রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অপ্রতিরোধ্য লোকমান বাহিনী

0
452

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দিনেরাতে কোটি টাকার ওপরে চাঁদা ওঠাচ্ছে। মাস শেষে চাঁদার অঙ্ক ৫ কোটিতে গিয়ে ঠেকছে। ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নয়তো জিম্মি পরিস্থিতিতে টাকা পরিশোধ করেই সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুক্তি মিলছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারওয়ান বাজারের প্রগতি ক্লাব থেকেই চাঁদাবাজির ভয়ঙ্কর সব ঘটনা ঘটছে। পুরো এলাকায় সরকার দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে মো. লোকমান হোসেন ও তার বাহিনী। তিনি প্রগতি ক্লাবের সহ-সভাপতি।

পুলিশ জানিয়েছে যে কোন মূল্যে কারওয়ান বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছে অপরাধী যে দলেরই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করা যাচ্ছে না জানিয়ে কারওয়ান বাজার ওয়াসা গলি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফারুক প্রধানিয়া বলেন, অনেকবার লোকমান বাহিনীকে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করার চেষ্টা করেছি। কোন ফল হয়নি। দেখা যায়, আড়ৎ থেকে মালামাল চুরি হয়ে গেছে, অথবা দোকানের কর্মচারীকে ধরে মারধর করেছে। এমন বহু ঝামেলা হয়। চাঁদাবাজির বিষয়ে বহুবার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কোন লাভ হয়নি। উল্টো বিপদে পড়তে হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কারওয়ান বাজারের প্রায় সব ব্যবসায়ীই গোপন চাঁদাবাজির শিকার। কোন কোন ব্যবসায়ী প্রাণের ভয়ে গোপনে চাঁদা দেন। কিন্তু প্রকাশ করেন না। নানাভাবে চাঁদাবাজির শিকার হওয়াদের মধ্যে জসীমসহ মোট ৯২ জন ব্যবসায়ী অভিযোগটি করেছেন।

পুরো এলাকায় সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে মো. লোকমান হোসেন। তার পিতার নাম মো. ইসমাইল হোসেন। বাড়ি নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানাধীন কড়িহাটি গ্রামে। সে কাওরানবাজার কিচেন মার্কেট চতুর্থ তলার ছাদে বসে। তার বিশাল এক বাহিনী পুরো কারওয়ান বাজারের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে।

সারাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে কাঁচামাল কারওয়ান বাজারে আসে। প্রতিদিন এখানে কমপক্ষে এক হাজার কাঁচামালের ট্রাক আসে। প্রতি ট্রাক থেকে পাঁচশ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। সে হিসেবে প্রতি রাতে কারওয়ান বাজারে শুধু কাঁচামালের ট্রাক থেকেই পাঁচ লাখ টাকা চাঁদায় করে চাঁদাবাজরা। আর প্রতিমাসে শুধু কাঁচামালের ট্রাক থেকেই দেড় কোটি টাকা চাঁদা তুলে চাঁদাবাজরা। পুরো কারওয়ান বাজার থেকে শুধু লোকমান বাহিনীই পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে।

গত ১৭ আগস্ট রাতে এরশাদ পার্কের ভিতর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ জসিম পাটোওয়ারীকে তুলে নিয়ে যায় লোকমান বাহিনী। জসিমের অপরাধ, তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেছেন। তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয় কিচেন মার্কেটের ছাদে। সেখানে তাকে মারধরের পর ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। ব্যবসায়ী জসিম পাটোয়ারী নিজেও ক্ষমতাসীন দলের নেতা হয়েও ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোকমান বাহিনীর লোকমানের কথাই যেন শেষ কথা। তার কথার বাইরে কেউ গেলে তাকে চরম খেসারত দিতে হয়।

অথচ গত ৪ আগস্ট কারওয়ান বাজার-কেন্দ্রিক চাঁদাবাজদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছিলেন, ‘চাঁদাবাজি-মস্তানি করলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আমরা এখানে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, মস্তানি করতে দেব না।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিতে কোনো কাজ হয়নি।

গত শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। বর্তমানে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা চলমান থাকবে। অপরাধী যে দলেরই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, কারওয়ানবাজারে বহুদিন ধরেই চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে। কারওয়ান বাজারে দুইটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করত। তার মধ্যে একটি হচ্ছে নোয়াখালী গ্রুপ। এই গ্রুপটির নেতৃত্বে রয়েছে লোকমান বাহিনী। লোকমান বাহিনী বহুদিন চাঁদাবাজি করেছে। বর্তমানে পুলিশী তৎপরতার কারণে তাদের চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে গেছে। কারওয়ান বাজারকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ করতে সেখানে শীঘ্রই একটি পুলিশ ফাঁড়ি বসানো হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 + 10 =