নিজের লালসা পুরুন করতে না পেরে ২ সন্তানের জননী গৃহবধুকে মিথ্যা চরিত্রহীনার অভিযোগ দিয়ে বটি দিয়ে মাথার চুল কেটে দিয়েছে এক আঃলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার উধুনিয়া ইউনিয়নের গজাইল গ্রামে ২৫ নভেম্বর রাতে। এ ঘটনায় উল্লাপাড়া মডেল থানায় ওই আঃলীগ নেতা ও তার ৪ সহযোগীর বিরুদ্ধে ২ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করেছে নির্যাতিতা গৃহবধু। মামলা দায়ের করে উল্টো আসামীদের ভয়ে ওই গৃহবধু পাশ্ববর্তী বাবা’র বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আর ঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে আঃলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে থেকে প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে নানা তৎপরতা শুরু করেছে। থানায় দায়ের হওয়া মামলা ও নির্যাতিতের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়,ঘটনার দিন সন্ধায় ওই গৃহবধু আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ভাড়া হোন্ডার খোঁজে বের হন।
পথিমধ্যে একই গ্রামের মৃত আবেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলামের বাড়ির পাশে যেতেই সেখানে তাকে অতর্কিত আটকিয়ে ফেলেন স্থানীয় ওয়ার্ড আঃলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগীরা। তারা ওই গৃহবধুকে সাইফুল ইসলামের সাথে আপত্তিকর কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে আটক করেছে বলে চিৎকার করে লোকজন জোগাড় করে। এ খবরে গ্রামের লোকজন ছুটে এলে সেখানে তাৎক্ষনিক সবার সামনে মাছকাটা বটি দিয়ে দ্রুত নিজ হাতে ওই গৃহবধুর চুল কেটে দেন আঃলীগ নেতা আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগীরা। এসময় তাদের কাছে নানা কাকুতি-মিনতি করেও তাদের বিন্দুমাত্র সহয়তা পায়নি ওই গৃহবধু। ওই গৃহবধুর চুল কেটে উল্লাস প্রকাশ করে আঃলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা। রাতেই তারা গৃহবধু মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার জন্য গজাইল বাজারে শরিফ নামে এক সেলুন শ্রমিকের কাছে কাঁচি আনতে যায়। কাঁচি দিতে রাজি না হওয়ায় ওই সেলুন শ্রমিককে তারা মারধর করে বলে সেলুন শ্রমিক এ প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন। এদিকে সেদিন রাতে আঃলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের গৃহবধুর চুল কাটার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আঃলীগ নেতা আব্দুর রশিদ তার সহযোগীদের নিয়ে বটি দিয়ে চুল কেটে উল্লাস করছেন। ঘটনার পর সেখান থেকে পালিয়ে ওই গৃহবধু তার সন্তানদের নিয়ে পাশ্ববর্তী তরফ বায়রা গ্রামে বাবা’র বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে পুরো ঘটনা পরিবারের কাছে খুলে বলে। নিকট আত্মীয়দের সহায়তায় ২ ডিসেম্বর গৃহবধু বাদী হয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানায় আঃলীগ নেতা আব্দুর রশিদ সহ একই গ্রামের মোজাহারের পুত্র মুনসুর,বাহের আলীর পুত্র ছালাম,নাসির ও শহিদুল ইসলামকে আসামীকে করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০/৩০ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং ২। উল্লাপাড়া মডেল থানার উপ পরিদর্শক মোঃ হাফিজ তদন্ত করছেন। মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে আসামীরা রাতভর আতœগোপনে থেকে দিনের বেলায় প্রকাশ্য এসে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। গজাইল গ্রামের একাধিক লোকের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান,কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া যেতে পারে। তবে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এভাবে ওই গৃহবধুর চুল কেটে দেয়া মোটেও ঠিক হয়নি। গজাইল গ্রামের সাইফুল ইসলাম ও ইউনুস আলী জানান, আঃলীগ নেতা রশিদ প্রভাব বিস্তার করে এর আগেও শিক্ষক সহ এলাকার অনেককেই মারধর করেছে। দলীয় প্রভাবে তিনি বে-পরোয়া। তারা এ ঘটনায় শাস্তি দাবী করেন। এ বিষয়ে কথা হলে নির্যাতিত গৃহবধু জানান,আঃলীগ নেতা আব্দুর রশিদ আগে থেকেই তাকে নানা কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। তার বাড়ির ডিস সংযোগ কেটে দেয়ার পর থেকে তার সাথে দন্ধ শুরু হয়। তখন থেকে তাকে নানাভাবে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। তিনি দাবী করেন,আমি নিরাপরাধ। আমাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সবার সামনে মাথার চুল কেটে নির্যাতন করা হয়েছে। এতে তিনি সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছেন। ঘটনার পর থেকে তিনি রাতে ঘুমাতে পারছে না। এমনকি সমাজে মুখ দেখাতে পারছেন না। বাড়ি থেকে লজ্জায় বের হতে পারছেন না। এ কথা বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি আরোও জানান,মামলা তুে¬ নিতে চাপ প্রয়োগ সহ দেখে নেয়ার হুমকি দিচ্ছে আসামীরা। তিনি তার সাথে ঘটে যাওয়ার ঘটনার সুষ্ট তদন্ত ও বিচার দাবী করেন। গৃহবধু নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়ে কথা হলে আঃলীগ নেতা আব্দুর রশিদ দাবী করেন,তিনি ওই গৃহবধুর চুল কাটেননি। অসামাজিক কার্যকালাপে জড়িত থাকার সময় গ্রামবাসী তাকে লোকজন নিয়ে আটক করে মাথার চুল কেটে দিয়েছে। স্থানীয় একটি মহল এ ঘটনায় তাকে জড়িত করে ওই গৃহবধুকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উল্লাপাড়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীন শাহ পারভেজ কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।