সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও তবু ভূমিহীন সেজে খাসজমি বন্দোবস্ত

0
522

তাঁর রয়েছে আধাপাকা বসতঘর ছাড়াও প্রায় দুই একর জমি। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান। স্ত্রী সরকারি চাকরিজীবী। এরপরও ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ২০ শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়েছেন।

 

তিনি হলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের সুরাশ্রম গ্রামের মো. লুৎফর রহমান। ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডারও তিনি। উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সুরাশ্রম মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানের ১৩০৯ নম্বর দাগে প্রায় ১.৬০ একরের বিশাল এক মজা পুকুর রয়েছে। পুকুরের ০.২০ একর জমি দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে লুৎফর রহমানকে বন্দোবস্ত (লিজ) দেওয়া হয়েছে ২০১৫ সালে। এর আগে ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল লুৎফর রহমান উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে ভূমি বন্দোবস্তের আবেদন করেন। আবেদনপত্রে তিনি স্ত্রী উম্মে সালমা খানমের ছবিও ব্যবহার করেছেন। সালমা খানম নান্দাইলে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে কর্মরত। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়েই মাদরাসায় পড়াশোনা করছে। বড় ছেলে ইয়াহিয়া ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলা উত্তরের ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। এর সত্যতা স্বীকার করেছেন তখনকার কিশোরগঞ্জ জেলা শিবিরের সভাপতি জুম্মন হাসান। তিনি বলেন, তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে একটি খানা। সেই খানার সভাপতি ছিলেন ইয়াহিয়া। জানতে চাইলে ইয়াহিয়া উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি জেনে কী করবেন? আমার বাড়িতে আসেন, কথা হবে।’ এলাকার লোকজন জানায়, পুকুরটি সুরাশ্রম গ্রামের চারটি পরিবার দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছে। এ অবস্থায় কাউকে না জানিয়ে একটি অংশ বন্দোবস্ত দেওয়ায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। ১৯৯৭ সালের ১২ মে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, নদীভাঙনের শিকার পরিবার, কৃষিজমি নেই, বাস্তুভিটাহীন পরিবার, জমি অধিগ্রহণের ফলে ভূমিহীন হয়েছেন—এমন পরিবার খাসজমি বন্দোবস্ত পাওয়ার অধিকার রাখে। গত শনিবার সুরাশ্রম গ্রামে গেলে গাংগাইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ আশরাফুজ্জামান খোকন  বলেন, ‘উনার (লুৎফর রহমান) বাড়ি আমার বাড়ির লাগোয়া। তাঁর অনেক সহায়-সম্পদ রয়েছে।’ সুরাশ্রমের বাসিন্দারা জানায়, সুরাশ্রম মৌজায় লুত্ফুর রহমানের প্রায় ২০০ শতক কৃষিজমি রয়েছে। এ জমির উৎপাদিত ফসলে তাঁর সারা বছর সংসার খরচ চলে। খাসজমি বণ্টনের নীতিমালায় ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বণ্টনে তথ্য গোপন করা বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বন্দোবস্তের কেস বাতিল ও জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। শনিবার লুৎফর রহমান বলেন, তিনি ভূমিহীন নন। যে পুকুরটি তিনি বন্দোবস্ত নিয়েছেন সেটিতে তিনি মাছ চাষ করবেন। খাসজমি বন্দোবস্তের আবেদনে নিজেকে দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার (ভূমিহীন) পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে লুৎফর বলেন, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি এটা করেছেন। এটা না করলে খাসজমি বন্দোবস্তের আবেদন করতে পারতেন না। বন্দোবস্তের আবেদনে গাংগাইল ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা রয়েছে। সচ্ছল ব্যক্তিকে ভূমিহীনের প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়ে চেয়ারম্যান সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যয়নপত্র চাইলে তো আর না করা যায় না।’ গাংগাইল ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্দোবস্তের আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়েছে আমি এখানে যোগদানের আগে। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা আক্তার বলেন, আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়েছে তিনি এখানে যোগ দেওয়ার আগে। তবে অনিয়ম হয়ে থাকলে বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − nine =