কালিয়াকৈরে স্কুলছাত্রীকে গলা কেটে হত্যার পর গুমের চেষ্টা

0
398

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চতুর্থ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে মঙ্গলবার রাতে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। উপজেলার সূত্রাপুর ইউনিয়নের উত্তর গজারিয়া এলাকার সাহেব আলীর কন্যা ৯ বছর বয়সী লিপুমনি লামিয়াকে হত্যার পর লাশ সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনার সঙ্গে বেঁধে পার্শ্ববর্তী খালের পানিতে ফেলে দেয়া হয়।পরে খোঁজাখুঁজির পর রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। খুনের অভিযোগে সাহেব আলীর ভাড়াটিয়া বগুড়ার সদরের ফুলবাড়ি উত্তরপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সুমন মিয়াকে (২৭) গ্রেফতার এবং তার স্ত্রী মিলি বেগমকে (২২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, লামিয়ার গলার স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, নূপুর ও হাতের আংটির লোভে তাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। বুধবার সকালে গাজীপুরের এসপি শামসুন্নাহার, অতিরিক্ত এসপি জহিরুল ইসলাম, গাজীপুরের পিবিআইর ওসি সফিকুল ইসলাম, কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জানা যায়, হতভাগ্য সাহেব আলী নিজের বাড়িতে স্ত্রী শামীমা বেগম, মেয়ে লিপুমনি লামিয়া ও ৩ ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। তিনটি কক্ষে নিজে থাকলেও বাকি ১৬-১৭টি কক্ষ ভাড়া দিয়েছেন।


৩ মাস আগে ২ মাসের অগ্রিম ভাড়া দিয়ে স্ত্রী ও দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে বাসায় ওঠে বগুড়া সদরের ফুলবাড়ি উত্তরপাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে সুমন মিয়া (২৭)। সুমন প্রথমে নিজেকে ভারতীয় জিরা ব্যবসায়ী পরিচয় দিলেও পরে দেখা যায় তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। জানা যায়, সাহেব আলী আরেকজনের কাছে ৬-৭ হাজার টাকা পেতেন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হলে ওই টাকার দায়িত্ব নেয় তার ভাড়াটিয়া সুমন মিয়া। পরে এ নিয়ে সাহেব আলীর সঙ্গে সুমনের বিরোধ চলছিল। সুমন খুনের কথা স্বীকার করলেও কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সে ব্যাপারে মুখ খোলেনি।


জানা যায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকেও লামিয়াকে তাদের একজন ভাড়াটিয়ার ঘরে দেখা যায়। রাত নেমে আসার পর লামিয়ার খোঁজ শুরু হয়। একপর্যায়ে খোঁজাখুঁজিতে স্থানীয়রাও যোগ দেন। তাকে কোথাও না পেয়ে রাতেই বাড়ির পাশে শিমুলতলী খালের পানিতে লামিয়ার খোঁজে নেমে পড়েন সবাই। এ সময় অন্যদের সঙ্গে ভাড়াটে সুমনও খালের পানিতে নেমে কৌশলে লাশের ওপর দাঁড়িয়ে অন্যদের দিকনির্দেশনা দিতে থাকে। সুমনের কোনো নড়াচড়া না দেখে সাহেব আলীর সন্দেহ হয়।


সাহেব আলী একপর্যায়ে সুমনকে ওই জায়গা থেকে সরিয়ে পানির নিচে হাত দিতেই মেয়ের গলাকাটা লাশ দেখতে পান। পরে সুমনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পুলিশ রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনার সঙ্গে বাঁধা লাশটি উদ্ধার করে। লামিয়ার শরীরে কোনো স্বর্ণালংকার পাওয়া যায়নি। শরীরে জামা থাকলেও পায়জামা ছিল না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


নিহতের মা শামীমা বেগম বিলাপ করে বলেন, তিন ছেলের পর শেষ বয়সে আমার একটা মেয়ে হয়েছিল। সে খুব আদরের ছিল। আমার সেই মেয়েকে ওরা খুন করে ফেলল। এ শোক আমি সইব কী করে? নিহতের ভাই সুমন মিয়া জানান, আমাদের সঙ্গে ৬-৭ হাজার পাওনা টাকা নিয়ে তার সঙ্গে কিছুটা ঝামেলা হয়েছিল। লামিয়াকে ওরা পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে জবাই করে খালের পানিতে ডুবিয়ে গুম করার চেষ্টা করেছে। ঘাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।


কালিয়াকৈর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করলেও ঠিক কী কারণে হত্যা করা হয়েছে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কাটা হয়েছে। গাজীপুরের এসপি শামসুন্নাহার জানান, হত্যার কারণ জানা যায়নি। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় সুমন নামের একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুমনের স্ত্রীকে আটক করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + 7 =