হাশেমের গোলাকার মুখটিই খোলা ছিল

0
462

ইস্টার সানডেতে শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা ও হোটেলসহ আটটি স্থানে আত্মঘাতী বোমা হামলার মূলহোতা মৌলভী জাহরান হাশেমের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন দেশটির মুসলমানরা।

 

তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলায় মূল ভূমিকা রেখেছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।শ্রীলঙ্কা বাট্টিকোলা অঞ্চলে ৪০ বছর বয়সী এই ধর্মীয় নেতা মোহাম্মদ জাহরান ও মৌলভী হাশেম নামে পরিচিত। গত রোববার কলম্বোর বাইরে একমাত্র তিনি হামলা চালান। ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাশেমের কয়েক হাজার ফলোয়ার রয়েছে। এতে তিনি উত্তেজনাপূর্ণ ওয়াজ-নসিহত আপ করেন। একটি ওয়াজেও দেখা গেছে, অমুসলিমদের বিরুদ্ধে ভর্ৎসনাপূর্ণ ওয়াজ করছেন হাশেম। তার পেছনে বিভিন্ন দেশের পতাকা দিয়ে একটি ফটোশপে তৈরি করা হয়েছে আগুনের পতাকা। গড়পড়তার এক মধ্যবিত্ত মুসলমান পরিবারে জন্ম নিয়েছেন হাশেম। শ্রীলঙ্কার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাট্টানকুডিতে একটি মাদ্রাসায় তিনি পড়াশুনা শুরু করলেও পরবর্তীতে ঝড়ে পড়েন। স্থানীয় মুসলমানরা হাশেমকে ‘আপদ’ হিসেবেই জানতেন। স্থানীয় মসজিদে নানা সমস্যার মূল কারণ ছিলেন এই ধর্মীয় নেতা। সাধারণ মুসল্লিদের সঙ্গে তার বিতর্ক লেগেই থাকত। একদিন এক মুসল্লিকে হত্যা করতে তলোয়ার উঁচিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে কাট্টানকুডিতে জাতীয় তাওহিদ জামাত গঠন করেন তিনি। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা এক ভিডিওতে হামলার দায় স্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এতে হাশেমকে দেখা গেছে। ফুটেজে আইএস নেতা আবুবকর আল বাগদাদির আনুগত্য প্রকাশ করে আটজনকে শপথ নিতে দেখা গেছে, যাদের মধ্যে কেবল হাশেমের গোলাকার মুখটিই খোলা ছিল। বাকিরা মুখ ঢেকে আনুগত্যের শপথ নেন। মাথায় কালো কাপড়ে ঢাকা রাইফেল বহনকারী হাশেম অন্যদের শপথবাক্য পাঠ করান। বাকিরাও তার মতো কালো পোশাক পরলেও তাদের মুখমণ্ডল ছিল সম্পূর্ণ ঢাকা। শ্রীলংকার সরকার ইতিমধ্যে হামলার জন্য পরোক্ষভাবে হাশেমকে দায়ী করেছে। স্বল্প পরিচিত ইসলামপন্থী সংগঠন জাতীয় তাওহিদ জামায়াতকে হামলার জন্য প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেছে। অবশেষে হাশেমকে শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও তার নাম ভুলভাবে হাশমি বলে উচ্চারণ করা হয়েছে। তবে হামলার আগে ভার্চুয়াল জগতে তিনি তেমন কোনো পরিচিত মুখ ছিলেন না। এমনকি শ্রীলঙ্কার ভেতরেও তার পরিচিত ছিল সামান্য। শ্রীলঙ্কার মুসলিম কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলমি আহামেদ বলেন, তিন বছর আগেই হাশেম সম্পর্কে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেছিলেন তিনি। টানা আটটি সিরিজ বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক মানুষ। গত রোববার শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা, তিনটি হোটেল ও আরও কয়েকটি জায়গায় এ সিরিজ বোমা হামলা চালানো হয়। হামলার ঘটনায় ইতিমধ্যে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে আজ বুধবার শ্রীলঙ্কার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ হামলায় এক নারীসহ ৯ হামলাকারী অংশ নেয় বলে নিশ্চিত করেছে। ৯ হামলাকারীর মধ্যে আটজন সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে সিআইডি। এক হামলাকারীর স্ত্রীসহ ওই নয়জনকে চিহ্নিত করা করা হয়। হামলাকারীদের একজন যুক্তরাজ্যে পড়তেন বলেও জানানো হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 3 =