কুয়াকাটা সৈকতে ২০ কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি দখলের অভিযোগ

0
708

পটুয়াখালী প্রতিনিধি: অভিজাত আবাসিক হোটেল সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসের নিজস্ব বীচ নির্মাণে জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া সাড়ে তিন একর সরকারী সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে সিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধে। বর্তমান বাজার মুল্য অনুযায়ী দখলকৃত ওই জমির মুল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। কেটে ফেলা হয়েছে শতাধিক গাছ। জেলা প্রশাসকের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গত ২৭ অক্টোবর (শনিবার) সিকদার গ্রুপের কুয়াকাটায় নির্মাণাধীণ কনস্ট্রাকশন কাজে নিয়োজিত প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক বাঁশের লাঠি ও রড নিয়ে ফ্লিমি স্টাইলে মহড়া দিয়ে এ জমি দখলে নেয়।

লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিয়ে সরকারী জমি দখলের এমন দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী আতংকিত হয়ে পরে। মহিপুর থানার ওসির উপস্থিতিতেই এ দখল প্রক্রিয়া চলে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র দাবী করেন। তবে মহিপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ মনিরুজ্জামান তার উপস্থিতিতে জমি দখলের কথা অস্বীকার করে বলেন, জমি দখলের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এবিষয়ে কেউ তার কাছে অভিযোগও দাখিল করেননি।


দখলকৃত জমিতে প্রায় দুই শতাধিক নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে গত ১ সপ্তাহ ধরে রাতে ও দিনে বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ কাজ চালিয়ে আসলেও কলাপাড়া উপজেলা ভূমি কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না বলে জানান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জগতবন্ধু মন্ডল। ১বছর পুর্বে সদ্য দখলীয় জমির দক্ষিন পাশে সমুদ্রের কোল ঘেষে অবৈধভাবে দুইতলা একটি ভবণও নির্মাণ করেন সিকদার রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ। তবে সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাসা কর্তৃপক্ষ দাবী করেন দখলকৃত জমি তারা কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনির আহম্মেদ ভূইয়া এবং বাদশা মিয়াজী গংদের কাছ থেকে বায়না চুক্তি পত্রের দলিল মুলে ক্রয় করেছেন। শত শত নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে জমি দখলের মহড়া নিয়ে স্থানীয়রা কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। বিষয়টি এলকায় চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।


জানাগেছে, কুয়াকাটা পৌর এলাকার বেরীবাধেঁর বাহিরে ১২৭৮ নং খতিয়ানের ৫৪৩৭/৫৪৫৪ সহ ৬টি দাগে ৭৭কে/১৯৭২-৭৩ নং বন্ধোবস্ত কেসমূলে ৭৩ একর ভূমির মালিকানাদাবী করে আব্দুর রহমান মিয়াজী ও মনির আহম্মেদ ভূইয়া গং। এর বিপরীতে ভূমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবী করা হয় তৎকালীণ সময়ে মাত্র ৩ একর জমির বন্ধোবস্ত দেয়া হলেও আব্দুর রহমান মিয়াজী ও মনির আহম্মেদ ভূইয়া গংরা জাল জালিয়াতি কাগজ সৃস্টি করে ৩একরের স্থলে ৭৩ একর জমি বন্ধোবস্ত দেয়া হয়েছে দাবী করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্বকে বিবাদী করে পটুয়াখালী জেলা সাব জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং ৩৫/৭৫।

স্থানীয় ভূমি প্রশাসন আরও দাবী করেন ওই মামলাটি সরকারের পক্ষে রায় হয়। এবং জমি সরকারের প্রমানিত হয়। বাদী পক্ষ দাবী করেন ৪৫বছর ধরে সরকারের বিপক্ষে তারা মামলা চালিয়ে আসছেন। এ মামলায় বর্তমানে তাদের পক্ষে রায় হয়েছে। ভূলে সরকারের নামে বিএস জরিপ হয়েছে।
আব্দুর রহমান মিয়াজীর ছেলে শাহিন মিয়াজী বলেন, সিকদার গ্রুপ কোটি টাকার চুক্তিতে পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনির আহম্মেদ ভূইয়ার সাথে একটি চুক্তিপত্র দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে এই জমি সিকদার গ্রুপ দখলে নেয়। ওই জমিতে তার একটি ঘর ছিল। সিকদার গ্রুপের লাঠিয়াল বাহিনী ওই ঘর ভেঙ্গে ফেলে দেয়। শাহিন মিয়াজী আরও দাবী করেন পুলিশের উপস্থিতিতে কয়েকশত লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে মহড়া দেওয়ায় তারা সেখানে প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি।


এব্যাপারে সিকদার গ্রুপের ল্যান্ড বিষয়ক মুখপাত্র স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ শাহজাহান আকন জানান, অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট এন্ড ভিলাস’র নিজস্ব বীচ ও পার্ক নির্মাণ করার জন্য সাড়ে ৩একর জমি মনির আহম্মেদ ভূইয়া এবং বাদশা মিয়াজী গংদের কাছ থেকে চুক্তিপত্র দলিল মূলে ক্রয় করেছেন। তিনি দাবী করেন এর আগেও এই খতিয়ানের জমি কেনা বেচা হয়েছে। সিকদার গ্রুপও তেমনি ভাবে ক্রয় করেছেন। দলিল হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান আকন বলেন, ক্রয়কৃত জমির বিএস জরিপ সরকারের নামে থাকায় দলিল করতে পারেননি। বিএস জরিপ রেকর্ড ভাঙ্গার জন্য তারা সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। বিএস রেকর্ড ভাঙ্গার পরে সিকদার গ্রুপের নামে দলিল সম্পাদন করা হবে বলে জানান তিনি।


এবিষয়ে কথা বলতে কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মনির আহম্মেদ ভূইয়া এবং তার ছেলে সোহাগ ভূইয়ার সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে ফোন কেটে দেয়। পরে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ করেনি।


স্থানীয় মহিপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মোঃ আজিজুর রহমান বলেন,সরকারের ১নং খাস খতিয়ান ভূক্ত জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে ভবন সহ বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ করছে সিকদার গ্রুপ। দখলকৃত জমি জেলা প্রশাসকের নামে বিএস জরিপ রয়েছে। এনিয়ে তাদেরকে কয়েক দফায় নোটিশ করা হলেও কর্ণপাত করছে না সিকদার গ্রুপ কর্তৃপক্ষ। সরকারী সম্পত্তি দখলের বিষয়টি তিনি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। তিনি আরও দাবী করেন সিকদার গ্রুপ কয়েকশত লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে সরকারী সম্পত্তি দখল করে নেয়। দখল রোধে স্থানীয় ভূমি কর্তৃপক্ষ অসহায় বলে তিনি দাবী করেন।


এ বিষয় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, সরকারী জমি দখলের বিষয়ে তার জানা নেই। আপনার মাধ্যমে এই প্রথম জানলাম। তিনি বলেন,কলাপাড়া উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দিবেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five − 4 =