পরকীয়ার জেরে স্বামীকে খুন, এখন আক্ষেপ সুন্দরী তরুণীর

0
661

স্বামীর সঙ্গে বচসা। স্বামীকে আট টুকরো করে কাটলেন স্ত্রী। কয়েক দিন পর পুলিশের কাছে মিসিং ডায়েরিও করে এলেন। ভারতের দিল্লির অমৃত বিহার এলাকায় এই ঘটনাটি ঘটেছে।

 

১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। স্বামীকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনার জন্য বেশ কিছু ক্রাইম সিরিজ ও হিন্দি ধারাবাহিকের সাহায্যও নিয়েছিলেন সুনীতা নামের এই মহিলা, জেরায় উঠে এল এই তথ্যও। কয়েক সপ্তাহ ধরে নিখোঁজ ছিলেন ভাড়াটে। তারই ঘরে এসে মানবদেহের একটা আঙুলের টুকরো দেখে শিউরে ওঠেন বাড়িওয়ালা। ঘরের মেঝেতে কিছু ভাঙা অংশ দেখে সন্দেহ হয় তার। পুলিশে খবর দেয়া হয় তখন। পুলিশ জানিয়েছে, সুনীতা নামের ওই মহিলা খুন করেছেন তার স্বামী রাজেশকে। জেরায় সুনীতা এ কথা স্বীকারও করেছেন। পুলিশ সূ্ত্রে খবর, প্রায়ই নানা বিষয় নিয়ে বচসা হতো সুনীতা এবং রাজেশের। সুনীতার বয়স ৩৮, রাজেশের বয়স ৬৩। বয়সের ফারাকের কারণেও তাদের মধ্যে কিছু সমস্যা ছিল। সুনীতাকে সন্দেহ করতেন রাজেশ। এক যুবকের সঙ্গে সুনীতার সম্পর্ক রয়েছে এমন অভিযোগ নিয়েও নিয়মিত ঝামেলা চলত দম্পতির। ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজেশকে খুন করার পরিকল্পনা করেন সুনীতা। সেই মতোই নিজের ছেলেকে প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এর পরই পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খেতে দেন রাজেশকে। স্বামী নিস্তেজ হয়ে পড়লেই তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করে ব্যাগে ভরে রাখেন সুনীতা। ঘরের মেঝেতে কিছু অংশ পুঁতে রাখেন, বাকি অংশ বাইরে গিয়ে ফেলে আসেন। পরে পুলিশের কাছে গিয়ে স্বামীর নামে মিসিং ডায়েরিও করে আসেন সুনীতা। পুরো ঘটনাটিই তিনি ঘটিয়েছেন টিভি সিরিয়ালের ক্রাইম শো দেখে, জেরায় ওই মহিলা জানিয়েছেন এমনটাই। বর্তমানে তিহার জেলে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন সুনীতা। তাদের সন্তানকে আবাসিক হোমে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মাদ্রাজ হাইকোর্ট প্রশ্ন করে, মেগাসিরিয়ালের সঙ্গে কিছু সিনেমাও কি দেশে পরকীয়া সম্পর্ক বেড়ে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে একটা? এই প্রশ্নের সঙ্গে মাদ্রাজ হাইকোর্ট এ-ও বলে, খুন, অপহরণ ইত্যাদির সঙ্গে পরকীয়ার একটা সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। নিজের হাতে স্বামীকে খুন করার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ার পরও কোনো অনুশোচনা ছিল না স্ত্রীর চোখে-মুখে। জেরায় খুনের কথা স্বীকার করার সময়েও তার চোয়াল ছিল শক্ত। যা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন তদন্তকারীরাও। অবশেষে নিজের ভুল বুঝে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ওই তরুণী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বেলুড়ের নিস্কো হাউজিং চত্বরে অগ্নিদগ্ধ যুবক আশুতোষ মালির লাশ উদ্ধারের পরে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তার স্ত্রী কুমকুমকে। খুনে সাহায্য করার অভিযোগে ধরা পড়ে কুমকুমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুমন কুমার। পুলিশ সূত্রের খবর, প্রথম দিকে জেরায় সুমন বারবার কান্নায় ভেঙে পড়লেও কুমকুমের মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র দেখা যেত না। কিন্তু পরে পুলিশি জেরার মুখে কুমকুম স্বীকার করেছে যে, খুন করাটা তার ভুল হয়েছিল। তখন অবশ্য কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। ২৭ বছরের ওই তরুণী তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, সুমনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পারার পর থেকেই আশুতোষ তাকে প্রচণ্ড মারধর করতেন। তা সহ্য করতে না পেরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। ওই তরুণী পুলিশকে বলেছে, স্বামীকে খুন না করে বাচ্চাদের নিয়ে অন্যত্র পালিয়ে গেলেই ভালো হতো। গত ১৭ মার্চ সকালে উদ্ধার হয়েছিল আশুতোষের লাশ। পরের দিন সন্ধ্যায় প্রথমে গ্রেফতার হয়েছিল কুমকুম। পরে হাওড়া স্টেশনের বাইরে থেকে পাকড়াও করা হয় দিল্লির বাসিন্দা সুমনকে। তদন্তে জানা যায়, প্রথমে বিষ খাইয়ে, তার পরে ছুরি দিয়ে বুকে আঘাত করে আশুতোষকে খুন করেছিল কুমকুম। আর সেই দেহ লোপাট করতেই সুমন ও তার বন্ধু লালু সাহায্য করেছিল তাকে। মৃতদেহ বস্তায় ভরে বাড়ি থেকে কয়েকশো মিটার দূরে আবর্জনার স্তূপে নিয়ে ফেলেছিল ওই দুই যুবকই। এর পরে কেরোসিন ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল লাশ। পুলিশকে সুমন জানিয়েছে, দিল্লিতে তার একটি চাউমিনের দোকান রয়েছে। কুমকুমের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাই ওই তরুণীর কথা সে ফেলতে পারেনি। খুনে সাহায্য করতে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। সুমন আরো জানিয়েছেন, কুমকুম তাকে বলেছিলেন, ‘আশুতোষ মরে গেলে আমি বাচ্চাদের নিয়ে থাকব। খুনটা আমিই করব। তুমি শুধু দেহটা লোপাট করতে সাহায্য করো। তার পরে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে নিয়ো।’ মাসখানেক পরে সুমনের বিয়ের তারিখও ঠিক হয়ে গিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ সেই সাইকেলটিও উদ্ধার করেছে, যাতে চাপিয়ে আশুতোষের দেহ ওই আবর্জনার স্তূপ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন সুমন ও লালু। তবে এখনো সন্ধান মেলেনি লালুর। উদ্ধার হয়নি খুনে ব্যবহৃত ছুরি ও আশুতোষের মোবাইলটিও। কুমকুমের দাবি, সেগুলি রয়েছে লালুর কাছেই। তাই ছুরি ও মোবাইলের সঙ্গে লালুরও খোঁজ শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। বেলুড়ের ওই দগ্ধ লাশ নিয়ে তৈরি হয়েছিল জটিলতাও। পুলিশ জানায়, আর একটি পরিবার দাবি করেছিল, ওই লাশ তাদের নিখোঁজ ছেলের। ডিএনএ পরীক্ষারও দাবি ওঠে। কিন্তু আশুতোষের খুনিরা যেখানে খুনের কথা কবুল করে লাশ ফেলার জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছে, সেখানে লাশটি যে তারই, সে বিষয়ে পুলিশ মোটামুটি নিঃসংশয় ছিল। তবে পুলিশ জানায়, পোড়া লাশটি ভালোভাবে দেখার পরে ওই পরিবার অবশ্য জানিয়েছে, সেটি তাদের ছেলের নয়। মঙ্গলবার আশুতোষের বাবার হাতে লাশটি তুলে দিয়েছে পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − 13 =