ঢাকার আশেপাশের নদ-নদীগুলো দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার প্রত্যয়

0
615

কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, বকুল, নিম, নাগেশ্বর, জারুল, পলাশ, কাঠবাদাম, শিউলি, চম্পা, কদম, কামিনী- এমন অসংখ্য ফুলের গাছ শোভা ছড়াবে বুড়িগঙ্গা-তুরাগের দুই তীরে। সুগন্ধ বিলাবে তীরের মানুষের মধ্যে। আর কিছু দিন গেলেই এমন সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকবে বুড়িগঙ্গা-তুরাগ পাড়ের লোকজনকে। যারা একটু মুক্ত হাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ছটফট করছেন, একটু নির্মল বাতাস গ্রহণের জন্য যারা দিনের পর দিন পার করছেন; সেই নগরবাসীর একটি অংশ এমন সৌন্দর্যের দেখা পাবেন খুব শিগগির। এ সৌন্দর্য আর স্বস্তি এনে দেবে বদলে যাওয়া বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের দুই তীর।

সরকার রাজধানী ঢাকার চারপাশে বয়ে যাওয়া চার নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা আর বালুর দুই তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে তীর ফিরিয়ে দেওয়ার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল এখন তা জোরেশোরে বাস্তবায়নের কাজ চলছে।

তীর রক্ষার মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিটিএ) বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালুর তীর অবৈধ দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করে।

প্রথম পর্যায়ে টানা অভিযান চালিয়ে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই তীর উদ্ধারের পর এখন চলছে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটি স্থাপন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে বর্তমানে দুই নদ-নদীর তীরের পরিবেশগত উন্নয়নসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজও চলছে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের তীরে বসছে সীমানা পিলার, চলছে মাটি খননের কাজ।

এসব কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হবে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ। ঢাকার আদি চেহারা ফিরিয়ে আনার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর বিনোদনের সুন্দর সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিন দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর মৌজার তুরাগ তীরে উদ্ধার করা জমিতে বসানো হচ্ছে ওপরে ১০ ফুট ও মাটির নিচে ১৬ ফুটের বিশাল কংক্রিটের সীমানা পিলার।

একই সঙ্গে চলছে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজও। দিনরাত সমানে চলছে এ কর্মযজ্ঞ। ইতিমধ্যে কামরাঙ্গীর চরসহ প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, রাধাচূড়া, বকুল, নিম, নাগেশ্বর, জারুল, পলাশ, কাঠবাদাম, শিউলি, পম্পা, কদম, কামিনী ফুলসহ প্রায় ১ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপপ্রকল্প পরিচালক মতিউল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে নেওয়া ৮৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার এ প্রকল্প ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা।

ইতিমধ্যে প্রকল্পের আওতায় ঢাকা নদীবন্দর এলাকায় ৩ হাজার ৮০৩টি সীমানা পিলারের ৫ হাজার ২৬৬টি পাইলের মধ্যে ২ হাজার ৫০টি পাইল ও ৫০০ পিলার নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় টঙ্গী নদীবন্দর এলাকায় ২ হাজার ৬টি সীমানা পিলারের মধ্যে ২ হাজার ৬৬২টি পিলারের ১৩০টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। রামচন্দ্রপুর থেকে বসিলা ও রায়েরবাজার খাল থেকে কামরাঙ্গীর চর পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, কিওয়াল, ওয়াকওয়ে অন পাইল ইত্যাদি নির্মাণের কাজ চলছে।

এর মধ্যে ১ কিলোমিটার কিওয়ালের পাইলিং ও ৬৫০ মিটার কিওয়ালের বেইজ কাস্টিং শেষ হয়েছে। ওয়াকওয়ে অন পাইলের কাজ চলমান রয়েছে। ওয়াকওয়ে অন পাইলের ৯৭০টি পাইলের মধ্যে ৪৫০টি (আড়াই কিলোমিটার) পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পের মধ্যে ছয়টি পন্টুন ও তীরভূমিতে চারটি ইকো পার্ক ছাড়াও বসার বেঞ্চ, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ভারী যানবাহনের জন্য ১৯টি জেটি নির্মাণ, বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের তীরে উন্নয়নকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চললেও নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের অধীনে আড়াই হাজার সীমানা পিলার নির্মাণের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলছে।

একইভাবে ঢাকা ও টঙ্গী নদীবন্দরের অধীনে ছয়টি ভারী জেটি নির্মাণের দরপত্র মূল্যায়নের কাজ চলমান আছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, দখলে-দূষণে ঢাকার চারপাশের মুমূর্ষু নদ-নদীগুলোকে উদ্ধারে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিআইডব্লিউটিএর নেতৃত্বে গত বছর ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল নদীমুক্ত-যুদ্ধ। আমরা এখনো মাঝদরিয়ায়। যুদ্ধ এখনো চলছে।

দরিয়া পাড়ি দিয়ে তীরে পৌঁছাতেই হবে আমাদের। নদ-নদীগুলো দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন করার প্রত্যয় জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেন, নর্দমায় পরিণত হয়ে যাওয়া ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোকে দখল-দূষণমুক্ত করে পরিচ্ছন্ন প্রবহমান নদ-নদীতে পরিণত করে পাড়ে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ও সবুজ বেষ্টনী গড়ে তুলে ঢাকাবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − 10 =