সাভারে গণমাধ্যমকর্মীর স্ত্রীর আর্তনাদ

0
472

নুসরাত মরে গিয়ে বেঁচে গেছে আর আমি বেঁেচও মরে আছি কারন আমার  স্বামী প্রায় রাতেই আমাকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে ও ভিডিও করে তা ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকী দিচ্ছে। এ লজ্জা থেকে  আমার মরে যাওয়াই ভালো , কিন্তু একমাত্র শিশু পুত্রের কথা চিন্তা করে মরতেও পারছি না কথা গুলো বুক চাপড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালেন স্বামীর হাতে নানাভাবে নির্যাতিত এক স্ত্রী।পাষন্ড ওই স্বামীর নাম মিঠুন সরকার। সে সাভার পৌর এলাকার বাড্ডা ভাটপাড়া মহল্লার প্রফুল্য সরকারে ছেলে। সম্প্রতি মিঠুন সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তার স্ত্রী একমাত্র  শিশু পুত্র কে সঙ্গে নিয়ে  শ^শুরবাড়ী থেকে পালিয়ে  বাবার বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে । গত শুক্রবার ওই নারী নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাভার মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেছেন । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিঠুন তাকে ও তার বাবা মাকে নানা ভাবে হুমকী ও গালিগালাজ করলে গত শনিবার মিঠুনের বিরুদ্ধে  থানায় একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন । কিন্তু পুলিশ তা মামলা হিসেকে রের্কড না করায় তিনি রোববার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনাল Ñ ৯ এ একটি পিটিশন  মামলা দায়ের করেন । আদালত মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন ( পিবিআই) কে তদন্তের দায়িত্ব  দিয়েছেন বলে জানা গেছে ।

মিঠুনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ও সাভার থানায় তার স্ত্রীর দায়ের করা সাধারন ডায়েরী ও অভিযোগ সূত্র থেকে জানা গেছে , প্রায় ৩ বছর আগে মিঠুন মেয়ের পরিবারের কাউকে না জানিয়ে একটি মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে । বিয়ের পর থেকেই টাকার  জন্য  তার স্ত্রীকে শারীরিক ও মানষিক সহ নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে। স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ আর মারধর ছিলো তার নিত্যদিনের ঘটনা। 

প্রায় রাতেই তারা আলাদা কক্ষে ঘুমাতেন । তবে মাঝে মধ্যেই মিঠুন উঠতি বয়সের যুবকদের নিয়ে অনেক রাতে বাসায় ফিরতো । আর প্রায় রাতেই এ সব যুবকদের হাতে তার স্ত্রীকে তুলে দিতো । শুধু তাই নয় , ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে অচেতন করে অন্য পুরুষকে বেডরুমে ঢুকিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে যৌন নির্যাতন করাতো। পরবর্তীতে ওই যুবকদের কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো ।

কয়েক মাস আগে মিঠুন তার স্ত্রীকে ঘুমের ট্যাবলেট খেতে দেয় । কিন্তু সে কৌশলে ট্যাবলেট না খেয়ে ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে থাকেন । মিঠুনের সহযোগীতায় ওই রাতে এক যুবক তার ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে । এর  কয়েকমাস পর গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে একইভাবে মিঠুন অপর এক যুবককে তার স্ত্রীর বেডরুমে ঢুকিয়ে দেয়।পরে  ওই যুবক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ।

এরপর ওই যুবকের সঙ্গে  তার স্ত্রীর নানাভাবে কিছু আপত্তিকর ছবি তোলে ও ভিডিও করে  নিজের হেফাজতে  রাখে। প্রতিবাদ করলেই মিঠুন এ ভিডিও ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকী দিতো। এ ছাড়াও   এ সব ঘটনা কাউকে কিছু বললে তারা বাবা ও ভাইকে মাদক দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকী দিতো । এ ভয়ে  তার স্ত্রীর মুখ খুলতে সাহস পায়নি । 

মিঠুনের স্ত্রী জানান , আমার  প্রতি ওর কোন মোহ নেই । ও সব সময় উঠতি বয়সের যুবকদের সাথে সম্পর্ক করতে ভালবাসে ।  মূলত সে একজন সমকামী ও কুরুচি সম্পন্ন মানুষ । তার এসব কাজে বাধা দিলেই তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো । লোহার রড দিয়ে বেধড়ক পেটাতো ।

কিশৈার বলাৎকারের ঘটনায় থানায় মামলা হলে সে পুলিশের ভয়ে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় । আর এ সুযোগে আমি পালিয়ে বাবার বাসায় আশ্রয় নিয়েছি । আমি আর ওর কাছে ফিরে যেতে চাইনা ।

মিঠুনের শ^াশুড়ী বলেন যে স্বামী তার স্ত্রীকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দিতে পারে সে তার স্ত্রীকে হত্যা করতেও কুন্ঠাবোধ করবে না । তাই জেনে শুনে আমার মেয়েকে আর  নরপশুর হাতে  দিতে চাইনা । শয়তানটা  আমার মেয়েকে মেরে ফেলবে । 

মিঠুন সরকার একটি বেসরকারী টেলিভিশনের  সাভার প্রতিনিধি ছিলেন । সম্প্রতি এক কিশোর বলাৎকারের ঘটনায়  তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তাকে গ্রেফতারের দাবীতে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ ঢাকা আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে মানব বন্ধন করেন ।

এর আগেও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী সহ নানা অভিযোগে সাভার থানায়  ১৪টি মামলা রয়েছে। ফলে বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ গত ৩০ অক্টোবর তাকে অব্যাহতি দিয়েছে । যদিও  মিঠুন এসব কে ষড়যন্ত্রের শিকার বলে দাবী করেন ।

মিঠুন সরকার নামে সাংবাদিক হলেও কাজে সে ভয়ংকর চাঁদাবা। ব্যবসায়ী, শিক্ষক চাকুরীজীবি এমনকি সাংবাদিকরাও তার নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পায়নি । সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ জানান , মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রসী কর্মকান্ড , চাঁদাবাজী ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সহ প্রায় ১ ডজনের বেশী মামলা চলমান  রয়েছে ।

কয়েকটি মামলায় আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর এক কিশোর বলাৎকারের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়েছে । এ ছাড়াও তার স্ত্রী থানায় এসে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও সাধারন ডায়েরী  করেছেন , যা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve + 20 =