করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও আমাদের করণীয় শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

0
468

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যা সম্প্রতি সতর্ক করেছে যে, আগামী শীতে সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবারও বাড়তে পারে, যাকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলা হচ্ছে। এই সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ ও আমাদের করণীয় বিষয়ে আজ ২৪ অক্টোবর ২০২০, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দি হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে ‘করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। ওয়েবিনারে বক্তাগণ করোনাভাইরাসের চলমান প্রথম ঢেউ এবং সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় এবং শুধুমাত্র সরকারের একক পদক্ষেপ নয়; বরং এর সাথে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, বেসরকারি এনজিওসমূহ, কমিউনিটি লিডার, যুবসমাজ এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ব্যাপকভিত্তিক সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব তাজুল ইসলাম, মাননীয় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রনালয়। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। ওয়েবিনারটিতে অন্যান্যের মধ্যে জনাব প্রফেসর নজরুল ইসলাম, ডা: মুস্তাক হোসাইন, জনাব আব্দুল লতিফ মণ্ডল, জনাব ড. মোজাহেরুল হক, ডা: এমএইচ চৌধুরি লেলিন, ড. মুস্তফা মুজেরি, জনাব আবু নাসের বখতিয়ার আহম্মদ, জনাব মাহরুখ মহিউদ্দিন, জনাব আবুল কালাম আজাদ, প্রফেসর ড. এ.এইচ.এম. জেহাদুল করিম , জনাব আবু নাসের বখতিয়ার আহম্মদ, জনাব আবু জামিল ফয়সেল, জনাব মানিক মাহমুদ, ড. প্রণব পান্ডে, জনাব ফখরুল আহসান, জনাব মোর্শেদ চৌধুরী , জনাব রুহিন হোসেইন প্রিন্স, সহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে আগত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। ওয়েবিনারে দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে দেশের ১২৯টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০০ গ্রামে করোনা সহনীয় গ্রাম সৃষ্টি ও এর সফলতার হার নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেন জনাব জমিরুল ইসলাম।

প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে করোনার ১ম ঢেউ এখনো চলছে। সংক্রমণের হার ১৫ থেকে ১৮ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করছে। এটা আবার ২০ শতাংশের উপরে উঠতে শুরু করলে তখন ২য় ঢেউ আসার কথা বলা যাবে। করোনা শুরু হওয়ার পর এটা প্রথম শীতকাল। শীতের মধ্যে করোনা কেমন আচরণ করে সেটা আমরা এখনো জানি না। এজন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
ডা: এমএইচ চৌধুরি লেলিন বলেন, করোনার ১ম ঢেউ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ১ম ঢেউ মোকাবিলা করতে গিয়ে যেসব ভুল ত্র“টি হয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করতে হবে, যাতে পরবর্তীতে আর এই ভুলগুলো না হয়। আমরা দেখেছি ১ম ঢেউ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিবর্তে আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আমার অনুরোধ এই ধরনের ভুল যেন আমরা আর না করি।


ড. মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য কমিউনিটির স¤পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাঙ্গার প্রজেক্ট যেটা করছে সেটা একটা মডেল হতে পারে বলে আমি মনে করি। প্রতিটি ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্থানীয় গণ্যমান্য মানুষ সবাইকে স¤পৃক্ত করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাঙ্গার প্রজেক্ট কমিউনিটি স¤পৃক্তকরণের লক্ষ্যে একটি পদ্ধতি অনুসরণ করছে। আরেকটি পদ্ধতি হতে পারে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলা, পরবর্তীতে তারা তাদের অভিভাবকদের সচেতন করার ক্ষেত্রে ভ’মিকা রাখতে পারবে। কারণ অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কথা শোনেন।


মাননীয় মন্ত্রী জনাব তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা অতিমারী শুরু হওয়ার পর পৃথিবীর সব দেশকে নানান প্রতিক’লতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। আমাদের দেশও এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু আমারা আগে থেকে প্রস্তুত থাকার কারণে পূর্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছিল। এই লক্ষ্যে সরকার মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগও গ্রহণ করে। আর এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনেক বড় ভ’মিকাটি পালন করে। কারণ মানুষের কাছে পৌছাতে হলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অবশ্যই স¤পৃক্ত কর প্রয়োজন। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব ছিল না, কাজ করতে গিয়ে অনেক ভুল হয়েছে এটাও সত্যি। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছি। এখন করোনার ২য় ঢেউ নিয়ে বলা হচ্ছে, সরকার সতর্কতার সাথে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে। যখন যেটা করা দরকার সরকারের পক্ষ থেকে সেটা করা হবে।


আব্দুল লতিফ মণ্ডল বলেন, সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধি সবসময় ইউরোপ-আমেরিকার উদাহরণ দিতে শুনি, কিন্তু আমাদের পাশের দেশ – নেপাল, থাইল্যান্ড- যারা এই পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করেছে তাদের কথা বলতে কখনো শুনি না। করোনার ২য় ইউরোপ-আমেরিকাতে শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও আসতে পারে। যদি আসে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা আবার ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে আমি আশঙ্কা করছি।
মাহরুখ মহিউদ্দিন বলেন, এখনকার ক্রাইসিস শুধুমাত্র সরকারের মোকাবেলার বিষয় নয়। আরও অনেকদিন এই লড়াইয়ের মধ্যে থাকতে হবে, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর আরও চাপ আসবে। বিভিন্ন বিষয়ে সবার দ্বিমত থাকলেও সেগুলোকে একটি কন্সট্রাকটিভ জায়গায় এনে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।


আবু জামিল ফয়সেল বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপর জোর দিচ্ছেন। সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করার জন্য আমাদের যুব সমাজকে কাজে লাগানো যেতে পারে বলে আমি মনে করি।
ড. এ.এইচ.এম. জেহাদুল করিম বলেন, হাঙ্গার প্রজেক্ট যে সমাজের বিভিন্ন অংশীদারের মধ্যে সমন্বয় করে করোনা সহনশীল গ্রাম গড়ে তোলার হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগ দেখে আমি সত্যিই অবিভ’ত। এখন সরকারি বেসরকারি সকল সংগঠনকে একত্র করে জাতীয়ভাবে একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।


ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, করোনা অতিমারী আমাদের সাস্থ্যগত ঝুঁকির পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ঝুঁকিও তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের ২য় ঢেউ আমরা এখন লক্ষ্য করছি। ইউরোপ-আমেরিকাতে এই ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। আমাদের দেশেও একটা ২য় ঢেউ শুরু হওয়ার আশঙ্কা আছে। দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আমরা হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে দেশের ১২৯টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫০০ গ্রামে করোনা সহনীয় গ্রাম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। আমাদের স্বেচ্ছাব্রতীরা গ্রামে গ্রামে মানুষকে মাস্ক পরিধান করা, হাত ধোয়া ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। এছাড়া নিজের সামাজিক পুঁজি সংগ্রহের মাধ্যমে করোনার কারণে অস্বচ্ছল হয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। হাঙ্গার প্রজেক্টের এই উদ্যোগ এখনো চলমান রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 + three =