হাওরের জলাশয় খালবিল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা উচিত: পরিকল্পনা মন্ত্রী

0
415

নদী, নালা, খাল-বিলসহ বিভিন্ন ধরনের জলাশয় যে উদ্দেশ্যে ইজারা দেয়া হয় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রশ্ন রেখেছেন, ‘তাহলে কেন ইজারা দিয়ে সাধারণ মানুষের মাছ খাওয়া বন্ধ করা হবে?’ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে নদী উন্নয়ন পরিকল্পনা বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ইজারা দেয়, মূলত আমিই দিই। এটা আমারই দায়িত্ব। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে ইজারা দেয়া হয়, আসলে কি সেটা করা হয়? বলা হয়, উন্নয়ন করা হচ্ছে। উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য চার/পাঁচ বছর বিভিন্ন জলাশয় ইজারা দেয়া হয়। মজার বিষয় হলো, উন্নয়নের জন্য আমাদের টাকায় মাটিও কাটা হয় মাছ চাষের জন্য। আসলে ওই কাজটা করা হয় না।’

তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন আমরা ইজারা দিয়ে সাধারণ মানুষের মাছ খাওয়া বন্ধ করবো? আমি ইজারা না দেয়াকে পুরোপুরি সমর্থন করি। আশা করি, সরকারের উচ্চ মহলেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’

এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় ছোট মাছ ধরে ধরে খেয়েছি। আমাদের পূর্বপুরুষেরাও খেয়েছে। সেই মাছ খেয়ে আমিষের যে প্রয়োজন সেটা মিটেছে। এখন আমরা সেই বড় জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারি না। নদীর যে অধিকার, যে দান, তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ বললেই, মনের মধ্যে আসে হাজার নদী। নদীর সৃষ্ট বাংলাদেশ। লাখ লাখ বছর পলি ফেলে আমাদের এই আবাস তৈরি করেছে নদী। নদী ও পরিবেশকে হত্যা করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘যাই করি না কেন, নদী নিজেকে ঠিকই বাঁচাবে। পরিবেশ ঠিকই নিজেকে বাঁচাবে। তবে ক্ষতিটা হয়ে যায়। নদী আঘাত পেলে আমাদের জীবনের ওপরেও ব্যথা আসবে। সেজন্য নদীর সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে।’

এক ইঞ্চি নদীর জমি দখল করে উন্নয়ন কাজ না করার আহ্বান জানান অনুষ্ঠানের আলোচকরা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে যেসব কাজ করি, তার কিছু সরাসরি নদী, পানি ইত্যাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি শর্ত জুড়ে দেয়া- যারা প্রকল্প তৈরি করেছেন, তারা সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় পুরো পরিবেশ বিশেষ করে নদী, খাল, নালা, বিল, জলাশয় ইত্যাদির ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না বলে নিশ্চয়তা দেবেন। নিশ্চয়তা শুধু তারা কথায় কথায় দেবেন না, কীভাবে তারা নিশ্চয়তা দিচ্ছেন সেটাও তারা বলবেন। তারা সেখানে গিয়েছিলেন, খোঁজ-খবর নিয়েছেন, বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কথা বলবেন, পণ্ডিতদের বুদ্ধি নিয়েছেন, তারপর তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে নিয়ে যাব।’

এ সময় আরও কথা বলেন- জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মনিরুজ্জামান, প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ, নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মো. আনোয়ার সাদতসহ অনেকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

6 − five =