চুন তৈরির কারখানা বসিয়ে ফুটপাত দখল

0
699

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা সড়কে মেসার্স মেঘনা লাইম’স নামে একটি চুন তৈরির কারখানা বসিয়ে ফুটপাত দখল করে গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন এক প্রভাবশালী।

ফলে ওই সড়ক দিয়ে রিকশা বা সাধারণ পথচারীরা চলাচল করতে পারছে না। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। সড়কের জায়গা দখলের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালনের একটি খুঁটির চারদিকে পাথর স্তূপাকারে রাখায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কায় রয়েছেন আশপাশের লোকজন।

তবে দখলকৃত সওজে’র জায়গা দ্রুত দখলমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী।

অন্যদিকে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাথর অপসারণ না করা হলে মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুতের নির্বাহী প্রকৌশলী।

ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-আদমজী রোডের সিদ্ধিরগঞ্জের রংধনু সিমেনা হলসংলগ্ন চিটাগাং রোডস্থ আটি এলাকায় মেসার্স মেঘনা লাইম’স নামে চুনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির মালিক আবদুল হাই মেম্বার।

মেঘনা লাইমসের প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে চুন তৈরির কারখানাটি ভাড়া নিয়ে চুন উৎপাদন করছেন তিনি। তবে তিনি কারখানার নির্ধারিত জায়গা ছাড়াও ডেমরা-নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়কের রিকশা চলাচলের লেন ও ফুটপাত দখল করে চুন উৎপাদনের পাথরগুলো সেখানে স্তূপাকারে জমিয়ে রেখেছেন।

রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে রাখায় ওই পথ দিয়ে কোনো রিকশা- এমনকি সাধারণ পথচারীরা হেঁটে যেতে পারেন না। বাধ্য হয়ে রিকশা বা পথচারীরা প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটছেন। তা ছাড়া পাহাড়সম স্তূপকৃত পাথর পড়ে গাড়ি কিংবা সাধারণ মানুষের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।

এদিকে একই জায়গায় সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ডেমরা গ্রিড কেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটি রয়েছে। যার চতুর্পাশে কয়েক টন পাথর স্তূপাকারে জমিয়ে রাখেন কারখানার ভাড়া মালিক আবদুল হাই মেম্বার।

টিলার মতো উঁচু স্তূপাকারে চুনা পাথরগুলো রাখায় বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ওই পাথরগুলো দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা করে সড়কের জায়গাকে দখলমুক্ত করব।

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ ডিপিডিসির এনওসিএসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মেঘনা লাইম’স নামে ওই চুনা কারখানার মালিককে বিদ্যুতের খুঁটির পাশ থেকে পাথর সরিয়ে নিতে প্রথমে মৌখিকভাবে ও পরে লিখিত চিঠি দেয়া হয়েছে।

পাথরগুলো সরিয়ে না নিলে তার বিরুদ্ধে আমরা মামলা করা হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায়ও জানানো হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, বিগত বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপির সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের নাম ভাঙিয়ে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দখল করে এককভাবে সিদ্ধিরগঞ্জে তিনি পাথর ও বালু ব্যবসা করেছেন।

সেই সময় তিনি শীতলক্ষ্যায় আর কাউকে বালুর ব্যবসা করতে দেননি। এককভাবে বিএনপির এমপির নাম বিক্রি করে আবদুল হাই সে সময় কোটি কোটি টাকা আয় করেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর কয়েক মাস তিনি পালিয়ে ছিলেন।

জরুরি অবস্থায় ফখরুদ্দিন সরকারের সময় শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সেই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। পরে জামিনে এসে তিনি আবারও পালিয়ে যান।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কয়েক মাস পর নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুনের অন্যতম আসামি নুর হোসেনকে ম্যানেজ করে এলাকায় ফিরে এসে তিনি নুর হোসেনের প্রভাবে সিদ্ধিরগঞ্জে ব্যবসা শুরু করেছিলেন বলে জানান এলাকাবাসী।

সেভেন মার্ডারের কারণে নুর হোসেন এলাকা ছেড়ে গেলে আব্দুল হাই মেম্বারও এলাকা থেকে পালিয়ে যান। কয়েক মাস পালিয়ে থাকার পর এলাকার এক শিল্পপতিকে ম্যানেজ করে ফিরে আসেন। সেই শিল্পপতির প্রভাবেই তিনি বর্তমানে সরকারি জায়গা ও ফুটপাত দখল করে চুন তৈরির কারখানা পরিচালনা করছেন।

মেঘনা লাইমসের মালিক আবদুল হাই মেম্বারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + three =