বাঞ্ছারামপুরে ভণ্ড কবিরাজ মাইনুদ্দিনের প্রতারণা বাণিজ্য কৃষক থেকে কোটিপতি

0
587

নজরুল ইসলাম: বাঞ্ছারামপুরে এক সময়ের হতদরিদ্র দিনমজুর মাইনুদ্দিন (৬০) কবিরাজির আড়ালে প্রতারণা বাণিজ্যে সর্বশান্ত করে পথে বসাচ্ছেন সাধারণ মানুষকে।প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক। এমন একটা সময় কেটেছে তার, যখন খাবারের অভাবে দিনের পর দিন অর্ধাহারে-অনাহারে কাটাতে হয়েছে। অথচ সেই মাইনুদ্দিনের বাড়ি আজ দোতলা বিলাসবহুল ভবন। যা দেখে এলাকাবাসী রীতিমতো হতবাক। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে অনেকের। বছর আগে একাধিক পত্রিকায় ভন্ড কবিরাজ আইনুদ্দিনের নামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছিল। তৎকালীন বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার সাবেক ওসি অংশু কুমার দেব তার বাড়িতে কয়েকবার পুলিশ পাঠিয়ে তাকে ধরতে না পেরে তার প্রতারণা ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মাইনুদ্দিন কয়েক মাস এলাকা ছেড়ে নরসিংদীতে আত্মগোপনে ছিলেন। মাইনুদ্দিনের বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রতারণার অভিযোগ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে এলাকাবাসীর ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের হোগলাকান্দি গ্রামে ফকিরির নামে প্রতারণা ও তাবিজ-কবজের ব্যবসা করে মাত্র ৮-১০ বছরে মাইনুদ্দিন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

বসতবাড়ি ছাড়াও এলাকায় রয়েছে তার আরও একটি বাড়ি, ৫/৬/বিঘা জমি। নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রয়েছে অন্তত কোটি টাকা। আত্মীয়স্বজনের নামে নরসিংদীতে রয়েছে ৬ কাঠা জমিসহ বিভিন্ন ধরনের সম্পত্তি। আড়াইহাজার রয়েছেন তারেক বাড়ি সব মিলিয়ে তিনি এখন অন্তত ৬-৭ কোটি টাকার মালিক। কিন্তু সরকারকে কোনো রাজস্ব দেন না।

অভিযোগ রয়েছে, মাইনুদ্দিন নিজের প্রতারণা ও ভণ্ড ফকিরি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এলাকার প্রভাবশালীদের কয়েকজন ব্যক্তিদের পেছনে মাসে অন্তত ৩ লাখ টাকা ব্যয় করেন। জীবনে কখনও রাজনীতি না করলেও গত কয়েক বছর আগে নিজের অপকর্ম ঢাকার ঢাকার জন্য কৌশল অর্থ খরচ করে রূপসদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ধর্ম সম্পাদক হিসেবে। অনুসন্ধানকালে তাবিজ নিতে আসা পার্শ্ববর্তী তানিয়ার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়।

তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ বিশ্বাস করে মাইনুদ্দিন ফকিরের তাবিজ-কবচ নিতে আসে। শুনেছি, ফকির নাকি চুক্তিতে কাজ করে। কিন্তু আমি দু’বার কইরা চার হাজার দিয়া তাবিজ নিয়াও কোনো ফল পাই নাই। তবে এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা যাবে না। কারণ তার ক্যাডার বাহিনী শুনলে অত্যাচার করব।

’ এসব বিষয়ে অভিযুক্ত মাইনুদ্দিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সারা গ্রাম থেকে মানুষ আইয়ে আমি কাউরে বাইদানি আনি না। ভিবিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আমার কাছে আইয়ে (আসে) উপকার পায় বিধায়। আগে অভাব আছিল বিধায় মানুষের বাড়িতে কাম করছি। এহন আল্লার রহমতে আমি কোটিপতি। আমি প্রতারণা করি নাই, যারা আমার কাছে উপকার পাইছে হেরাই আমারে টেকা-পয়সা দিয়া যায়।

আমার আস্তানায় নারীরা থাকলেও এহানে কোনো খারাপ কাম হয় না। আর আয়কর না দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, আমি কষ্ট কইরা টেহা কামাই কইরা সরকাররে ভাগ দিতাম কেরে( কেন) এ বিষয়ে মুঠোফোনে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার (ওসি) সালাউদ্দিন চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন।

হোগলাকান্দি গ্রামের ভণ্ড ফকির মাইনুদ্দিনের বিষয়টি এতদিন আমার জানা ছিল না যেহেতু আপনার মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়েছি আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। প্রতারক মাঈনুদ্দীনের সঙ্গে আমাদের থানা পুলিশের কোনো যোগাযোগ নেই। তবে তার সম্পর্কে যেহেতু এখন শুনেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব। বাঞ্ছারামপুরে কোনো ভণ্ড ও প্রতারকের আস্তানা থাকতে দেব না।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 2 =