স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রামে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী রিয়াজউদ্দিন বাজারের মনজু সওদাগর ওরফে কানা মনজুর প্রধান সহযোগি গাভী ইলিয়াছ বস মনজুর ইয়াবা রাজত্ব পুরোটাই দখলে নিয়েছে। মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, ধর্ষন, মানুষ হত্যা, সাগরে ডাকাতি, তেলের চোরা কারবারি সহ এমন কোন অবৈধ ব্যবসা নাই যা গাভী ইলিয়াছ করে না। তার জোড়জুলুম ও অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। পুলিশে কিছু অসৎ কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সব সময়ই পাড় পেয়ে যায়। মাদক, হত্যা, চাদাবাজি সহ গাভী ইলিয়াছের নামে অন্তত ১ ডজন মামলা রয়েছে।
তার ভাই আলাউদ্দিনের নামে ৬ টি, তার সহযোগি হানিফের নামে ৩টি, জাহাঙ্গীরের নামে ৪টি এবং রোস্তমের নামে একটি মামলা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইলিয়াছ এক সময় বার্মা থেকে মনজুর ইয়াবার চালান নিজের ট্রলারে করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতো এবং বিজয় নগরের টোকাই ফারুকের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতো। ওস্তাদ মনজু র্যাবে হাতে নিহত হওয়ার পর ইলিয়াছ নিজেই ইয়াবা সহ অপরাধ জগতের গডফাদার বনে যান। ইলিয়াছ ১৯৯১ সালে মোল্লা ডেইরি ফার্মের মালিক হাসেম মোল্লার দায়ের করা চাদাবাজি মামলায় ৪মাস জেল হাজতে থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে। ১৯৯১ সালে অপর এক ব্যবসায়ী দক্ষিন পাড়ার এখলাছ মিয়ার ছেলে জাফরের দোকানে ডাকাতি করার সময় জাফরকে ক্রিচ দিয়ে কুপিয়ে জখম করলে জাফরের দায়ের করা এট্যাক টু মার্ডার মামলায় দীর্ঘ সাতবছর জেল খাটে। পরে সে ৫/৯/১৯৯৮ সালে বন্দন টিলার মো: জসিমকে পতেঙ্গা দক্ষিনপাড়া কোনার দোকানের মোড়ে ধারালো ছুরি দ্বারা কুপিয়ে নৃশংস্বভাবে হত্যা করে। এই মামলা সে দুই বছর জেল খাটে। ১৯/১২/২০১৫ সালে ট্রলার দিয়ে সাগরে ডাকাতি করার সময় কোষ্টগার্ড কাছে হাতেনাতে ধরা পরে। এই মামলায়ও সে কারাভোগ করে। সুত্র জানায়, বিগত ২/৩ বছর পুর্বে তার একটা বড় ট্রলার দিয়ে সাগরে ডাকাতি করার জন্য অস্ত্রসস্ত্র দিয়ে ২৬ জন ডাকাতকে সাগরে পাঠালে ঐ সময় ট্রলি জেলেদের সাথে সংঘর্ষের সময় ডাকাতদের ট্রলারটি ডুবে গেলে ২৬ জনের মধ্যে ২৫ জনই মারা যায়। গাভী ইলিয়াছ ও তার ভাই আলাউদ্দিনের বিদেশী ব্রান্ডের মদ নকল করে তৈরি করার কারখানা রয়েছে। ১৫/৭/২০১৬ সালে তার তৈরি করা নকল মদ খেয়ে দক্ষিন পতেঙ্গা মধ্যমপাড়ার কবীর ছেরাংয়ের ছেলে মো: সোলায়মান (৩০) মর্মান্তিক ভাবে মারা যায়। ২৫/১১/২০১৩ সালে একই এলাকার হোসেন আহাম্মদের ছেলে লোকমান হোসেন (২৭) ঐ নকল মদ খেয়ে মারা যায়। ২৫/৭/২০১৬ সালে দক্ষিন পতেঙ্গার দক্ষিনপাড়ার শফি চৌধুরীরর ছেলে মোজাফ্ফর হোসেন ও শেখ আহাম্মদের ছেলে দেলোয়ার হোসেনও একই ভাবে মারা যায়। গত ২/১১/২০১৮ সালে গাভী ইলিয়াছের ভাই আলাউদ্দিনের কাছে ও তার অপর ভাই রোস্তম ও তার ম্যানেজার নুরুল হুদার ঘর থেকে চট্টগ্রাম র্যাব-৭ এর একটি দল অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধার করে। ঐ মামলায় আলাউদ্দিন কারাগারে গেলেও অপর আসামী রোস্তম ও নুরুল হুদা পলাতক রয়েছে। ইলিয়াছ দক্ষিন পতেঙ্গার ৪১ নং ওয়ার্ডের নাগর আলীর নতুন বাড়ীর গাভী হোসেনের ছেলে। বিশ^স্ত সুত্রে আরো জানা গেছে, গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানা আদালতে ডজন খানিকের বেশি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে বলে চট্টগ্রাম আদালত সূত্রে জানা যায়। তবে থানা পুলিশ কর্তৃক একাধিকবার আটক হলেও টাকার জোড়ে ইলিয়াছের কাছে আইন আদালত যেন কিছুই নয়। এছাড়া চট্টগ্রামের র্শীষ সন্ত্রাস ও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে বিভিন্ন জাতীয় অনলাইন পত্র-পত্রকিায় গাভী ইলিয়াছের বিরুদ্ধে দফায় দফায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও র্যাব বাহিনীর যেন টনকেই নড়ছে না। এদিকে প্রশাসনের নজর এড়াতে গাভী ইলিয়াছের ২০ জনের মত বিশ্বস্থ র্সোস রয়েছে। যাদের পিছনে তার প্রতি মাসে ৫ লক্ষ টাকারও বেশি খরচ করে বলে সূত্রে জানা যায়। গাভী ইলিয়াছের অবৈধ মাদক এবং কালোবাজারির মাধ্যমে অর্জিত টাকার পাহাড়ের নীচে চাঁপা পরে আছে সমাজপতিগণ। সাধারণ জনগণের কেউ ইলিয়াছের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ বা নেতিবাচক মন্তব্য করলেই তার ভাগ্যে জুটে অর্বণনীয় দুখ-র্দুদশা। তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলতে কেউ সাহস পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী এলাকাবাসি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসির পক্ষে এক সমভ্রান্ত পরিবারের কর্তা বলেন, এভাবে ইলিয়াছের অবৈধ মাদক ব্যবসা, অত্যাচার জুলুমবাজি চলতে থাকলে সমাজের অবকাঠামো অচিরেই ভেঙ্গে পরবে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন এখনই ইলিয়াছের অবৈধ ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করা না হলে এর প্রভাবে অত্র এলকায় হাজারও মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হবে। এ বিষয়ে তিনি এলাকার প্রশাসনের সংশ্লীষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের মনযোগ দৃষ্টি আর্কষণ করনে। যেভাবে শূণ্য থেকে পূর্ণ ইলিয়াছ: সামান্য একজন সিএনজি চালিত অটো রিক্সার চালক হিসেবে গাভী ইলিয়াছের কর্মজীবন শুরু। ২০১১ সালে থেকে সীপোর্ট এলাকা থেকে বিদেশি মদ পাচারে মধ্য দিয়েই অবৈধ মাদক ব্যবসার সূত্রপাত ঘটলেও এখন সে চট্টগ্রামের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া ২০১৩ সনে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত নয়াবাজারের জাহেদুল ইসলাম আলোর একান্ত ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে ইয়াবার শীর্ষ ব্যবসায়ী হিসেবে কোটি কোটি টাকা অবৈধ ভাবে আয় করে ইলিয়াছ। বর্তমানে বাঁশখালী থানার গহিরা এলাকা থেকে ১৫নং ঘাট পার হয়ে ইয়াবা নিয়ে আসছে বলে সূত্র জানায়। এদিকে ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ইলিয়াছের অবৈধ আয়ের বর্তমান অর্থের পরিমাণ হবে ২০ কোটি টাকার উপরে। এছাড়া অবৈধ অর্থে নির্মিত বহুতল ভবনসহ বিজয় নগরে ২টি নতুন বাড়ি এবং পৈত্রিক ভিটায় ৪র্থ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া ২টি প্রাইভেট কার, ২টি কভারভ্যান এবং ৪০শতক জমির মালিক ও মাদক ব্যবসায়ী ইলিয়াছ, যার আনুমানিক মূল্য হবে ১০ কোটি টাকা। এছাড়া তেলবাহী একটি জাহাজের মালিক ও এই মাদক স¤্রাট ইলিয়াছ। এছাড়া নামে বেনামে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে এই র্শীষ মাদক ব্যবসায়ী গাভী ইলিয়াছ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনর্চাজ এ প্রতিনিধিকে বলেন যে, গাভী ইলিয়াছকে আমরা একাধিকবার আটক করে আদালতে পাঠাই তবে টাকার জোড়ে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকায় এসে সেই মাদক বিক্রির পেশায় জড়িয়ে পরে। তবে মাদক এবং জঙ্গির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স অবস্থানে রয়েছি, কোন অপশক্তি এ বিষয়ে আমাদের রুখতে পারবে না বলে জানায় পতেঙ্গা থানার ওসি। এছাড়া গাভী ইলিয়াছের অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং অচিরেই গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সংগঠন চট্টগ্রাম মহানগর। এদিকে গাভী ইলিয়াছের অবৈধ মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মিছিল বের করবে বলে জানায় স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থী।