু করে দিয়েছি। এখন যাদের জন্য করা তারা যদি না মানেন তাহলে আমরা কী করতে পারি! আমি আমাদের পথচারীদের বিনীত অনুরোধ করব, সড়ক আইনটা যেন মেনে চলেন। গাড়ির ফাঁক দিয়ে পার হবেন না। যত্রতত্র যেখান সেখান দিয়ে রাস্তা পার হবেন না।’ মইনুলের বিরুদ্ধে আরো মামলা হতে পারে : সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে আইনজীবী মইনুল হোসেনের কটূক্তির প্রসঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ও জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন একটি মামলা হয় সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর ছিল। কিন্তু ওই ভদ্রলোক সকালবেলায়ই উচ্চ আদালতে আশ্রয় নিয়ে বসে থাকেন। তো স্বাভাবিকভাবে যেখানে বিচার বিভাগ সেখানে তো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গিয়ে হামলা করতে পারে না, সেখানে তিনি জামিন পেয়েছেন। কোর্ট তাঁকে পাঁচ মাসের জামিন দিয়েছেন। সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, যেভাবে কটূক্তি হয়েছে সারা বিশ্ব দেখেছে সেখানে কোর্ট কী করে…যাই হোক আদালত তাকে জামিন দিয়েছে; কিন্তু আপনারা নারী সাংবাদিকরা কী করছেন? এর প্রতিবাদও আপনারা করতে পারেন। আপনারা প্রতিবাদ করেন।’শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘যে লোক একজন নারী সাংবাদিককে কটূক্তি করল অকথ্য ভাষায়, তার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। সে কে আপনারা জানেন? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ে সে তো দালালি করে বেড়াত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর। সিরাজউদ্দিন সাহেবকে যে তুলে নিয়ে গিয়েছিল তার জন্য তো সে কম দায়ী না—এটা অন্তত আমি বলতে পারি। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর খুনি মোশতাক একটা দল করেছিল। মইনুল হোসেন সেই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। জাতির পিতার হত্যাকারী খুনি হুদা, পাশা এদের নিয়ে একটি দল গঠন করেছিল। তার কাছ থেকে ভালো, ভদ্র ব্যবহার কিভাবে পাবে? শুধু তা-ই নয়, ইত্তেফাকে সে একটা মার্ডারও করে। নিজে মার্ডার করে নিজের ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিল, এমনকি কাকরাইলের বাড়ি, সেটা নিয়েও ঝামেলা আছে। সেখানেও স্টেট ভার্সাস একটা মামলার একটি রায় সাংবাদিকরা খুঁজে দেখতে পারেন।’শিখেছিলেন ইংরেজের খাওয়াটা, ইংরেজের ভদ্রতাটা শিখে আসতে পারেন নাই : মইনুল হোসেনের প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘ওনার গুণের কোনো শেষ নাই। ওনার গুণ আরো এত বেশি! উনি গেছিলেন ব্যারিস্টার পড়তে। সে যুগে ব্যারিস্টারি পড়তে যাওয়া কম কথা না। তোফাজ্জল হোসেন মানিক চাচা তাকে পাঠালেন। সে সময়ে তাদের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক ভালো সম্পর্ক ছিল। যখন যা লাগত একটা কিন্তু সহযোগিতা হতো। ব্যারিস্টারি পড়ে ফেরত আসার পর তিনি সাহেব হয়ে গেলেন। মানিক কাকা কিন্তু সব সময় পান্তা ভাত খেতেন। পান্তা ভাত তিনি খুব পছন্দ করতেন। ওনার ছেলে এসেছে সাহেব হয়ে। তিনি বাংলাদেশের খাবার আর খেতে পারেন না। সাহেবি খাবার খেতে হবে। চাচি এসে মায়ের কাছে দুঃখ করে বললেন, ‘এখন কী করি।’ তার ছেলে ইংরেজি খাবার খাবে। এখন ইংরেজি খাবার রান্নার জন্য সেই যুগে এক শ টাকা দিয়ে বাবুর্চি আনা হলো। তিনি হলেন, কাক-ময়ূর পুচ্ছ লাগায়ে যে চলে, মানে ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করে, উনি বিদেশে গিয়ে ইংরেজ হয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন। শিখেছিলেন ইংরেজের খাওয়াটা ঠিকই; কিন্তু ইংরেজের ভদ্রতাটা শিখে আসতে পারেন নাই, অ্যাটিকেটটা শিখে আসেন নাই, কথা বলাটা শিখে আসেন নাই। এটা হলো বাস্তবতা। এই হলো সেই লোক।’ মইনুলের জামিন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জামিন পেয়েছেন ঠিক আছে; কিন্তু মামলা তো আরো করতে আপত্তি নাই।’ মইনুল হোসেনের পাল্টা মামলা করার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাকে ডাকলেও এখন আসবে কি না সন্দেহ আছে। সে যে এখন কোন ইন্দুরের (ইঁদুর) গর্তে চলে গেছে, সেই খবর নেন। তার চরিত্র তো বললামই।’