শাহাদাত নুসরাতের শরীরে আগুন দেয়

0
548

ফেনীর সোনাগাজীতে হত্যার শিকার মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় শাহাদাত হোসেন শামীম। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল ১৩ জন।

 

সে ছাড়াও ঘটনার সময় সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে উপস্থিত ছিল তিনজন। এর বাইরেও একজন ছাত্রী নুসরাতকে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ছাদে ডেকে আনে। তবে ওই ছাত্রীর উপস্থিতি ছাদে ছিল কি না সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। আজ শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআইয়ের সদর দফতরে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেছেন, ছাদে চারজন ছিলেন। এদের মধ্যে একজনের নাম শম্পা অথবা চম্পা হতে পারে। বাকি দুইজনও বোরখা পরিহিত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই দুইজনও পুরুষ। ঘটনার ধারা বিবরণীতে ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, এর আগে গত ৪ এপ্রিল কারাগারে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন নুর উদ্দিন। কথোপকথনে সিরাজ নুর উদ্দিনকে বলেন, তোরা আমার জন্য কি করলি? মূলত এরপরেই ৫ এপ্রিল মাদরাসার পশ্চিম হোস্টেলে একটি পরিকল্পনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পাঁচজন উপস্থিত ছিলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়। সেই অনুযায়ী তিনটি বোরখা ব্যবস্থা করার দায়িত্ব দেয়া হয় এক ছাত্রীকে। কেরোসিন আনার দায়িত্ব দেয়া হয় আরেকজনকে। এ কাজে ওই মাদরাসার তিনজন ছাত্র ও দুইজন ছাত্রী দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। পরে ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগ দিয়ে কেরোসিন ও বোরখা নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে নিয়ে যায় এক ছাত্রী। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নুসরাত পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করলে আরেক ছাত্রী ক্লাস রুমে নুসরাতকে জানায় যে, তার বান্ধবী নিশাতকে কারা যেন ছাদে মারছে। এই কথা শুনে নুসরাত সাইক্লোন সেন্টারের ছাদে যায়। আগেই একছাত্রীসহ চারজন বোরখা পড়ে সাইক্লোন সেন্টারের টয়লেটে লুকিয়ে ছিলো। নুসরাত ছাদে যাওয়ার পর তারা টয়লেট থেকে বের হয়ে নুসরাতকে জাপটে ধরে। এরমধ্যে শাহাদত হোসেন শামীম ওড়না দিয়ে নুসরাতের হাত বেঁধে ফেলে। তারপর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেয়ার পর তারা পালিয়ে যায়। ডিআইজি বলেন, ‘সাইক্লোন সেন্টারের ছাদ চারিদিকে ৫ ফিট ১০ ইঞ্চি দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ফলে শরীরে আগুন লাগার পরও নুসরাতের লাফিয়ে পড়ার সুযোগ ছিলো না। নুসরাত সিঁড়ি বেয়ে চিত্কার করতে করতে নিচে নেমে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, যারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা মাদরাসাতেই আত্মগোপন করে। এরপর লোকজন ভিড় করলে তারা পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, এ ঘটনায় শাহাদহ হোসেন শামীমকে আমরা এখনো গ্রেফতার দেখায়নি। অন্যান্য আসামিদেরও ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, জোবায়ের আহমেদ, জাভেদ হোসেন ও মাদরাসার প্রভাষক আফসার উদ্দিন। শাহাদত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার দেখানো হলে মোট গ্রেফতারকৃত আসামির সংখ্যা হবে সাতজন। এজহার নামীয় একজন আসামি এখনো পলাতক রয়েছে। তার নাম আবদুল কাদের। এই ঘটনায় আমরা একজন ছাত্রীকেও আটক করেছি। ঘটনার পেছনের সূত্রের বর্ণনা দিয়ে ডিআইজি বলেন, নুর উদ্দিন মাদরাসায় অধ্যক্ষের বিশ্বস্ত সহযোগী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। সে নিজেও নুসরাতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু ব্যর্থ হয়। এই ঘটনার জের ধরে কিছুদিন আগে নুসরাতকে চুনকালি দেয়া হয়। ওই ঘটনায় নুসরাত অসুস্থ হয়ে পাহাড়তলী হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিলো। শাহাদত হোসেন শামীমও বহুবার নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে এবং বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ক্ষুব্ধ হয়ে শামীম বিষয়টি নিয়ে নুর উদ্দিনের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে। এরই মধ্যে গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ নুসরাতের শ্লীতাহানী করে। এই ঘটনায় অধ্যক্ষ গ্রেফতার হলে মাদরাসায় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দুটি পক্ষের সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে শামীম ৫ এপ্রিল একটি পরিকল্পনা বৈঠক করে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

20 + thirteen =