হাটহাজারী ইউএনও’র বিরুদ্ধে পক্ষপাতিতের অভিযোগ!

0
738

চট্টগ্রাম হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী গুমান মর্দ্দন পেশকারহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদ্য সাবেক সভাপতি এসএম নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ আত্মসাৎ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কোন এক অদৃশ্য কারণে সভাপতির প্রতি হাটহাজারী ইউএনও রুহুল আমিনের নমনীয়তা ও পক্ষপাতিত্বের ও অভিযোগ তোলা হয়েছে। এ কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত ও অভিভাবকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। কেননা কয়েকমাস ধরে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে চলছে রীতিমত যুদ্ধ। এজন্য স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে পদপ্রত্যাশীরা সবাই দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত। এই অস্থিরতার মধ্যে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। তাতেও তোয়াক্কা নেই উপজেলা প্রশাসনের। এ দৃশ্য দেখে আবার সচেতনমহল বিস্মিত হচ্ছেন! এলাকাবাসীর পক্ষে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের আজীবন দাতা সদস্য মো. জামাল উদ্দীন ও সাবেক সদস্য মো. আলী খাঁন বিগত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নিয়ম বহির্ভূত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় হাটহাজারী মডেল থানা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক ও ঢাকা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি তাঁরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানালেও এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ বলে জানান তাঁরা।

প্রাপ্ত অভিযোগ পর্যালোচনা ও ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,নিয়ম ভেঙ্গে একের অধিকবার এসএম নুরুল আবছার কে পরিচালনা কমিটির সভাপতির পদ লাভ, বাৎসরিক বাজেট অনুমোদন ব্যতীত বিদ্যালয়ের আয় ব্যয়ে গড়মিল হিসাব প্রদান, অবসর গ্রহণ করার পরও প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রাখা, সুবর্ণ জয়ন্তীর নামে অর্থ উত্তোলন ও আত্মসাত, বিদ্যালয়ে জমানো তহবিল আত্মসাত, বিদ্যালয় মাঠ ভরাট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের নামে অর্থ লুপাট সহ প্রধান শিক্ষকের যোগসাজেসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের মতো গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে।


আবার এসব অনিয়ম তদন্তে দীর্ঘদিন যাবত এলাকাবাসী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্যরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও অদৃশ্য কারণে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ পাওয়া পর্যন্ত থেমে থাকে প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরে মাসের পর মাস চলে গেলেও জমা পড়েনা কোন তদন্ত প্রতিবেদন। হাটহাজারী প্রশাসন এ ব্যাপারে অবগত থাকলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় বেশ উত্তেজনা ও চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও গুমান মর্দ্দন পেশকারহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এর বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে নিয়মিত অভিভাবক সভা ও সমাবেশ না করা, যথাযথ মর্যাদায় ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী পালন না করা,বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় শোক দিবসে অনুপস্থিত থাকার মতো অভিযোগ ও রয়েছে। জানা যায়, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে সমালোচিত এসএম নুরুল আবছারকে শিক্ষাবোর্ড দায়িত্ব দিলে শিক্ষিত সমাজ ও অভিভাবকদের মাঝে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।


বিষয়টি বুঝতে পেরে চট্টগ্রাম-৫ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর (ডি.ও নং পবম/মন্ত্রী/ডি.ও/২০১৮/৭১৪ নং স্মারক) লিখিত সুপারিশে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড নির্দেশ দিলে এস.এম নুরুল আবছার’কে সরিয়ে পদাধিকারবলে বলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এডহক কমিটির সভাপতি হন। কিন্তু দীর্ঘ দিন যাবৎ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। কেন না বর্তমানে সাবেক সভাপতি দেশের বাহিরে থাকলেও পুনরায় কলাকৌশলে এ পদে বসার জন্য লবিং করছে বলে জানা যায়।


তবে ম্যানেজিং কমিটিতে কি মধু আছে সেটা স্পষ্ট না করলেও ধারণা করা হচ্ছে প্রভাব কাটিয়ে নিজের আত্মীয় স্বজনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা সহ বিদ্যালয় সংস্কার নামে ঠিকাদারি ব্যবসায় নিজের ভাইকে ব্যবহার করে নানা অনিয়মের জন্ম দিয়েছেন সাবেক সভাপিত এমন তথ্য জানান স্বয়ং স্থানীয়রা। সূত্রে জানা গেছে, গুমান মর্দ্দন পেশকার হাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়টি স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে। মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়’টি সময় ও প্রয়োজনের বির্বতে আজ এ পর্যন্ত উঠে এসেছে।


এ প্রসঙ্গে গুমান মর্দ্দন ইউনিয়ন যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম মানিক প্রতিবেদক’কে বলেন, সাবেক সভাপতি এসএম নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেলেও কি কারণে তদন্ত রির্পোট দেয়া হয়না সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা এ বিষয়ে বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করছি।’


ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে দাতা সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘পুর্ব ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে মেয়াদ শেষে তড়িগড়ি করে এডহক কমিটি গঠন করে বহু বির্তকিত সভাপতি এসএম নুরুল আবছারকে দিয়ে পরে জনগণের দাবির মূখে তা বাতিল করে। আর এসব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে কৌশলে যে কোন উপায়ে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আবারো সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেন। এ বিষয়ে স্কুল রক্ষায় আমি শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’


এদিকে গুমান মর্দ্দন স্কুলের বিষয়টি সরকারি নানা দফতর হয়ে উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এলাকার লোকজন বলছেন বেতন নেই, ভাতা নেই; অথচ এই কমিটিতে থাকার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শুরু করে অর্থ খরচও করা হচ্ছে প্রচুর। নিশ্চয় এখানে কোন মধু আছে।


জানা গেছে, গ্রামের স্কুলগুলোতে নিয়োগ বাণিজ্য হয়। রাজনৈতিক এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজস করে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। একারণে লোভনীয় হয়ে উঠেছে কমিটিতে জায়গা করে নেওয়া। এছাড়া এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেও অনেকেই এই পদ ব্যবহার করে থাকেন। এমন ঘটনা ঘটেছে এই গুমান মর্দ্দন পেশকার হাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়ে।


জানা যায়, পরপর দুবার এস.এম নুরুল আবছার এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। আবারো গুমান মর্দ্দন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকতে মরিয়া তিনি। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আজম’কে প্রভাবিত করে বিধি বহির্ভূতভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পায়তারা লিপ্ত। এতে সহযোগিতা করেছেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজা উদ্দিন।


এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুজা উদ্দিনের সাথে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে , ২০১৫ সালে বিধি অনুযায়ী গঠিত ম্যানেজিং কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কোন বৈধ নির্বাচনই হয়নি। কাগজপত্রে কমিটিকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে। তাছাড়া তারা আইন ও বিধির তোয়াক্কা না করে কমিটি নির্বাচনের যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্মন্ন করে এবং কোন প্রকার ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশ করেনি। এজন্য কমিটির যাবতীয় অনিয়ম বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট মামলাও করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন দাতা সদস্য মো. জামাল উদ্দিন।


মজার বিষয় হলো-তৎকালিন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার উননেছা শিউলী আদেশে অভিযোগ তদন্তে নিয়োজিত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আজম এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড (চট্টগ্রাম) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম এর আদেশক্রমে কমিটি সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. আলী আকবর কে নির্দেশ দিলেও কোন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি দীর্ঘ এক বছরেও । এ বিষয়ে তাঁরা মুখ খুলতেও নারাজ।


হাটহাজারী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম রাশেদুল আলম বলেন, বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে ‘স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য হতে হলে তার কোন শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে নিয়মিত অধ্যয়নরত হইতে হবে।’ কিন্তু কমিটির সভাপতি হওয়ার সময় এসএম নুরুল আবছারের কোন শিক্ষার্থী এই স্কুলে ছিল না। এ বিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি দেশের বাহিরে থাকায় তার কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, অভিযোগের সার্বিক বিষয় তদন্ত না হওয়া পযর্ন্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচন স্থগিত রাখা। নাহয় পুনরায় তড়িগড়ি করে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একই ভাবে বির্তকিত ব্যক্তিরা সভাপতি পদে বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত হবেন বলে ধারণা করছেন অনেকেই।


এছাড়াও পরিচালনা পরিষদের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ আলী খাঁন অভিযোগ করে বলেন, গুমানমর্দ্দন পেশকারহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের আর্থিক অনিয়ম পরিলক্ষিত এবং অনৈতিকভাবে একই পরিবারের ৪জনকে কৌশলে দাতা সদস্য করে এসএম নুরুল আবছার তৃতীয় বার সভাপতি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 1 =