কাউন্সিলরের মদদে আরামবাগ ক্লাবপাড়ায় চাঁদাবাজি

0
562

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হকের প্রত্যক্ষ মদদে এ আর আবদুস সালাম ও তার সহযোগীরা আরামবাগ-ফকিরাপুলে ফ্রি স্টাইলে চাঁদাবাজি চালিয়ে আসছে। এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন প্রেস ও ব্যবসায়ীরা তাদের চাঁদাবাজির শিকার। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি শুরু করে। ভুক্তভোগী অনেক ব্যবসায়ী এ আর আবদুস সালামের হুমকির মুখে আতঙ্কে দিন কাটাতে থাকে। কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হকের কাছে বিচার চেয়েও না পেয়ে জীবনের ভয়ে চাঁদার টাকা পরিশোধ করে আসছিলেন অনেক ব্যবসায়ী।

এদিকে গত মঙ্গলবার আরামবাগ কালভার্ট রোডের ছাঁট ব্যবসায়ী মো. সালাম খানের দায়ের করা মামলায় এ আর আবদুস সালাম ও তার সহযোগী মো. খালেককে গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন করলেও আদালত তা নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠায়। মামলার অপর দু’আসামি সোহাগ ও নিজাম এখনো পলাতক রয়েছে।

জানা গেছে, চাহিদা মত কেউ চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে না পারলে প্রকাশ্যে মারধর করে থাকে সালাম ও তার গ্রুপের সদস্যরা। এদিকে গত ১৫ আক্টোবর আরামবাগ কালভার্ট রোডের পুরানো কাগজ ও ছাঁট ব্যবসায়ী মো. সালাম খান চাঁদাবাজ এ আর আবদুস সালামের দাবিকৃত মাসিক ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃত জানালে সালাম ও তার লোকজন ওই ব্যবসায়ীকে বেদম মারধর করে। প্রতিকার চেয়ে ছাঁট ব্যবসায়ী ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হকের কাছে নালিশ করলে কাউন্সিলর তা আমলে না নিলে, বাধ্য হয়ে ব্যবসায়ী সালাম খান মতিঝিল থানা পুলিশে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টির সত্যতা পাওয়ায় বাদী সালাম খানের অভিযোগটি আমলে নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর অভিযোগটি মামলা হিসেবে রুজু করে মতিঝিল থানা পুলিশ। মামলা নং-৩০।

সূত্র জানা যায়, আরামবাগ-ফকিরাপুলের ৯ নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হকের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই প্রকাশ্য চাঁদাবাজিতে লিপ্ত এ আর আবদুস সালাম গং। ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক গত ফেব্রুয়ারি ২০২০ এর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এলাকার বিতর্কিত ও বহিষ্কৃত কাউন্সিলর একেএম মোমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি এলাকার নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে ১০ নং ওয়ার্ডের এ আর আবদুস সালাম ও তার সহযোগীদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত সময় কাটান।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মো. সালাম খান (৩৭) ১১/১ নং আরামবাগের ঠিকানায় বিগত ১২ বছর যাবৎ প্রেসের বাতিল, ছেঁড়া-ফাঁটা ও টুকরো কাগজের ক্ষুদ্র ব্যবসা করে আসছেন। গত ১৫ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৫ টায় তিনি ১৯১ নং ফকিরাপুলস্থ (জমিদারবাড়ী) জাহাঙ্গীর প্রেস থেকে প্রতিদিনের মত ব্যবসার মালামাল ক্রয় করতে গেলে এ আর আবদুস সালামসহ তার সহযোগী মো. খালেক ও সোহাগ গং ‘সালাম’কে বলে ‘তুই এখান থেকে মাল কিনতে পারবিনা। আরামবাগ ও ফকিরাপুল এলাকায় ব্যবসা করতে পারবিনা। যদি ব্যবসা করিস তাহলে আমাদেরকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে।’ ভুক্তভোগী সালাম খান তাদের কথায় রাজী না হলে এবং প্রতিবাদ করলে ১২ থেকে ১৪ জন মিলে তাকে কিল ঘুষি এবং লাথি মেরে মারাত্মক জখম করে।

এ বিষয়ে মতিঝিল থানার অফিসার ইনচার্জ ভোরের পাতাকে বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।’ আর ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোজাম্মেল হক ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ যারা করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আবদুস সালাম ও মো. খালেককে ওসি সাহেব কথা বলার জন্য ফোন দিয়ে থানায় নিয়ে গ্রেফতার করেছেন। এই ছেলেগুলো খুবই ভালো মানুষ। কাজ করে ভাত খায়।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + 18 =