ট্রাফিক ইন্সপেক্টর গোলাম মাওলা কবীরের অবৈধ লেগুনা বানিজ্য

0
542

বিশেষ প্রতিনিধি: রাজধানী ঢাকার সুত্রাপুর জোনের জুরাইন পয়েন্টে ট্রাফিক ইনস্পেক্টর গোলাম মাওলা কবীরকে কাগজপত্র বিহীন অন্তত ৪ শতাধিক লেগুনার মালিক নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাসিক টাকা না দিলে বাস,  ট্রাক, সিএনজি, লেগুনা, পিকআপ ও কাভর্ট ভ্যান সহ অন্য কোন যানবাহনই টিআই গোলাম মাওলা কবীরের নিয়ন্ত্রিত এই এলাকা পাড়াপাড় হতে পারে না। আবার মাসোয়ারা দিলে কোন গাড়িরই কাগজপত্র লাগে না। সুত্রাপুর জোনের জুরাইন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন দক্ষিনবঙ্গ সহ রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করে। এর মধ্যে রাজধানীর জুরাইন পয়েন্টে রয়েছে নিষিদ্ধ ও বৈধ কাগজপত্র বিহীন অন্তত ৪ শতাধিক লেগুনা। আর এই লেগুনার মালিকরা টিআই গোলাম মাওলা কবীরকে দৈনিক ১৫০ টাকা হারে মাসে ৪ হাজার ৫শ টাকা হারে মাসোয়ারা দিয়ে চলাচল করে মহাসুখে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যাত্রাবাড়ী থেকে জুরাইন টু পোস্তাগোলা টু ঢাকা মেস এবং জুরাইন রেলগেইট টু দয়াগঞ্জ টু গুলিস্তান পর্যন্ত কাগজপত্র বিহীন অন্তত ৪শ লেগুনা গাড়ী চলাচল করে। এদের একটা লেগুনারও ফিটনেস নেই, নেই রোড পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর রেজিস্ট্রেশন। তাছাড়া রাজধানীর ভিতরে এই লেগুনা চলাচল সম্পূর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও টিআই গোলাম মাওলা কবীরের নিয়ন্ত্রনে জুরাইন এলাকায় কোন সমস্যা নেই।

রাজধানী ঢাকার প্রতিটি ট্রাফিক জোনের মতোই সুত্রাপুর জোনের টিআই গোলাম মাওলা কবীরেরও রয়েছে টাকা কালেকশন করার নির্ধারিত দালাল সদস্য। লেগুনার মালিকরা উক্ত দালালের মাধ্যমে এক ধরনের গোপন টোকেন বা স্টীকার সংগ্রহ করে প্রতিমাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিয়ে থাকে। টাকা দিলে আর কোন কাগজপত্র লাগেনা। তবে এই নিয়ে কোন লেগুনা মালিকেরই কোন অভিযোগ নেই, তারা মাসোয়ারা দিয়ে গাড়ি চালাতে অভ্যস্থ।   

ট্রাফিকের সার্জেন্টকে কত দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে লেগুনার ড্রাইভার নুর ইসলাম সুমন বলেন, মানতির টাকা ঠিক মতো দিয়ে দিলে কোন কিছুই লাগেনা। সুমন উল্টা প্রশ্ন করে বলেন, আচ্ছা আপনে তো সাংবাদিক, কখনো দেখেছেন কোন লেগুনার ড্রাইভারকে রাস্তার পাশে দাড় করিয়ে গাড়ির কাগজপত্র চেকিং করছে সার্জেন্ট। বর্তমানে সুত্রাপুর জোনে টিআই গোলাম মাওলা কবীরের নিয়ন্ত্রনে যতগুলো লেগুনা রাস্তায় চলাচল করছে তাদের একটারও কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। শুধুমাত্র মাসোয়ারা দিয়েই রাস্তায় চলাচল করছে এসব গাড়ী। লেগুনা গুলো আবার প্রতি রাতে সিরিয়াল মতো বিনা পয়সায় পুলিশের ডিউটি পালন করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিকের এক কনসটেবল বলেন, মাসিক সাড়ে ৪ হাজার টাকা ভিত্তিতে শুধুমাত্র লেগুনা হতেই টিআই কবীর স্যার মাসে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা মাসোয়ারা আদায় হয়ে থাকে। আর একারনে এই লেগুনা গুলো কখনো ডাম্পিংয়ে নেওয়া হয় না। আর জরিমানা করে মামলাও দেয়া হয় না। সার্জেন্টরা দিনরাত শুধু প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল থামিয়ে জরিমানা করে মামলা দেয়।

প্রতিমাসের হিসাব দেখলে বুঝতে পারবেন সার্জেন্টের মাধ্যমে যতগুলো হয়েছে তার শতকরা ৯০ ভাগই প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল নামে। কারন এগুলো মাসোয়ারা দেয় না বলেই তাদেরকে মামলা দেয়া হয়। অথচ টিআই গোলাম কবীরের নাকের ডগা থেকে কয়েক হাত দুরেই রয়েছে অবৈধ লেগুনার যাত্রীস্ট্যান্ড। এসব লেগুনার একটারও ড্রাইভারের  ড্রাইভিং থেকে ফিটনস, রোড পারমিট ও রেজিস্ট্রিশন সহ কোন কাগজপত্রই নেই। আর যেসব গাড়ীর কাগজপত্র আছে ঐ গুলোকে রাস্তায় আটক করে দীর্ঘক্ষণ চলে লোক দেখানো নাটক। মামলার বোঝা মাথায় দিয়ে গাড়ীগুলোকে পাঠানো হয় ডাম্পিংয়ে।

স্থানীয় নেতারা লেগুনাস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রন করে দৈনিক চাঁদা আদায় করে নির্ধারিত সমেয় টিআই গোলাম মাওলা কবীরের হাতে পৌছে দেয়। সুত্র জানায় টিআই গোলাম মাওলা কবীরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই টাকার ভাগ ঠিকমতো পেলেও নিচের স্তরের লোকজন গুলো সারাদিন রৌদ-বৃষ্টি-ঝড়ে কষ্ঠ করে তেমন কিছুই পায় না। তাই তারা কারনে অকারনে  যখন তখন রাস্তার মধ্যে গাড়ী আটক করে তীব্র যানজট সৃষ্টি করে নগদ টাকা আদায় করে। এব্যাপারে টিআই গোলাম করীরের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি গুরুত্বহীন মনে করে এড়িয়ে যান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − six =