কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: বাবার কাঁধে সবচাইতে ভারী বস্তুর নাম সন্তানের লাশ। পশ্চিম দলিরাম, বানিয়াপাড়া, ইউপি গাড়াগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারীর দিনমজুর মো: জালাল উদ্দিনের কাঁধে অসহনীয় ভারী বস্তু সন্তানের লাশ দেখে স্ত্রী শিল্পী বেগম নির্বাক তাকিয়ে কাঁদছে। সেই ‘মা’ শিল্পী বেগমের চোখের পানির স্রোতে ভেসে যাচ্ছে প্রতিবেশী, গ্রাম ও সমাজ। সিফাতের নানী, মামা, দাদা-দাদী, চাচা-চাচী সহ অনেক প্রতিবেশীই তাঁর মায়ের চোখের পানির ¯্রােতের অনুকুলে ভেসে যাচ্ছে! কিন্তু কেউই নিজেদের সামলাতে পারছে না।
আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে সেখানকার পরিবেশ এখন প্রচন্ড আবেগ ঘন। এতো স্রোতের ধারায় ও নিবছে না যেন প্রতিবেশী লাভলী, তাঁর স্বামী জোনাব আলী ও ভাই বাদশা ডাউয়াদের প্রতিশোধের আগুণ। এমতাবস্থায়ও তাদের হুমকি-ধমকি বেড়েই চলছে। লাভলী ও তার স্বামী জোনাব আলী পালাতক থাকলেও বাদশা ডাউয়ার উগ্রতা প্রবল। তার খুটির জোর হচ্ছে সে গাড়াগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যানের অত্যন্ত স্নেহভাজন।
অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর ২০২০ শিল্পী বেগম ও প্রতিবেশী লাভলী বেগম একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে কোন এক বিষয় নিয়ে ঝগড়া ঝাটি হয়। সে কারণে উভয়ের মধ্যে ব্যাপক মনোমালিন্য হয়। অত:পর ৭ নভেম্বর ২০২০ শিল্পী প্রতিদিনের মত তাঁর এক মাত্র মেয়ে জান্নাতি (৯), বড় ছেলে জান্নাতুল (৭)ও ছোট ছেলে সিফাত (৫) কে বাসায় রেখে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে যায়।
অপর দিকে প্রতিবেশী লাভলী সেদিন কাজ করতে যায় নি। সেই সুযোগে লাভলী তাঁর বোনের মেয়ে আশাকে (৬) দিয়ে শিল্পীর ছোট ছেলে সিফাতকে লাভলীর বাড়িতে নিজ দোকানে নিয়ে যায়। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সেখানে ঐ সময় ছোট্ট বাচ্চা ঢাকায় অবস্থানরত রুনার মেয়ে আশা (৬), প্রতিবেশী বাদশা ডাউয়ার মেয়ে জেনি (৫), নাজিমুলের ছেলে শিমুল (৭) সহ আরো বেশ কয়েকজন উপস্তিত ছিল।
কিন্তু লাভলী শুধুমাত্র সিফাতকেই সঙ্গিারা খেতে দেয়। সিফাত লাভলীকে বলে ফুফি এটাতো তিতা লাগে। তখন লাভলী সিফাতকে বলে বাবা খাও তোমাকে ললিপপ ও আইসক্রিম দিচ্ছি। এসব খেয়ে একটু পরেই সিফাতের পেট ব্যাথা শুরু হলে সে দাদির কাছে আসতে আসতেই দুর্বল হয়ে পড়ে যায় এবং শ্বাস-কষ্ট শুরু হয়। শ্বাস-কষ্টের সমস্যা ভেবে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক সিফাতকে নেবুলাইজার দিয়ে গ্যাস দেওয়ার পরপরই সিফাতের নাক মুখ দিয়ে ফ্যানা চলে আসে এবং ঐ গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিল্পী অপরাধ বিচিত্রাকে জানায়, ভর্তি করে দুপুর ১২ হইতে রাত ৯ টা পর্যন্ত চিকিৎসার পর সিফাতের জ্ঞান ফিরলে শিল্পী তাঁর ছেলেকে জিজ্ঞাসা করে বাবা তুমি কী খেয়েছো? উত্তরে সিফাত বলে ‘মা’ লাভলী ফুফি আমাকে সঙ্গিারা, ললিপপ ও ঠান্ডা খেতে দিয়েছে। তারপর আমার পেট ব্যাথা করে। এভাবে ৫/৭ মিনিট আমার সাথে কথা বলার পর আমার সিফাত আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এর পর ৯ নভেম্বর ২০২০ রাত ১২ টার পর পর্যন্ত আর জ্ঞান ফেরেনি।
অর্থাৎ ৯ তারিখ রাত ১২ টার পর মানে ১০ নভেম্বর সিফাতের মৃত্যু হয়। পরদিন লাশের ময়না তদন্ত শেষে বিকাল তিন টার দিকে জালাল উদ্দিনের হাতে হস্তান্তর করা হয়। মেডিকেল কর্তৃক প্রদত্ত ডেড সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে শুধু আননোন পয়জনিং লেখা আছে। এ ব্যাপারে সিফাতের পরিবার থেকে অপরাধ বিচিত্রাকে জানানো হয় যে, ঐ সময় রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশ কর্তৃক একটি ইউটি মামলা হয়।
ময়না তদন্তের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত মামলার পরবর্তী পদক্ষেপ অপেক্ষমান থাকবে বলে কিশোরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আউয়াল অপরাধ বিচিত্রাকে জানায় (চলবে)।