এই ত্রাণ কোথা থেকে আসছে, আর কোথায়ই বা যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত

0
658

ইয়েমেনের জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।২০১৮ সালে মানবিক সহায়তার জন্য প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ ত্রাণ সহায়তার আবেদন করেছিল জাতিসংঘ।

 

আগামী বছর তারা ৪ বিলিয়ন ডলার অঙ্কের ত্রাণের আবেদন করবে। কিন্তু এই ত্রাণের কী পরিমাণ আসলে ইয়েমেনে পৌঁছাচ্ছে? এই ত্রাণ কোথা থেকে আসছে? আর কোথায়ই বা যাচ্ছে শেষ পর্যন্ত? ২০১৭ সালে ইয়েমেনের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের লক্ষ্যে আয়োজিত হওয়া প্রথম সম্মেলনে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার অঙ্কের ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়। আর ঐ অঙ্কের ত্রাণের অর্ধেকই আসে সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছ থেকে। তারপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত আর যুক্তরাজ্য। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থান, ইয়েমেনের স্থানীয় এনজিও এবং আন্তর্জাতিক নানা সংস্থার কাছে দেয়া হয় এই সহায়তা। কিন্তু ইয়েমেনের জন্য এই বিশাল পরিমাণ অর্থ ও সহায়তা বরাদ্দ রাখা হলেও যাদের এই সহায়তার প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি, তাদের পর্যন্ত কেন পৌঁছাচ্ছে না সহায়তা? বর্তমানে ইয়েমেনের অভ্যন্তরের পরিস্থিতির কারণে ত্রাণ এবং মানবিক সহায়তা সরবরাহ ও বিতরণ কাজ গভীরভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যাদের জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ প্রয়োজন তারা খুব সামান্যই সহায়তা পাচ্ছেন। একদিকে সমুদ্র আর বায়ুপথে বাণিজ্যিক পণ্যের আমদানি অবরোধ করে ইয়েমেনে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট। এই আমদানি করা পণ্যের ৯০ শতাংশই খাবার, জ্বালানি এবং গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। আর এসব পণ্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় কার্যত দেশ অচল হয়ে পরেছে। এছাড়া জোটের অভিযান চলাকালে ইয়েমেনের রাজধানী সানা’র সাথে অবস্থিত বন্দর হুদাইদা সংলগ্ন সেতুগুলো ধ্বংস করা হয়। যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণ পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকগুলোকে এখন বিকল্প পথ অবলম্বন করে বিপর্যস্ত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হচ্ছে। এর ফলে ত্রাণ সরবরাহের খরচও বেড়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব হয়ে পড়ছে মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানো। অন্যদিকে স্থানীয় বিভিন্ন দলও এই ত্রাণ সরবরাহের বাধা দিচ্ছে। ত্রাণ সামগ্রী লুট অথবা কালোবাজারে সেসব বিক্রির ঘটনাও প্রায়ই শোনা যায়। আর এই দুই পক্ষের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্বালানির ঘাটতি তৈরি করে এর দাম বাড়ার পেছনে ভূমিকা পালন করছে। ক্রমাগত যুদ্ধ এবং বিমান হামলা চলার কারণে মানবিক সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত কর্মীরাও হুমকির মুখে পড়েন। অধিকাংশ সময়ই যাতায়াতের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় ব্যহত হয় ত্রাণ সরবরাহ। এছাড়া সামরিক বাহিনীর কার্যক্রম এবং বিভিন্ন পর্যায়ে চলা সহিংসতার কারণেও সাহায্য বঞ্চিত হতে হয় বিপর্যস্ত মানুষকে। ইয়েমেন তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রায় পুরোটাই আমদানি করে থাকে। কিন্তু চলমান যুদ্ধ এবং সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের দুই বছরের অবরোধের কারণে ইয়েমেনে প্রবেশ করা খাদ্যের পরিমাণ ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। অস্ত্রের চোরাচালান বাড়তে পারে – এমন অজুহাত দেখিয়ে ইয়েমেনের সরকারকে সমর্থন দেয় ঐ জোট। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, এবছরের মে থেকে অগাস্ট মাসের মধ্যে ইয়েমেনে খাদ্য আমদানির হার কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। খাদ্য আমদানিতে জটিলতা, মূদ্রাস্ফীতি এবং অবরোধের কারণে খাদ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। এর ফলে দুর্ভোগ পীড়িত মানুষ খাদ্য কিনতে অপারগ হয়ে পড়ছে, যদিও দোকানে এবং বাজারে ঠিকই খাবার দ্রব্য রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 3 =