বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়: প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতির দুর্নীতির পাহাড়

0
1278

আবদুল বাতেন সরকার: শুরটাই যার অনিয়মের মাধ্যমে তার আবার নিয়মে কাজ কি? অনিয়মেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে  কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার বড় গোবিন্দ পুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়। ১৯৮৬ সালে বিদ্যালয়টির শুরতেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। প্রধান শিক্ষক হিসাবে মোস্তফা কামালকে ০৬/০১/১৯৮৬ তারিখে বিদ্যলয় অরগানাইজিং কমিটির সভাপতির স্বাক্ষরে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোস্তফা কামাল ০৯/০১/১৯৮৬ তারিখে প্রদান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। অতঃপর তিনি ০১/০৭/১৯৮৭ তারিখে সরকারি অনুদান ভূক্ত হন এবং ৩১/১২/১৯৯১ পর্যন্ত অত্র বিদ্যালয়ের নামমাত্র প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত ছিলেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি নানান অপকৌশলে ও ম্যানেজিং কমিটির সহযোগিতায় অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ফলে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক-কর্মচারীদের মত মোস্তফা কামালের প্রধানশিক্ষক পদের চাকরি ০৯/০১/৮৬ তারিখ হতে ৩১/১২/১৯৯১ পর্যন্ত নিয়মিত মাধ্যমে বৈধ করা হয়নি। প্রধান শিক্ষক মোস্তফ কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। তার অনিয়ম ও দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের ধারাবাহিক বর্ণনা দেওয়া হলো:

অনিয়ম ও দুর্নীতি: ০১। মোস্তফা কামাল ০৯/০১/১৯৮৬ তারিখে বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূইয়া উচ্চবিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। অপরদিকে ০৫/০৪/১৯৮৬ তারিখে স্থানীয় সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর সহকারী লেবার অফিসার পদে নিয়মিতভাবে চাকুরিতে যোগদান করেন। সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এ সহকারি লেবার অফিসার পদে দৈনিক সকাল ৮.০০টা হতে ৫.০০টা পর্যন্ত নিয়মিতভাবে চাকুরী করেন। একই সাথে মোস্তফা কামাল বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূইয়া উচ্চবিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক এবং সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর সহকারি লেবার অফিসার পদে যুগল চাকুরি করে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা গ্রহন করেন।

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কালে তিনি ০৫/০৪/৮৬ তারিখের স্বাক্ষরিত বিদ্যালয় সভাপতির বরাবরে পার্টটাইম চাকরির একটি আবেদন পত্র দেখান যাতে সভাপতির কোনো মন্তব্য ও স্বাক্ষর নাই এবং সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর ম্যানেজার এডমিন স্বাক্ষরিত সাদ কাগজে সহকারি লেবার অফিসার পদে পার্টটাইম চাকরির নিয়োগপত্র দেখান যাতে মিলের গোল সিলও নেই। নিয়ম অনুযায়ী কোন কোম্পানীর নিয়োগ পত্র কোম্পানীর প্যাডে এবং ব্যাবস্থসাপনা পরিচালক/  মহাব্যাবস্থাপকের স্বাক্ষরিত হতে হবে। এ  ক্ষেত্রে মোস্তফা কামাল টাকা আত্মসাতের অসতউদ্দেশ্যে জালিয়াতি করেছেন। একই ব্যক্তি (মোস্তফাকামাল) একই সাথে বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক এবং সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড

এর সহকারী লেবার অফিসার পদে যুগল চাকুরির বিষয়টি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের স্মারক নং-৭৭৩৩/৬ এর তদন্ত প্রতিবেদনের ১নং, ২নং, ৩নং এবং ৪নং দফার বর্ণনা মোতাবেক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মন্ডলী এলাকাবাসীর সাক্ষী ও সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর শ্রমিকদের সাক্ষী থেকে প্রমানীত। মোস্তফা কামালের প্রধান শিক্ষক পদের চাকুরি নিয়মিত না হওয়ায় এবং একই সাথে সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এ চাকুরি করার কারণে ০১/০৭/১৯৮৭ হতে ৩১/১২/১৯৯১ পর্যন্ত তার কর্তৃক গৃহীত  সরকারি অংশের বেতন-ভাতা বাবদ মোট ৫৬৭৮০/-  (ছাপ্পান্ন হাজার সাতশ আশি) টাকা এবং বিদ্যালয় প্রদত্ত প্রায় ৪০০০০/-(চল্লিশ হাজার) টাকা  বিধি বহির্ভূতভাবে গ্রহন করে আত্মসাত করেছন।

০২। শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের সহকারি শিক্ষা পরিদর্শক  সাইদুর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম ১০/১১/১৯৯১ তারিখে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে উক্ত দপ্তরের স্মারক নং-ডিআইএ/কুমিল্লা/৯৮৭এস/প্রে-৩৮৫১/৬, তারিখ-১১/১২/১৯৯১ এর নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ঘ-৩ দফায় মোস্তফা কামালের ০৬/০১/১৯৮৬ তারিখের নিয়োগপত্র এবং ০৯/০১/১৯৮৬ তারিখের যোগদানপত্র বিধিসম্মত নয় বলে ঘোষণা করেন ও তাকে অপসারন করে যথা নিয়মে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা সম্পন্ন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য সুপারিশ করেন।

উক্ত সুপারিশ মোতাবেক তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটি মোস্তফা কামালকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে অপসারন করে বিধি মোতাবেক ০১/০৩/১৯৯২ তারিখে মনিরল ইসলাম ভূঁইয়াকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে  মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া ১৫/০৩/১৯৯২ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। মোস্তফা কামাল মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়াকে চার্জ হস্তান্তর করে স্থানীয় সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এ সহকার লেবার অফিসার পদে এককভাবে নিয়মিত চাকরি করেন। তিনি সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর সহকারী লেবার অফিসার পদে ০৫/০৪/১৯৮৬ হতে ডিসেম্বর/১৯৯৬ পর্যন্ত নিয়মিত ১০ (দশ) বছর চাকরি করেন। মোস্তফা কামাল মার্চ-১৯৯২ হতে ডিসেম্বর-১৯৯৬ পর্যন্ত অত্র বিদ্যালয়ের কোনো পদেই শিক্ষকতার চাকুরিতে কর্মরত ছিলেন না।

ফলে তার শিক্ষকতার চাকুরিতে ০৪ (চার) বছর চাকুরি বিরতি আছে। যাহা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের স্মারক নং-৭৭৩৩/৬ এর তদন্ত প্রতিবেদনের ৫নং দফায় প্রমাণিত বলা হয়েছে।০৩।  মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর মে/৯২ হতে ৩০/০১/১৯৯৬ পর্যন্ত বিদ্যালয়টির সহকারি প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য ছিল এবং উক্ত সময়ে প্রায় ৪ (চার) বছর ধরে বিদ্যালয়টির শিক্ষক হাজিরা খাতায় সহকারি প্রধান শিক্ষকের কলাম টি স্বাক্ষরশূন্য ছিল। অতঃপর মোস্তফা কামাল সাদাত জুট ইন্ডাষ্ট্রীজ লিমিটেড এর সহকারী লেবার অফিসার পদের চাকরি ছেড়ে পুনরায় ৩১/০১/১৯৯৬ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। ২৬/০৮/১৯৯৬ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মৃত্যুবরণ করার পর মোস্তফা কামাল ২৭/০৮/৯৬ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। পরবর্তীতে মোস্তফা কামাল ০১/১১/১৯৯৮ তারিখে অত্র বিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। মোস্তফা কামাল প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের উচ্চতর স্কেল পাওয়ার লোভে লিপ্ত হয়।

তার এই অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি (যিনি বর্তমানেও সভাপতি)  মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়াকে ম্যানেজ করে। সভাপতি মো: খলিলুর রহমান ভূঁইইয়া হীনস্বার্থের বশবর্তী হয়ে মোস্তফা কামালকে ০৯/০১/১৯৮৬ তারিখ হতে ডিসেম্বর ১৯৯৮ পর্যন্ত একটানা ১২ (বার) বছরের প্রধান শিক্ষক ওসহকারী প্রধান শিক্ষক পদে অত্র বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার সনদপত্র দেন। সনদটিতে ইস্যুর কোন তারিখ নাই, এমনকি সভাপতির স্বাক্ষরের নিচেও কোনো তারিখ নাই। কিন্তু, সভাপতি মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া মোস্তফা কামালের শিক্ষকতার ক্ষেত্রে মার্চ/৯২ হতে জানুয়ারী/৯৬ পর্যন্ত ০৪ (চার) বছরের চাকরি বিরতির কথা জেনেও স্বীয় হীন স্বাথ চরিতার্থ করে মোস্তফা কামালকে একটানা ১২ (বার) বছরের অভিজ্ঞতার সনদ দেন যাহা সভাপতির গর্হিত অপরাধ। কিন্তু উক্ত সনদটিতে ইস্যুর তারিখ কিংবা সভাপতির স্বাক্ষরের পরে তারিখ না থাকায় সংশ্লিষ্টরা এটাকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করেছেন।

০৪। অভিযোগ আছে মোস্তফা কামাল প্রধান শিক্ষক হয়ার পর প্রধান শিক্ষকের উচ্চতর সুবিধা (স্কেল) প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ পর্যন্ত চাকরি বিরতি কে নিয়মিত চাকরি গণনার জন্য তার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক হাজিরা খাতায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরের খালি কলামের উপর নিজ হাতে তার নাম লিখে টানা ৪৭ (সাতচল্লিশ) মাসের অবৈধ স্বাক্ষর করেছে। বিদ্যালয়ের শিখক হাজিরা খাতা পর্যালোচনায় দেখা যায় মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের পর কয়েক মাস সহকারী শিক্ষক রতন কুমার আচার্য সহকারী প্রধান শিক্ষকের কলামে স্বাক্ষর করেছেন। সেই সময়ে মোস্তফা কামাল সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে ১২নং কলামে স্বাক্ষর করেছে। প্রশ্ন হলো সহকারী প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ১২নং কলামে গেলো কেন? কয়েকমাস পর থেকে মোস্তফা কামাল সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসাবে হাজিরা খাতায় ২নং কলামেই স্বাক্ষর করেছেন। কিন্ত হাজিরা খাতায় প্রধান শিক্ষক থেকে শুরুকরে সকল শিক্ষকের নাম স্বাক্ষর কলামের উপর একই হাতের লেখা, কিন্তু শুধু সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম ভিন্ন হাতের লেখা

এবং তার নিজহাতের লেখা। উক্ত বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভুঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাজিরা খাতার মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/১৯৯৬ পর্যন্ত টানা ৪৭টি পৃষ্ঠা এই স্বাক্ষ হন করছে। মোস্তফা কামাল মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ ইং পর্যন্ত শিক্ষক হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও সেই সময়ে সরকারী বেতন বিলে ও বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন বিলে তার নাম নাই। অর্থাৎ মোস্তফা কামাল আগেপরে সরকারী বেতনের অংশ এবং বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতনের অংশ গ্রহণ করলেও মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ পর্যন্ত চার বছর সরকারী বেতন-ভাতা ও বিদ্যালয় প্রদত্ত বেতন-ভাতা গ্রহণ করেনি। এমনকি ১৯৯১-৯২, ১৯৯২-৯৩, ১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরের কোম্পানী অডিট রিপোর্টে ও মোস্তফা কামালের নাম নেই।  এই সকল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রতিয়মান হয়ঃ

১/ মোস্তফা কামালের মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ পর্যন্ত অত্র বিদ্যালয়ে চাকরী না করার বিষয়টি প্রমাণিত। ২/ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কর্তৃক মোস্তফা কামালের একটানা ১২বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা সনদটি জালিয়াতির মাধ্যমে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রদান করার বিষয়টি প্রমাণিত। ৩/ মোস্তফা কামালের মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ পর্যন্ত চার বছর সহকারী প্রধান শিক্ষকের কলামে জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাক্ষর করার বিষয়টি পমাণিত। যাহা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের স্বারক নং-চট্ট/৭৭৩৩/৬ এর তদন্ত প্রতিবেদনের ৫নং, ৮নং, ১১নং দফায় প্রাপ্ত তথ্য ও মন্তব্যে উল্লেখ আছে।

৫। মোস্তফা কামালকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য ১০/১০/১৯৯৮ তারিখের সাক্ষাৎকার বোর্ডের সিদ্ধান্তের কপি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আবেদন আসার কথা। কিন্তু বিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল, সিনিয়র শিক্ষক সুনীল চন্দ্র সরকার, সহ: শিক্ষক জাহানারা নাসরিন, সহ: শিক্ষক খলিল উল্লাহ ও মোস্তফা কামালের স্ত্রীর বড় ভাই আবুল ফয়েজ মো: আবদুল্লাহকে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিতি দেখিয়ে মোস্তফা কামালকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন।

অভিযোগ আছে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিজ্ঞ ও অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী আবেদন করলেও তাদের আবেদনপত্রগুলো মোস্তফা কামাল তার নিয়োগ নিশ্চিত করার লক্ষে সভাপতি মো: খলিলুর রহমান ভুঁইয়ার যোগসাজে সু-কৌশলে গোপন রাখে। নাম মাত্র অত্র বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের উপস্থিতি দেখিয়ে সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া ও কমিটির অন্যান্য সদস্যরা স্বার্থের বর্শবর্তী হয়ে মোস্তফা কামালকে প্রথম ঘোষণা করে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন। অভিযোগে সুষ্ঠু বিচারের প্রত্যাশা করা হয়েছে।

৬। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের স্মারক নং-চট্ট-৭৭৩৩/৬ তারিখ-১৮/১০/২০০৪ এর ৭নং দফায় এবং স্মারকনং-৪৪/৬ তাং- ০৫/০১/২০০৫ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের ১৩নং ক্রমিকের মন্তব্য ও সুপারিশের “ছ” দফায় বর্ণনা মোতাবেক প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের চাকরীর অভিজ্ঞতা ৩১/০১/৯৬ তারিখ হতে গণনার যোগ্য। ফলে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের চাকরীতে যোগদানের তারিখ ০৯/০১/৮৬ এর পরিবর্তে ৩১/০১/৯৬ লিখতে হবে। কিন্তু মোস্তফা কামাল সর্বশেষ পর্যন্ত সরকারী নির্দেশনাকে

বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে দুর্নীতিপরায়ন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমানের ছত্রছায়ায় থেকে বেতনবিলের বহিতে অত্রবিদ্যালয়ে তার যোগদানের তারিখ ০৯/০১/৮৬ লিখে গেছে। প্রকাশ যে বিধি মোতাবেক মার্চ/৯২ হতে ৩০/০১/৯৬ ই পর্যন্ত ০৪ (চার বছর শিক্ষকতায় কর্মবিরতির কারণে তার পুর্ব অভিজ্ঞতা ০৯/০১/৮৬ হতে ফেব্রুয়ারী/৯২ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা হিসাবে পরিগণিত হবেনা। ৭।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং-চট্ট-৭৭৩৩/৬ তারিখ ১৮//১০/২০০৪ ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন-স্মারকনং- ৪৬/৬তাং- ০৫/০১/২০০৫ এর সুপারিশ ও বিধি মোতাবেক মোস্তফা কামালের যোগদানের তারিখ ৩১/০১/১৯৯৬ ধরে তার শিক্ষকতার চাকরীর বৈধ অভিজ্ঞতা ১৫ (পনের) বছর পূর্ণ হলে তিনি প্রধান শিক্ষকের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রাপ্য হবেন। সেই মতে ৩১/০১/১৯৯৬ তারিখ হতে ৩০/০১/২০১১ তারিখে ১৫ (পনের) বসর পূতির পর ৩১/০১/২০১১ হতে মোস্তফা কামাল ৪৩০০/- টাকা হতে উন্নীত স্কেল ৬১৫০/-টাকা তৎকালীন ৯০০০(নয়হাজার) টাকার স্কেলে সরকারি বেতন ভাতা প্রাপ্য।

অথচ তিনি (মোস্তফা কামাল) সরকারি টাকা আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে ০৯/০৭/১৯৯৯ হতে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে ৬১৫০/-(ছয়হাজার একশ পঞ্চাশ) টাকার উচ্চতর স্কেলে বেতন ভাতার সরকারি অংশ গ্রহন করেছেন। ফলে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের প্রতিবেদনের সুপারিশ তাবেক মোস্তফা কামাল ০৯/০৭/১৯৯৯ হতে ৩০/০৯/২০০৪ পর্যন্ত সময়ে অবৈধভাবে বেতন-ভাতার সরকারি অংশবাবদ মোট ১, ০৬,৭৪৭.৫০ (একলাখ ছয় হাজার চারশ সাতচল্লিশ টাকা পঞ্চাশ পয়শা) টাকা অতিরিক্ত গ্রহন করেছেন। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উক্ত অতিরিক্ত গৃহীত ১, ০৬,৭৪৭.৫০ (এক লাখ ছয় হাজার চারশ সাতচল্লিশ টাকা পঞ্চাশ পয়শা) টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হলেও তিনি এই নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উক্ত টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে।

৮। সেই সময়ে অত্রবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি (যিনি অধ্যাবধি সভাপতি) মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া বাংলাদেশ পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে কর্মরত ছিলেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লার ০৪/০৪/২০০০ তারিখের ৮/২০০০ (৩৩০০) স্মারকের পত্র ও ১৯৯৭ ইং সনের বোর্ড রেগুলেশনের ৪ (১) এ (।।) ধারার বিধান অনুযায়ী বর্তমানে কর্মরত কোন সরকারী কর্মকর্তাকে সভাপতি পদে মনোনয়ন প্রদানের কোন বিধান নেই। সরকারী চাকুরী বিধি ২৫ এর ধারা ৬ অনুযায় কর্মরত কোনসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বনুমতি ব্যতীত বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য পদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে পারবে না। কিন্তু অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল উল্লেখিত বিধি জানার পরও তার অপকর্মের সহযোগী হিসাবে একজন সরকারী কর্মকর্তা মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়াকে তাহার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নিয়ে ১৯৯২ ইং সন হতে অদ্য পর্যন্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বানিয়ে রেখেছেন।

এ বিষয়ে ২০০২ ইং সনের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের সময় আপত্তি উপস্থাপন করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার যোগসাজসে জালিয়াতি করে স্মারক নাম্বার বিহীন একটি ভূয়া অনুমতিপত্র কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে দাখিল করে। উক্ত অনুমতিপত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের কোন স্মারক নাম্বার নেই। খলিলুর রহমান ভূঁইয়া অত্র বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সরকারী টাকা আত্মসাৎ, মিথ্যা ভাউচারের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের টাকা আত্মসাৎ ও মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ খেয়ে শিক্ষক নিয়োগসহ অনেক অপকর্ম সাধিত হয়েছে।

৯। অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া, সহসভাপতি নুরুল ইসলামসহ ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যবৃন্দ প্রধানশিক্ষক মোস্তফা কামাল কর্তৃক সরকারী টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জেনেও স্বার্থের বশবর্তী হয়ে প্রধান শিক্ষককে সরকার টাকা আত্মসাৎ করার পথ সুগম করে দিয়েছে। কারণ, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে আত্মসাৎকৃত সরকারী বেতনের টাকা সরকারী কোষাগারে ফেরত দেবার নির্দেশ না দিয়ে সভাপতি লিলুর রহমান ভূঁইয়া ও কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের সুরের সাথে সুর মিলিয়ে সরকারী বেতন বিলের কপিতে স্বাক্ষর দিয়ে সরকারী টাকা আত্মসাতের পথ সম্পূণরূপে সুগম করে দিয়েছে।

১০। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও ম্যানেজিং কমিটি কর্তৃক জালিয়াতি ও দুর্নীতির বিষয় সম্পর্কে অভিযোগকারীগণ জেলা শিক্ষা অফিসার কুমিল্লা, জেলা প্রশাসক কুমিল্লা জেলা ও সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবরে অভিযোগ করে এবং অভিযোগসমূহ যথা সময়ে তদন্ত করা হয়। তদন্তের সময় অভিযোগের যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও স্বার্থের বশবর্তী হয়ে মোস্তফা কামালের পক্ষে রিপোর্ট দেন। সর্বশেষ অভিযোগকারীগণ শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের নিকট অত্র বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মহোদয় পরিচালক পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরকে বিষয়টি তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক পরিচালক সাহেব শিক্ষা পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও আডিটর ফারুক গাজী বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সরকারী টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়টি ও অন্যান্য অপকর্মসমূহ প্রমাণিত হয়। উক্ততদন্ত প্রতিবেদনের কপি প্রধান শিক্ষক বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে দেয়া হয় এবং উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেওয়া হয়। অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া তদন্ত প্রতিবেদনের কপি পেয়ে প্রধান শিক্ষকের সকল অপকর্ম ও সরকারি বেতনের অংশের প্রায় ১,৮৫,০০০টাকা আত্মসাৎ সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর তিনি প্রধান শিক্ষককে উল্লেখিত অঙ্কের টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ না দিয়ে স্বার্থের বশবর্তী হয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালের সাথে যোগসাজসে সরকারি টাকা আত্মসাতের গোপন চুক্তিতে লিপ্ত হয়।

১১। পরিচালক পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর হতে অত্র বিদ্যালয়ের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের তদন্ত প্রতিবেদন ও ০৫/০১/২০০৫ তারিখের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের কপি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালককে দেওয়া হয়। উক্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মা: উ: শি: অধিদপ্তর বড় গোবিন্দ পুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামালকে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ১৮/১০/২০০৪ তারিখের তদন্ত প্রতিবেদনের দফাওয়ারি জবাব জেলা শিক্ষা অফিসার কুমিল্লা এর মাধ্যমে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ধূর্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল জেলা শিক্ষা অফিসার কুমিল্লাকে ম্যানেজ করে জেলা শিক্ষা অফিসের স্মারক নং-১৭১৩, তারিখ- ০২/১২/২০০৪ মোতাবেক দফাওয়ারি জবাব দাখিল করেন। এই জবাব অসম্পূর্ণ ও সন্তোষজনক নয় বিধায় মা: উ: শি: অধিদপ্তরের স্মারক নং-৯৩/২৯২৪/২০০৪-৩০৪৬, তাং-১০/০৫/২০০৫ মোতাবেক তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত বেতনের সরকারি অংশের অতিরিক্ত গৃহীত ৫৬৭৮০/- (ছাপ্পান্ন হাজার সাতশ আশি টাকা) ও ১০৬৭৪৭.৫০/- (এক লাখ ছয় হাজা রচারশ সাতচল্লিশ টাকা পঞ্চাশ পয়শা) টাকা ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে চালানের কপি সংযুক্ত করে পূণরায় ৩০/০৫/২০০৫ তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রমানাদিসহ নিষ্পত্তিমূলক ও সন্তোষজনক জবাব দাখিলের নির্দেশদেওয়া হয়। মোস্তফা কামাল অধিদপ্তরকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অধ্যাবদি সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করে বসে আছেন।

১২। প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সভাপতি মো: খলিলুর রহমানের অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধকল্পে বড় গোবিন্দপুর গ্রামের মো: গিয়াস উদ্দিন ভূঁইয়া জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা বরাবর অভিযোগ দাখিল করে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া, আর্থিক অনিয়মের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা করা, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ঐ সময় পর্যন্ত সরকারী বেতনের অংশ অতিরিক্ত গৃহীত প্রায় ৩,০০,০০০/-(তিন লক্ষ) টাকা উদ্ধার করে সরকারী কোষাগারে জমাদান এবং বিদ্যালয়ের পুকুরের আয়ের অংশ-১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমাকরার ব্যবস্থা নিতে আবেদন করলেজেলা প্রশাসক এর পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সিনিয়র সহকারী কমিশনার  আজিজুর রহমান ২৭/১২/২০০৯ তারিখে তদন্ত করে দফাওয়ারী প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনটিতে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সভাপতি খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।

প্রতিবেদনটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কুমিল্লার চেয়ারম্যান অবগত হয়ে প্রথমে ০৪/০২/২০১০ও পরে ১৪/০৩/২০১০ তারিখে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। সর্বক্ষেত্রেই প্রধানশিক্ষক এবং সভাপতির বৃদ্ধাঙ্গুলি দর্শন। ফলে মা: উ: শি: বরদ কুমিল্লার বিদ্যালয় পরিদর্শক ১১/০৫/২০১০ তারিখের ২৫/২০১০ নং স্মারকে বিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে উক্ত বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে প্রধান শিক্ষককে একটি এডহক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়। এখানেও প্রধান শিক্ষকের বৃদ্ধাঙ্গুলি দর্শন। এদিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম,  সীমাহীন দুর্নীতি আর সেচ্ছাচারিতায় ঘৃণাওক্ষোভ প্রকাশ করে ০৬/০৫/২০১০তারিখে ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য আবুল কালাম আজাদ কমিটি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন।

১৩। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ায় সভাপতি মো: খলিলুর রহমান ভূঁঁইয়া মহামান্য হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দায়ের করেন। যার নং- ৩৮৩৯। মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত রীট পিটিশনের প্রেক্ষিতে ১৭/০৫/২০১০ তারিখে উক্ত কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। মহামান্য হাইকোর্ট ০৯/০২/২০১২ তারিখে শুনানির পর ১৭/০৫/২০১০ তারিখের স্থগিতাদেশটি ০৬/০৪/১১ তারিখ থেকে ভেকেট ঘোষণা করেন। ফলে মা: উ: শি: বোর্ড, কুমিল্লার ১১/০৫/২০১০ তারিখের ২৫/২০১০ স্মারকে ম্যানেজিং কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার আদেশ বহাল হলেও উক্তসময়ের বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া ও প্রধান শিক্ষক মো: মোস্তফা কামাল পরষ্পর যোগসাজসে অবৈধভাবে বিদ্যালয় পরিচালনার কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্য। অভিযোগ- দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও অবৈদ সঘোষিত সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া সরকারী বিধিবিধান লঙ্গন করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধর্মীয় শিক্ষক হিসাবে মো: জাহাঙ্গীর আলমকে এবং কম্পিউটার শিক্ষক হিসাবে শিল্পা রানী দাসকে নিয়োগ প্রদান করে। অবৈধ কমিটির দ্বারা নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগও অবৈধ হওয়ার কথা। ১৪। মহামান্য হাইকোর্ট ০৬/০৪/২০১১ তারিখহতে ১৭/০৫/২০১০ তারিখের দেওয়া স্থগিতাদেশ ভেকেট করার পর মা: উ: শি: বোর্ড কুমিল্লা ২৮/০৩/১৩ তারিখের ২৪০ (৪) নং স্মারকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের  (গভার্নিং বোর্ড ও ম্যানেজিংকমিটি) প্রবিধিমালায় ২০০৯ এর ৩৯ (১) ধারা মোতাবেক চার সদস্যের একটি এড হক কমিটি গঠন করে দেন। এডহক কমিটি গঠনের পূর্ব পর্যন্ত অবৈধ মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার কমিটি বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্ট হতে ২৯, ১৪, ৭৪০/-(ঊনত্রিশ লক্ষ চৌদ্দ হাজার সাতশ চল্লিশ) টাকা উত্তোলন করে।

সর্বক্ষেত্রেই ব্যাংক একাউন্ট হতেউত্তোলনকৃত টাকা ব্যায় ভাউচারের সাথে সংগতিহীন বলে অভিযোগ রয়েছে। ১৫। বোর্ড কর্তৃক কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার প্রায় ৩ বছর পর ২৮/০৩/১৩ তারিখ ডা: মো: মজিবুর রহমান (সিভিল সার্জন কুমিল্লা) কে সভাপতি করে এডহক কমিটি অনুমোদন দেয় মা: উ: শি: বো:, কুমিল্লা। ডা: মজিবুর রহমান দুইবার উক্ত বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও পরে একবার নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সভাপতি থাকা কালীন প্রায়চার বছরে বিদ্যালয়ের নিয়মিত খরচ নির্বাহের পর প্রায় ২২ লক্ষ টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং ১৯ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের সাধারন তহবিলে ব্যাংক একাউন্টে জমাহ য়েছে।

ডা: মো: মজিবুর রহমান অত্র বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি থাকা কালীন সময়ে সকল ব্যায় নির্বাহের পর প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ টাকা উদ্বৃত্ত হয়েছে। এই হিসাবে প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া যোগসাজশে বিগত ২০ বছরে বিদ্যালয়ের তহবিল হতে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগে প্রকাশ যে ১৯৯২ সাল হতে ২০১১ সাল পর্যন্ত (খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার সভাপতি থাকা কালীন সময়) বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ও প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অন্যান্য আয় প্রায় সমান ছিলো। সেইমতে ১৯৯২-২০১১ পর্যন্ত ২০ বছরে ২ কোটি টাকা বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলে জমা থাকার কথা যাহা প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া পরষ্পর যোগসাজসে আত্মসাৎ করেছে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য নির্বাচনে অনিয়ম:

১৯৮৬ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বড় গোবিন্দপুর আলীমিয়া ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগে œবিদ্যালয়টির জন্য এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের জমি ও বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নগদ অর্থ দান করেন। এরমধ্যে- ১। জিন্নতের নেছা তার নিজ নামীয় ৩১ শতাংশ জমি ২। আমিন উদ্দিন চেয়ারম্যান ১৬ শতাংশ ও ৩। মনিন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ৩শতাংশ জমি দান করেন। ৪। আবুল হোসেন ভূঁইয়া, আবুল কাশেম ভূঁইয়া, ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, বক্স আলী, রুহুল আমীন মিলে ৯৭ শতাংশ পুকুরের জমি দান করেন। ৫। দেশ বরেণ্য ডাক্তার সৈয়দা ফিরোজা বেগম নগদ ৫০ হাজার টাকা দান করেন। ৬। খলিলুর রহমান ভূঁইয়া নগদ ১০ হাজার টাকা, ১০ বান্ডেল টিন ও কিছু কাঠ দান করেন। টিন ও কিছু কাঠের মূল্য ধরলে সবমিলিয়ে ২০-২২ হাজার টাকা হবে (তৎকালীন মূল্য) বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন।

পরবর্তীতে আলী আহম্মদ ভূঁইয়া ২০ হাজার টাকা, হাজী শফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষকের বাসভবন নির্মাণের জন্য ধাপেধাপে মোট ৭০ হাজার টাকা অনুদান দেন। ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ের সামনের জমিক্রয় ও মাটি ভরাটের জন্য স্থানীয় সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রি লি: এর মালিক মো: মোজাম্মেল হক নগদ ২লক্ষ টাকা অনুদান দেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠনের বিধিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের দাতাগণের সকলেই দাতা সদস্য। তাদের মধ্য হতে একজন দাতা সদস্য নির্বাচিত হয়ে কমিটির কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করবেন। কিন্তু বিগতদিনে এসকল দাতাগণের মধ্যে হতে কাহাকেও কমিটির দাতাসদস্য নিয়োগ করা হয় নাই। প্রধান শিক্ষক মোস্তফা কামাল ও সভাপতি খলিলুর রহমান ভূঁইয়া স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে সদস্য নির্বাচন করে কমিটি গঠন করে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।

বিদ্যালয়ের নামকরণে অনিয়ম: বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে এলাকাবাসী গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে একটি অর্গানাইজিং কমিটি গঠন করাহয়। ঐ অর্গানাইজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি (১৫০ শতাংশ) ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য নগদ অর্থসহ যাহা প্রয়োজন হবে সমুদয় ব্যয় এককভাবে বহনকরার শর্তে তাহার পিতা আলীমিয়া ভূঁইয়ার নামে বিদ্যালয়টির নামকরণ করাহবে। কিন্তু মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার মাতা জিন্নতের নেছা ৩১ শতাংশ ভূমি বিদ্যালয়ের অনুকূলে দানকরেন এবং মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়া নিজে নগদে ১০ হাজার টাকা ও  দশবান্ডেলটিন দানকরে আরকোনো সহযোগিতা করেনি।

এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে এবং বিদ্যালয়ের নামে ১৫০শতাংশ ভূমির প্রয়োজনীয়তা মিটাতে মো: আমিনউদ্দিন চেয়ারম্যান ৬ শতাংশ, মনিন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ ৩শতাংশ, মো: আবুল হোসেন ভূঁইয়া, মো: আবুল কাশেম ভূঁইয়া, মো: ছিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া, মো: রুহুল আমীন ভূঁইয়া ও মো: বক্স আলী নামীয় সিএস-৬৯৪ দাগের ভূমি হতে ৯৭ শতাংশ ভূমি বিদ্যালয়ের অনুকূলে দানকরেন। মাতাসহ মো: খলিলুর রহমানের বিদ্যালয়ের অনুকূলে অনুদান ৪০ (চল্লিশ) হাজার টাকার অধিকনয়। মো: খলিলুর রহমানের পিতা আলী  মিয়া ভূঁইয়া বিদ্যালয়ের জন্য কোনো অনুদান দেয় নাই। সেহেতু বিদ্যালয়ের নাম করণের বিধি মোতাবেক মো: খলিলুর রহমান ভূঁইয়ার পিতা আলীমিয়া ভূঁইয়ার নামে বিদ্যালয়ের নামকরণ হতে পারেনা বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করে।

তাছাড়া এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করে, আলীমিয়া ভূঁইয়ার ডাক নাম কালু ভূঁইয়া নামে স্থানীয়বাসীর কাছে পরিচিত। কালু ভূঁইয়া পাকিস্তান মুসলিম লীগের ঘোড় সমর্থক ছিল এবং পাকহানাদারবা হিনীর সাথে তার ছিল ওতপ্রোতভাবে সম্পর্ক। এলাকাবাসীর অভিযোগ একজন পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী রাজাকারের নামে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম করণ তারা ছেনা। অতিসত্বর বিদ্যালয়টির নামকরণ “বড় গোবিন্দপুর আলী মিয়া ভূঁইয়া উচ্চবিদ্যালয়” হতে একজন পাকহানাদার বাহিনীর সহযোগী ‘আলী মিয়া ভূঁইয়া’র নাম বাদ দিয়ে বিদ্যালয়টি নতুন ভাবে নাম করণের জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোড়দাবী জানান। (আরো অনুসন্ধান চলছে। তথদিয়ে সহযোগীতা করতে আহ্বান করছি। নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty + eighteen =