ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই চাঁদপুরের

0
290

ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা নেই চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে। কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা। চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে এখন চাঁদপুরের ইলিশ বলে যেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর অধিকাংশ লক্ষ্মীপুর, হাতিয়া, সন্দীপ, বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা। আবার অনেক ইলিশ মিয়ানমার থেকেও আসা।

চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর রূপালী ইলিশের আকাল চলছে। যার ফলে জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা চড়া দামে বিক্রি করছেন ইলিশ। এতে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরেই বলা চলে ইলিশের দাম।

আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের পুরো সময়টাই ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু সেই সময় পেরিয়ে এখন শুরু ভাদ্র মাস। এরপরও নদীতে ইলিশের দেখা নেই। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর বুক এখন প্রায় ইলিশশূন্য। যাও পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই সাগরের। সেই ইলিশের দামও সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ১ কেজি বা তার নিচের একটা ইলিশ মাছ ঘাটেই বিক্রি হচ্ছে হাজার থেকে ১২শ টাকায়। আর জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজি দামে। স্বাদ কাছাকাছি থাকায় দক্ষিণাঞ্চলের এসব ইলিশকেই চাঁদপুরের ইলিশ বলে স্থানীয় আড়তে বিক্রি করা হচ্ছে। এখন প্রতিদিন ১০-২০টি ট্রাকে করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে শত শত মণ ইলিশ এনে চাঁদপুরে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানকার ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরের ইলিশ চাঁদপুর বড়স্টেশন আড়তে এনে বিক্রি করা হয় ৮০০-১০০০ টাকা দরে।

ইলিশ ব্যবসায়ী আকবর আলী, মো. বিপ্লব ও সম্রাট হোসেন বলেন, এখন ইলিশের ভরা মৌসুম। কিন্তু বাজারে ইলিশের আমদানি নেই বললেই চলে। এই সময়টাতে অন্যান্য বছরে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার মণ ইলিশ আমদানি হতো। কিন্তু বর্তমানে ইলিশ আমদানি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ মণ। এর ফলে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কিছুটা। বর্তমানে হাতিয়া, সন্দীপ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর থেকে কিছু ইলিশ চাঁদপুরে আমদানি হচ্ছে। তবে যে পরিমাণ আমদানি হচ্ছে চাহিদা তার কয়েকগুণ বেশি রয়েছে। ভরা মৌসুমে ইলিশ আমদানি না হলে আমাদের অনেক লোকসান গুনতে হবে।

চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. শবেবরাত জানান, ইলিশের আমদানি কম, দামও বেশি। গত এক সপ্তাহ যাবত ঘাটে ইলিশ আমদানি দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। লোকাল নদীর মাছতো নেই বললেই চলে। ঈদের পর টানা কয়েকদিন গড়ে এক-দেড় হাজার মণ ইলিশ আমদানি ও সরবরাহ ছিল। এখন সরাদিনে ৫শ মণ ইলিশও আমদানি হচ্ছে না।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, সবার পক্ষে ইলিশ চেনা কঠিন। এর সমাধান পাওয়াও কঠিন। অন্য অঞ্চলের ইলিশ চাঁদপুরের ইলিশ বলে সবাই চালিয়ে দেয়। তবে এক্ষেত্রে চাঁদপুরের সুনাম রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক হয়ে কাজ করতে হবে। ক্রেতাদেরও যাচাই-বাছাই করে ইলিশ কিনতে হবে।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, নদীতে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার উপর ভিত্তি করে জোয়ার-ভাটায় প্রভাব পড়ে। ভরা পূর্ণিমা বা অমাবশ্যার সময়টাকে বলে ভরাকাতাল। আর ভরা পূর্ণিমা ও অমাবশ্যার মাঝামাঝি সময়টাকে বলে মরাকাতাল। মরাকাতালের সময়টাতে নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কম থাকে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মরাকাতাল চলছে। তাই মাছ কিছুটা কম পাচ্ছে জেলেরা। তবে আর কিছুদিন পরই ভরা পূর্ণিমাতে ইলিশে জেলেদের জাল ভরে উঠবে বলে আশা করেন তিনি। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুবোচর ও দূষণের ফলে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের মৌসুমেও জেলেরা তাদের কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পায় না বলে জানান তিনি।

নিয়ম মেনে নদী শাসন ও দূষণরোধ করতে পারলে চাঁদপুরেও কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাবে জেলেরা। বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × two =