প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও দেওয়ানী মামলা নয়, মামলা দায়ের করতে হবে প্রেস কাউন্সিলে, দাবী বিএফজেও এবং জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির।
গত ৮ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের হলরুমে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মহোদয়ের সাথে বাংলাদেশ ফেডারেশন অব জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন (বিএফজেও) এবং জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ “বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ট্রাইবুনালের ক্ষমতা ও কার্যপরিধি বৃদ্ধিকরণ” সংক্রান্ত বিষয়ে এক আলোচনা ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেস কাউন্সিলের মাননীয় চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের কল্যাণ ও উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের ভূমিকা ও অবদানের কথা বিশদভাবে বর্ণনা করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাংবাদিক হওয়ার নীতিমালা প্রনয়ন ও প্রকাশ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আমরা আমাদের বক্তব্যে মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয়কে জানাই যে, প্রেস কাউন্সিল আইন-১৯৭৪ প্রণীত হওয়ার পর এখন এই আইনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই নেই বল্লেই চলে। কেননা, যেসময় এই আইনটি প্রনীত হয়েছিল সেসময় সরকারি টেলিভিশন বিটিভি ছাড়া আর অন্য কোনো টেলিভিশন ছিল না। কিন্তু এখন ৬০ টিরও বেশি টেলিভিশন বাংলাদেশে রয়েছে। এছাড়াও অন লাইন টেলিভিশন ও পত্রিকাতো রয়েছেই। প্রিন্টিং এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কোনো সংবাদ প্রকাশিত এবং প্রচারিত হলে ক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রেস কাউন্সিলে বিচার চাইলে বিচারের পর অভিযোগ প্রমানিত হলে শুধু ভর্ৎসনা ও তিরস্কার করা ছাড়া আর কোন ক্ষমতাই প্রেস কাউন্সিলের নেই। অপরদিকে প্রিন্টিং ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কোনো সংবাদের কারণে কারো মানহানি ঘটলে সেই পত্রিকা বা টেলিভিশনের প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সারা দেশের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলোতে শত শত মামলা দায়ের করাসহ প্রতিটি জেলার দেওয়ানী আদালতে শত শত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করার বিধান রয়েছে, যা প্রেস কাউন্সিল আইন এবং একাধিক আদালতে মামলা দায়ের করা পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।
স্বাধীন সংবাদিকতায় এধরণের সাংঘর্ষিক বিষয়টি অবসানকল্পে প্রেস কাউন্সিল আইনে ট্রাইবুনালের ক্ষমতা ও পরিধি আরো বৃদ্ধি করাসহ সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত বা প্রচারিত সংবাদের কারণে ক্ষুব্ধ ব্যক্তি মানহানীর মামলা শুধুমাত্র বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলেই দায়ের করার বিধান প্রবর্তন করাসহ ফৌজদারি এবং দেওয়ানী আদালতে সংবাদ প্রকাশের পর মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন না মর্মে আইন সংশোধন ও কর্যকরের বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের কারণে মানহানীর মামলা দেশের সকল ফৌজদারি ও দেওয়ানী আদালতে দায়েরের অর্থই হচ্ছে সংবাদপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার কন্ঠরোধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সম্পূর্ণ পরিপহ্নী। দু’ঘন্টাব্যাপী আলোচনা ও মতবিনিময় সভাটি ফলপ্রসূ ও আশাপ্রদ হয়েছে বলে আমরা আশাবাদী।
বিএফজেও-এর চেয়ারম্যান এস এম মোরশেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত আজকের মতবিনিময় সভাটি সংবাদিকতার জগতে একটি মাইলফলক বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।