ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি চক্র কাজ করতো তিন ধাপে : ৭ সদস‌্য গ্রেপ্তার

0
863

আরিফুল ইসলাম ঢাকা: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াতি করার অভিযোগে সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের খুঁজে বের করা সহ তিনটি ধাপে কাজ করতো জালিয়াতি চক্রের এই সদস‌্যরা।

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সিআইডি সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিআইডি’র সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার হওয়া সাতজন হলেন, রকিবুল হাসান(২৫), রাশেদুজ্জামান সজীব (৩৬), হাছান মাহমুদ (২২), মানিক কুমার প্রামাণিক (৩৮), মো. শফিকুল ইসলাম (৩০), শ্রী রিপন কুমার (২৬), নাফিউল ইসলাম ওরফে তাহসিন (১৮)।

কামরুল আহসান জানান, ‘পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের এই সদস‌্যরা তিন ধাপে কাজ করতো। প্রথমে তারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের খুঁজে বের করতো। দ্বিতীয়ত, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সমাধান এর জন্য মেধাবী ছাত্র খুঁজে বের করতো। আর তৃতীয়ত, যে কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী থাকবে সে কেন্দ্রকে আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতো।’

তিনি জানান, জালিয়াত চক্রটি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি এবং চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার অনেক আগে থেকেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করত। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে তারা পরীক্ষার প্রশ্ন ডিজিটাল ডিভাইস এর সহায়তায় পরীক্ষার কেন্দ্র হতে বাইরে বের এনে দ্রুত তা সমাধান করে পাঠাত। জালিয়াত চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা যায়।

কামরুল আহসান আরো জানান,২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে নাফিউল ইসলাম ওরফে তাহসিন (১৮) নামে এক শিক্ষার্থীকে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ কেন্দ্র থেকে আটক করা হয়। তার মোবাইল ফোনে পাওয়া যায় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান। ওই ঘটনায় ঢাবি’র প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বাদী হয়ে ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ (সংশোধনী/২০১৩) এর ৫৭(২) এবং পাবলিক পরীক্ষা সমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৯(খ)/৯(গ) ধারায় তেজগাঁও থানায় মামলা( মামলা নম্বর ৭৯) দায়ের করেছিলেন।

কামরুল আহসান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়ের করা মামলার তদন্তে জালিয়াতি চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। চক্রটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করে আসছিল এমন তথ্য তদন্তে বেরিয়ে আসে। গত ২২ ডিসেম্বর আনুমানিক রাত ১০টার দিকে মালিবাগ এলাকা থেকে জালিয়াতি চক্রের দুই সদস্য হাসান মাহমুদ (২২) ও রাশেদুজ্জামান সজীবকে (৩৬) গ্রেপ্তার করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষায় জালিয়াতির অপরাধ স্বীকার করে রাশেদুজ্জামান সজীব আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে সজীব জানিয়েছেন, তিনি সাইফুরস্ কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জালিয়াতি চক্রে তার কাজ ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার ইংরেজি অংশের সমাধান করা। ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তারা কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতেন এবং চুক্তি অনুযায়ী পরীক্ষার্থীর কাছে সঠিক উত্তর পৌঁছে দিতেন। শান্তর মাধ্যমে তিনি এই চক্রে যুক্ত হয়েছিলেন।

গত ২৭ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মতিঝিল থেকে শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ ডিসেম্বর মানিক কুমার প্রামানিক এবং তার সহযোগী মো. সফিকুল ইসলাম ও শ্রী রিপন কুমারকে রাজশাহীর মোহনপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানিক কুমার প্রামানিক শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে চুক্তি এবং লেনদেন সংক্রান্ত কাজ করতেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 2 =