অবি: চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর হাতে ইয়াবার বড় চালান ও অবৈধভাবে দেশে আসা স্বর্ণের বার আটকের বহু ঘটনা রয়েছে। এসময় অনেকেই আটক হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলার পাশাপাশি তদন্তও হয়। তবে মরণ নেশা ইয়াবা পাচার ও স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় বাহক আটক হয়। মূল হোতারা সব সময়ই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। যারা দূর থেকে বসে এসব চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ৩০ গডফাদারের নাম, যারা অবস্থান করছেন দুবাই ও সিঙ্গাপুরে। হেফাজতে থাকা মাদক কারবারিরা বলছেন, তাদের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি বলা হলেও নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। এই চক্রের সদস্যদের কারও নাম প্রশাসন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো তালিকায় আসেনি। এরা নেপথ্যে থেকে ইয়াবা ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালান পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করে থাকে।
এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পতেঙ্গার বহুল আলোচিত তানভীর চৌধুরী ওরফে গোল্ড বাবা ও গাভী ইলিয়াছ ওরফে সোনা বাবা । এই দুইজনের সিন্ডিকেটের ১০ সদস্য টেকনাফে অবস্থান করে নানাভাবে ইয়াবার অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। যাদের মধ্যে রয়েছে জালিয়াপাড়ার তাহের, আবদুল আলী, লেঙ্গা কামাল, সাইফুল, খোরশিদ। এ ছাড়া এই চক্রের সদস্য জালিয়াপাড়ার ওসমান, ইসহাক, ইয়াছিন, গোদার বিলের টিক্কা কাদের, সাতকানিয়ার ওসমানের নামও এসেছে অনুসন্ধানে।
এদিকে এই দুইজন গডফাদার পিছিয়ে নেই স্বর্ণ চোরাচালানেও।এর মধ্যে গাভী ইলিয়াছ বাংলাদেশে থেকেই পরিচালনা অবৈধ স্বর্ণের ব্যবসা।আর চোরাকারবারী তানভীর বিদেশের মাটিতে কয়েকদিন পরপর পাড়ি জমিয়ে বিদেশী চোরাকারবারীদের সাথে সংযোগ স্থাপন করেন এবং বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে অবৈধ পন্থায় স্বর্ণ আনার মাধ্যম তৈরী করেন সুকৌশলে।
নগর পুলিশের বন্দর জোনের উপ পুলিশ কমিশনার হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে ছিলেন হারুন উর রশীদ হাজারী। বর্তমানে তিনি ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে আছেন। অতীতে বন্দর জোনের চোরাচালানসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা চোরাচালানের একটি কৌশলের বিষয়ে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে শ্রমিক হিসেবে যারা কাজ করছেন, চোরাচালান চক্রটি মূলত তাদের ব্যবহার করে থাকে। তারা দেশে আসলে এসব স্বর্ণ বারগুলো তখন বহন করে নিয়ে আসে।
আরেকটি কৌশল হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী সেজে স্বর্ণ চোরাচালান। তিনি বলেন, দুবাই থেকে ফ্লাইট প্রথমে চট্টগ্রামে পৌঁছে, পরে সেখান থেকে ঢাকায়। এ সুযোগটি কাজে লাগানো হয়। দুবাই থেকে ফ্লাইটে করে কোনো যাত্রী স্বর্ণ বারগুলো নিয়ে প্রথমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর পৌঁছে। ওই সময় দুবাই থেকে আসা যাত্রীটি চট্টগ্রামে নেমে যায়। এ সময় সে যে সিটে বসেছিল, সেখানে স্বর্ণ বার ভর্তি ব্যাগগুলো রেখে নেমে যায়। তারই সিটে পরে আরেকজন চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে টিকেট নিয়ে বসে পড়ে। পরে ঢাকা এয়ারপোর্টে পৌঁছে ওই ব্যগটি নিয়ে সে নেমে পড়ে।
কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী কয়েকজনের ছত্রছায়ায় গোল্ড বাবা ও সোনা বাবা সিন্ডিকেটটি গড়ে উঠেছে। যারা বিদেশে বসা সিন্ডিকেটের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে দেশে স্বর্ণ ও ইয়াবা পাচার কাজে জড়িত। সিভিল এভিয়েশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য চক্রটির সাথে নানাভাবে এসব অবৈধ কাজে জড়িত।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের বন্দর জোনের উপ কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসাইন বলেন,মাদক ব্যবসায়ী ও চোরা কারবারীরা যেত প্রভাবশালী হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।ইতিমধ্যে পতেঙ্গা এলাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারীর নাম বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উঠে এসেছে। তদন্তের মাধ্যমে এসকল গডফাদারদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
কে এই গাভী ইলিয়াছ ওরফে সোনা বাবাঃ নগরীর পতেঙ্গা এলাকার নাগর আলীর নতুন বাড়ির দক্ষিণ পতেঙ্গার মৃত হোসেন আহম্মেদের ছেলে গাভী ইলিয়াছ।খুন রাহাজানি, চাঁদাবাজি, তেলের চোরা কারবারি সহ এমন কোন অবৈধ ব্যবসা নাই যা গাভী ইলিয়াছ করেনা।তার বিরুদ্ধে মুখ খুলে কথা বলতে কেউ সাহস পাচ্ছেনা ভুক্তভোগী এলাকাবাসি।
সামান্য একজন সিএনজি চালক হিসেবে গাভী ইলিয়াছের কর্মজীবন শুরু করলেও সীর্পোট এলাকা থেকে বিদেশি মদ পাচারে মধ্য দয়িইে অবৈধ মাদক ব্যবসার সূত্রপাত ঘটে এই গডফাদারের।
ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ইলিয়াছের অবৈধ আয়ের র্বতমান অর্থের পরিমাণ হবে ২০ কোটি টাকা প্রায়। এছাড়া অবৈধ অর্থে নির্মিত বহুতল ভবনসহ বিজয় নগরে ২টি নতুন বাড়ি এবং পৈত্রিক ভিটায় ৪র্থ তলা বিশিষ্ট একটি নতুন বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়। এছাড়া ১টি তেলবাহী জাহাজ, ২টি প্রাইভেট কার, ২টি কভারভ্যান এবং ৪০ শতক জমির মালিক তিনি, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
তানভীর যেভাবে গোল্ড বাবাঃ নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা এলাকার রফিক চৌধুরীর ছেলে তানভীর চৌধুরী (৩৫) ওরফে গোল্ড বাবা।পরিবারের অভাব অনটনে ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে প্রথমে যোগ দেন ছিনতাই চক্রের সাথে। পরে এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে একটি সিএনজি থামিয়ে যাত্রীদের থেকে ছিনতাইয়ের সময় পরিচয় হয় সিএনজি চালক গাভী ইলিয়াছের সাথে। সেই থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি তানভীরকে। সিএনজি চালক গাভী ইলিয়াছের হাত ধরে প্রথমে স্বর্ণ চোরাচালানের বাহকের কাজ শুরু করে।২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একটি স্বর্ণের চালান ধরা খাওয়ার পর তানভীরের নাম জানতে পারে প্রশাসন। তারপর কৌশলে দেশ থেকে পালিয়ে যায় সে।দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে থেকে আন্তর্জাতিক চোরা কারবারিদের সখ্যতা গড়ে তোলার মাধ্যমে গডফাদারের খাতায় নাম লিখায় সে। তারপর থেকে দেশে আসা যাওয়ার মাধ্যমে চলতে থাকে তার ইয়াবা ব্যবসা ও স্বর্ণ চোরাচালান।আর এর মাধ্যমে গোল্ড বাবা উপাধিটা খুব সহজে অর্জন করে তানভীর।