পুলিশের অভিযান কুয়াকাটায় ন্নিমমানের আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধে নারী ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ

0
924

আনোয়ার হোসেন আনু,কুয়াকাটা॥ পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় আবাসিক হোটেলের ব্যবসার অন্তরালে চলছে মাদক, পতিতা ও জুয়ার আসর। প্রশাসন ও স্থানীয় লোকজনকে ফাঁকি দিতে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীরা বার বার হোটেলের নাম পরিবর্তন করলেও পরিবর্তন হয়নি ব্যবসার ধরণ। সাংবাদিক,পুলিশ ও স্থাণীয় সরকার দলের নেতাদের নাম ব্যবহার করে সূ-কৌশলে মাদক,জুয়া ও পতিতা ব্যবসা চালিয়ে আসছে অনুমোদনহীন আবাসিক হোটেল যমুনা,হোটেল পাঁচ তারা,ওমর খাঁন সহ নিন্ম মানের কয়েকটি আবাসিক হোটেলে। এসব অনৈতিক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে ফেলছে ছোট ছোট শিশুদেরও। পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে পতিতা ও দালালদের আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে এরা আবার পুনরায় শুরু করে এ ব্যবসা। এসব ব্যবসার মুল হোতারা অধরাই থেকে যাচ্ছে। পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সাবেক লাকী হোটেল বর্তমানে নাম পরিবর্তন করে “যমুনা হোটেল” নাম দিয়েছে। গত সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে যমুনা হোটেল থেকে পতিতার দালাল ইলিয়াস হাওলাদার, হোটেল ম্যানেজার মো: আল আমিন, যৌনকর্মী মিম আক্তার ও মরিয়ম আক্তার কে আটক করেছেন মহিপুর থানা পুলিশ। এর আগে গত ১ সপ্তাহ আগেও ওই হোটেল থেকে ৬ পতিতাকে আটক করে থানা পুলিশ।

তবে যমুনা হোটেলের মালিকের আত্মীয়ের পরিচয়ধারী সাইফুল এবং পতিতা ও মাদকের সম্রাট জাহিদকে পুলিশ ধরতে পারেনি। হোটেলের পিছনের দড়জা দিয়ে এরা দুজন পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। সাইফুল ও জাহিদ কুয়াকাটা এলাকার চিহ্নিত পতিতা ব্যবসায়ী। এদের নেতৃত্বে যমুনা হোটেল থেকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে নারী ও মাদক পাচার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুয়াকাটা ভূইয়া মার্কেটের সভাপতি মোঃ নিজাম হাওলাদার জানান, যমুনা হোটেলের ভাড়াটিয়া মালিক মোঃ সাইফুল ইসলাম,জাহিদ হোসেন মাদক,পতিতা সহ নানা অসামাজিক কাজের সাথে জড়িত রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী সহ তরুন, যুবকদের মাঝে এসব অসামাজিক কর্মকান্ডের প্রভাব পড়ছে।

অপরদিকে কুয়াকাটা ইলিশ পার্ক সড়কে অবস্থিত আবাসিক হোটেল পাঁচ তারা। হোটেলটির নাম পাঁচ তারা হলেও মানের দিক থেকে নিন্ম মানের একটি আবাসিক হোটেল। ওই হোটেলটিতে জুয়া,মাদক ও পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও থানা পুলিশ এর আগে কয়েকবার জটিকা অভিযান চালিয়েছে। মহিপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান সতর্কও করে দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্থানীয় মানুষ জানান, পাঁচ তারা হোটেলের রয়েছে একাধিক দালাল। এরা কমিশণে হোটেলে কাষ্টমার জোগার করে দেয়। হোটেলটির মালিক আলীপুর মৎস্য বন্দরের একজন প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী সেই সুবাদে চট্রগ্রাম,কক্সবাজার,ভোলা এলাকার সমুদ্রে মাছধরা ট্রলারের মালিক,মাঝিরা ওই হোটেলে এসে বোর্ডার সেজে উঠে মাদক,নারী,জুয়ার আসর বসায়। হোটেল কর্তৃপক্ষ সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় এসব অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে কেউ সাহস পায় না।

যমুনা ও পাঁচ তারা হোটেল ছাড়াও নিন্ম মানের একাধিক আবাসিক হোটেলে মাদক,পতিতা ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে। এসব আবাসিক হোটেলের নিরানব্বই ভাগই নির্মাণ করা হয়েছে পরিকল্পণাবিহীন বে-আইনী ভাবে। কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদণ ছাড়াই নির্মাণ করা হয়েছে হোটেল গুলো। দ্বিতীয় শ্রেণীর কতিপয় আবাসিক হোটেলের বিরুদ্ধেও রয়েছে মাদক ও জুয়ার আসর বসানোর বিস্তর অভিযোগ।

কুয়াকাটা আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এম এ মোতালেব শরীফ সাংবাদিকদের বলেন, নিন্ম মানের কিছু আবাসিক হোটেলে মাদক,নারী সহ অসামাজিক কাজ চলে বলে তাদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ এসেছে।

এসব হোটেল গুলো তাদের এসোসিয়েশণের আওতাভূক্ত না হওয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে পারছেন না তারা। মোতালেব শরীফ আরো বলেন, নিন্ম মানের আবাসিক হোটেল গুলোর মালিক ও কর্মচারীরা গাড়ী থেকে নামার সাথে সাথে পর্যটকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে ওইসব হোটেল গুলোতে নিয়ে যায়। তবে তিনি দাবী করেন ওনার্স এসোসিয়েশণের অর্ন্তভূক্ত কোন হোটেলে অসামাজিক কাজ চলে না।   

মহিপুর থানার ওসি মো: সোহেল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, অসামাজিক কাজের সাথে যেসব আবাসিক হোটেল জরিত রয়েছে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরই মধ্যে যমুনা হোটেলে দুই দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। অসামাজিক কাজে লিপ্ত ১০ নারী পুরুষকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =