বাড়ছে দাম শেয়ারের, ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা উধাও

0
557

শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েই চলেছে পচা বা ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। বুধবার (২৬ আগস্ট) লেনদেন শুরু হতেই একের পর এক পচা কোম্পানির শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। এতে লেনদেনের সময় আধাঘণ্টা পার হওয়ার আগেই জেড গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।

এমন দাম বাড়ার পরও যাদের কাছে কোম্পানি দুটির শেয়ার আছে তারা কেউ তা বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ফলে ক্রেতা থাকলেও বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে। জেড গ্রুপের দুই কোম্পানির পাশাপাশি আরও তিনটি কোম্পানির শেয়ারের বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে।

দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার পর থেকেই পচা কোম্পানির এই দাপট চলছে। গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ তিনটি স্থানই ছিল জেড গ্রুপের দখলে।

চলতি সপ্তাহেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এসব পচা কোম্পানির দাপট দেখা যাচ্ছে। বুধবার লেনদেন শুরু হতেই কয়েক মিনিটের মধ্যে জিল বাংলা সুগার মিলের শেয়ার দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। এরপরও এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না।

আজ লেনদেনের শুরুতে ১৫৫ টাকা করে জিল বাংলা সুগার মিলের ২২০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এ দামে কেউ শেয়ার বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ১৮৫ টাকা ৯০ পয়সা করে ১৪ হাজার ৩৭০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায় কোম্পানিটির শেয়ার। এ দামেও বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন না।

শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও বছরের পর বছর ধরে লোকসানে নিমজ্জিত কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের সর্বশেষ কবে লভ্যাংশ দিয়েছে সে-সংক্রান্ত কোনো তথ্যও ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই। তবে ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৪৪ টাকা ৭২ পয়সা।

অথচ লোকসানে নিমজ্জিত এই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। অবশ্য গত ৯ জুলাই থেকেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ছে। ৯ জুলাই যেখানে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ছিল ৩১ টাকা ৬০ পয়সা, তা এখন দাঁড়িয়েছে ১৮৫ টাকা ৯০ পয়সায়। অর্থাৎ দেড় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ৪৮৮ শতাংশ।

দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পরও বিক্রেতা উধাও হয়ে যাওয়া আর এক পচা কোম্পানি শ্যামপুর সুগার মিল। বুধবার লেনদেনের শুরুতে ৭১ টাকা ৫০ পয়সা দামে কোম্পানিটির ৩৭৯টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। এরপর দফায় দফায় দাম বেড়ে তা ৭৫ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। এরপরও বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। ফলে বিক্রেতা উধাও হয়ে গেছে।

শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৭২ টাকা ৩৮ পয়সা। লোকসানে নিমজ্জিত এ কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৯ জুলাই থেকে বাড়ছে। ৯ জুলাই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২৩ টাকা ৮০ পয়সা, যা টানা বেড়ে এখন ৭৫ টাকা ২০ পয়সায় উঠেছে। অর্থাৎ দেড় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২১৬ শতাংশ।

বিক্রেতা উধাও হয়ে যাওয়া বাকি তিন কোম্পানি হলো-ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স এবং সমতা লেদার। এর মধ্যে সমতা লেদারের শেয়ার দাম ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং নতুন তালিকাভুক্ত এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্সের ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেড়েছে।

অস্বাভাবিক দাম বেড়ে সমতা লেদারের শেয়ার দাম ১২৬ টাকা ১০ পয়সায় উঠেছে। শেয়ারের এমন দাম হলেও ২০১৯ সালে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের মাত্র ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। তার আগে লোকসানে নিমজ্জিত থাকার দীর্ঘদিন কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

লোকসানে নিমজ্জিত মেঘনা কনডেন্সড মিল্কও দাম বাড়ার তালিকায় দাপট দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির শেয়ার দাম ৯ দশমিক ১৯ শতাংশ বেড়ে গেছে। অথচ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির লোকসান হয়েছে ৫ টাকা ৪২ পয়সা । দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে নিমজ্জিত এ কোম্পানিটি কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে সে সংক্রান্ত তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen + six =