কিবরিয়ার বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ

0
389

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য (কাস্টম নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে বিদেশে শত শত কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়ার পর কমিশন তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানতে পেরেছে দেশ রূপান্তর। দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সম্প্রতি কমিশনের বিশেষ তদন্ত অনুবিভাগের মহাপরিচালককে দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সাখাওয়াত হোসেন নামে এক ব্যক্তি সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে শত শত কোটি টাকা পাচারসহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা দিয়েছেন দুদকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন সাত পাতার ওই অভিযোগটি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সাখাওয়াত হোসেনের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ দিয়ে দেশকে শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার থাকাকালে ১৭১টি বিল অব এন্ট্রির নথি গায়েব হয়। যার ফলে সরকার ১৫০ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব বঞ্চিত হয়। ওই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তৎকালীন ৩৫ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। সরাসরি সম্পৃক্ততা থাকার পরও অজ্ঞাত কারণে সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার নাম তদন্তে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ওই ১৭১টি বিল অব এন্ট্রিতে নিম্ন শুল্কহারের পণ্য ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি করা হয়। এর বিনিময়ে সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ৫০ কোটি টাকা ঘুষ নেন। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এ বিশাল কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎকালীন এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিনকে (পরবর্তী সময়ে দুদক কমিশনার) নির্দেশ দেশ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু রহস্যজনক কারণে নাসিরউদ্দিন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। কেউ কেউ বলছেন দুজনেরই বাড়ি বরিশালে হওয়ায় নাসিরউদ্দিন কোনো ব্যবস্থা নেননি কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে গোলাম কিবরিয়া তার নিকটাত্মীয় ও বিশ্বস্ত লোকজন দিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গঠন করেন। যাদের বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কোনো কাজ করা সম্ভব হতো না। সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া তার ভাই সৈয়দ মুর্তজার নামে সিঅ্যান্ডএফ (ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং) এজেন্ট প্রতিষ্ঠান সৈয়দ ট্রেডিং চালু করেন। এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে নানা অনিয়ম করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। এছাড়া ভাগ্নে খালেদের নামেও খোলেন আলাদা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান। তার অন্য আত্মীয়দের নামেও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে।

দুদকে জমা পড়া অভিযোগের বিবরণ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার থাকার সময় সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া কোটি কোটি টাকা মাসোহারা নিয়েছেন। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ অর্থ তিনি যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ব্যাংকে কিবরিয়া স্ত্রী ও ছেলের নামে কোটি টাকা জমা করেছেন। দেশে তার ভাই মুর্তজা ও ভাগ্নে খালেদের ব্যাংক হিসাবে রয়েছে শত শত কোটি টাকা। ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ যুক্তরাজ্যে পাচার করে সেখানে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেন। যুক্তরাজ্যে ছেলে পড়ালেখা করার সুযোগে সেখানে তিনি এসব অর্থ পাচার করেন। ম্যানচেস্টার শহরে তিনি দুটি বাড়ি করেছেন। সেখানকার বিভিন্ন ব্যাংকে স্ত্রী ও ছেলের নামে খোলা হিসাবে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। দুদকে জমা পড়া অভিযোগে বাড়ি দুটির ঠিকানা ও ছবিও দেওয়া হয়েছে।

শুধু বিদেশেই নয়, দেশেও কিবরিয়ার বিপুল অঙ্কের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে উল্লেখ করে সাখাওয়াত হোসেন তার অভিযোগে বলেছেন, গুলশানে নিজের বাড়ি করেছেন রাজস্ব কর্মকর্তা কিবরিয়া। এছাড়া রাজধানীর দুটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে।

জানা গেছে, দুদক গত ৬ আগস্ট সৈয়দ গোলাম কিবরিয়ার অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেয়। অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য শিগগিরই অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ করবে কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি কমিশন অনুসন্ধান করছে।’

বিদেশে টাকা পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া গতকাল শুক্রবার টেলিফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা পুরাটাই একটা ভুয়া অভিযোগ। এটা নিয়ে আমাকে আর বিরক্ত করবেন না প্লিজ। কোনো কিছু জানার থাকলে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমেনের সঙ্গে কথা বলেন।’

পরে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘উনি অনেক সিনিয়র মানুষ। আমাদের এখানে কর্মকর্তাদের নানা ধরনের গ্রুপিংয়ের কারণে এ ধরনের বহু অভিযোগ পরস্পরের বিরুদ্ধে জমা পড়ে। যার বেশিরভাগই ভুয়া ও অসত্য। এসব নিয়ে রিপোর্ট না করাই ভালো।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × one =