২০১০ সালে পুরনো ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ভয়াবহতার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও পুরনো ঢাকার অধিবাসী কারও মধ্যে সচেতনতা উদয় হয়নি। এর প্রমাণ গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী চকবাজারের চুড়িহাট্টায় পুণরায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। কেড়ে নিল ৬৭ প্রাণ। এছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশাল। আবাসিক বাড়িতে দাহ্য কেমিক্যাল সংরক্ষন করার কারনে আগুনের ভয়াবহতা ছিল ধারণার বাইরে। জানামালের এমন ক্ষয়ক্ষতির পর সরকারের কোন বিভাগ দায়িত্ব নিচ্ছে না। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, রাজউক, জেলা প্রশাসক সকলেই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে।
প্রকাশ, পুরনো ঢাকার বাড়িওয়ালাদের মধ্যে লোভ অনেক বেশী। তাই বেশী ভাড়ার লোভে তারা আবাসিক বাড়িতে কেমিক্যাল গোডাউন ভাড়া দিয়েছে। প্রতিটি বাড়ির সামনে রাজউক এর নিয়ম ভঙ্গ করে বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে। রাজউক এর নকশা ভঙ্গ করে শতাধিক ভবন নির্মিত হলেও রাজউক কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাহ্য পদার্থের ব্যবসা করার জন্য ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন আবাসিক বাড়ির সামনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইসেন্স দিয়েছে টাকার বিনিময়ে এমন অভিযোগের অন্ত নেই। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিনিময়ে রাজউক এর ইমারত পরিদর্শক থেকে অথারাইজড অফিসাররাও মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে পুরনো ঢাকার অধিবাসীদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ।
পুরনো ঢাকায় অসংখ্য নিষিদ্ধ পলিথিনের কারখানা বছরের পর বছর পলিথিন উৎপাদন করছে। সেখানে গেলেই দেখা যায় পলিথিনের দানার বস্তা নিয়ে কারখানায় ঢুকানো হচ্ছে। অবৈধ এসব পলিথিনের কারখানার বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর উল্লেখযোগ্য কোন অভিযান বা কার্যক্রম চালিয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কাছেই কোন তথ্য নেই।
পুরনো ঢাকা নিয়ে আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জানমালের ক্ষতিকর বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। ইটভাটার আগ্রাসনে কৃষিজমি, জনস্বাস্ব্য ও জলাশয় সবই হুমকির মুখে। গোটা দেশে কয়েক হাজার অবৈধ ইটভাটা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি ও মানব জীবনকে বীপদসংকুল করে দিচ্ছে।
ফসলি জমির ওপরের অংশ অর্থাৎ টপসয়েল কেটে নিচ্ছে ইটভাটাগুলো যার কারনে জমিগুলো ২০ বছরের জন্য উর্বরতা হারাচ্ছে। পরিবেশ ও জনজীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে ও অপরাধিদের শাস্তি নিশ্চিত না করলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন উপায় নেই।