‘আমরা রাস্তায় নামলে ভাস্কর্যবিরোধীদের অস্তিত্ব থাকবে না’

0
394

‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটানোর দুঃসাহস’ দেখাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাস্তায় নামলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্বকে যারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন, তাদের দুঃসাহস না দেখানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা সারা বাংলাদেশের ১০ লক্ষের অধিক সরকারি কর্মচারী একসাথে আছি। এই বার্তাটুকু দেয়ার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। এই দুঃসাহস যারা করবেন তাদের কালো হাত ভেঙে দেয়া হবে। আপনারা যারা সেই দুঃসাহস করছেন তাদের বলছি, আজ আপনারা আমাদের প্রতিবাদ মঞ্চে এনেছেন। আমাদের রাস্তায় নামাবেন না। রাস্তায় নামলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমাবেশে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘যদি আপনারা আর কখনো এই ধরনের দুঃসাহস দেখান আর কোনো প্রকার সুযোগ যদি আপনারা নেন; তাহলে আপনাদের অস্তিত্বকে বিলীন করে দেব। আমরা সরকারি কর্মচারীরা জানি, কীভাবে সে কাজটি করতে হয় এবং সেখানে আপনাদের ঘরে-বাইরে সবদিক দিয়ে আমরা বাধাগ্রস্ত করব।’

এ বি এম আজাদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর যে আঘাত, এ আঘাত শুধু আঘাত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এটি গভীর ষড়যন্ত্রের একটি নমুনা। এ ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানের যে পরাজিত শত্রু, যারা কখনোই সেই পরাজয় মেনে নিতে পারছে না। তাদের সে আচরণটি সময়ে সময়ে বেরিয়ে আসে। সেই আচরণের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে জাতির পিতার নির্মীয়মান ভাস্কর্যের ওপর আঘাত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি এটি নিয়ে প্রতিবাদ না করি, আমরা যদি এটি নিয়ে প্রতিবাদ না করি। তাহলে এই পরাজিত শক্তি আরও বড় ধরনের অপকর্ম করার সুযোগ পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে, আমরা যখন ২০৪১ সালে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রস্তুতি শেষ করছি, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা যখন আলাদা একটি জাতি হিসেবে মাথাউঁচু করে দাঁড়াচ্ছি। আমাদের উন্নয়নের ধারাক্রম যেভাবে এগুচ্ছে, সেটিকে বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবার পেছন দিকে ঠেলে দিয়ে একটি ব্যর্থরাষ্ট্রে রূপান্তরের যে ষড়যন্ত্র; মূলত সেই ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করার জন্য আমরা এখানে এসেছি।’

চট্টগ্রাম বিভাগের শীর্ষ এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আজ এখানে আমরা যারা সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত আছি- আমাদের সচেতন থাকতে হবে, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমরা শুধু একটি মেসেজ দেয়ার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি। এই যে পরাজিত শত্রু, স্বাধীনতাবিরোধী শত্রু, বাংলাদেশের অস্তিত্ব যারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের সে দুঃসাহস না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সভাপত্বি সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সদস্য জাফর আলম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাসান শাহরিয়ার কবির, জেলা দায়রা জজ মো. ইমাইল হোসেন, শেখ আসফাকুর রহমান, বিসিএস উইমেন নেটওয়ার্কের সদস্য ও চা বোর্ড কর্মকর্তা নাজনিন কবির, এলজিইডি কর্মকর্তা আশিস কুমার বড়ুয়া, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন, বাংলাদেশ আনসারের জেলা কমান্ড্যান্ট বিকাশ চন্দ্র দাশ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী সবুক্তগীন সামশুল আলম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওমপ্রকাশ নন্দী, বিসিএস কৃষিবিদ ক্যাডারদের পক্ষে মো. আখতারুজ্জামান ও জেলা খাদ্য কর্মকর্তা আবু নাঈম প্রমুখ।

এর আগে সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও র্যালি করেছেন চট্টগ্রামের ১০০ বিচারক। সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের দামপাড়া এলাকায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি প্রতিবাদ র্যালি দামপাড়া থেকে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 − three =