সুলতান মাহমুদঃ জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে জরাজীর্ণ ভাঙ্গা টিনের চালায় তিন মেয়েকে নিয়ে কাটছে ফাতেমার জীবন। ফাতেমার ভাষ্য-“মোর আড়াই শতক ভুই (জমি)। ভাল একনা ঘর নাই। একনা ভাঙ্গা টিনের চালা। ওকনা চালায় তিনকোনা মেয়ে নিয়া থাকোং । আইতে ঘুমির পাং না, বৃষ্টির দিনোত চালা দিয়া পানি পড়ে। ঘরের কাঁথা-বালিশ সোগ(সব) ভিজি যায়। শীতের দিনোত বাতাস ঢোকে ঘরের ভেতরোত। স্বামী মরছে দেড় বছর হয় বিধবা ভাতার কার্ড ও পাং নাই। মুই তো মোর কষ্টের কতা(কথা) চেয়ারম্যান-মেম্বারের কতবার কছুং৷ কাও মোর ভাতা করি দেয় নাই৷ মুই সরকার থেকে যদি একনা ঘর পানুং হয় তাইলে বাকি জীবনটা একনা ভালো করে কাটানুং হয়”।
এভাবেই নিজের কষ্টের কথাগুলো প্রকাশ করেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ফাতেমা (৩৭) নামের এক বিধবা নারী। সে ঐ উপজেলার ৪ নং দলগ্রাম ইউনিয়নের দক্ষিণ দলগ্রাম (হাজীপাড়া) এলাকার ৬ নং ওয়ার্ডের মৃত্যু সামছুল হকের স্ত্রী। প্রায় দশ বছর ধরে দারিদ্র্যের কষাঘাতে দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে। একটি জরাজীর্ণ ভাঙ্গা টিনের চালায় বাস করে অথচ সরকারী একটি ঘরের সহায়তায় এগিয়ে আসেনি কেউ। দেড় বছর ধরে স্বামী হারা হলেও এখন পর্যন্ত ঐ নারীর ভাগ্যে জোটেনি বিধবা ভাতা, ভিজিডি কার্ড কিংবা মাথা গোঁজার মতো একটি সরকারী ঘর। তিন মেয়েকে নিয়ে ভাঙ্গা একটি টিনের চালায় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পোহাতে হয় তার।
জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকতে সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাতে একটু ভালভাবে ঘুমাবে, তারও তিন মেয়েকে নেই তার শান্তি। কারণ বৃষ্টি হলেই পানিতে ভরে যায় তার বিছানা পত্র। তবুও জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার তাগিদে জরাজীর্ণ ভাঙ্গা টিনের চালায় রাতভর ছটফট করে তিন সন্তানকে নিয়ে থাকতে হয় ফাতেমাকে। মুজিব বর্ষে সরকারি একটি ঘর পাওয়ার আকুতি জানায় ওই বিধবা নারী। শনিবার (৯ জানুয়ারী ) সকালে বিধবা ফাতেমা বেগমের সন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি টিনের ভাঙ্গা একটি চালায় তিন কন্যা সন্তানকে নিয়ে খুব কষ্টে বসবাস করছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে তার স্বামী তিন কন্যা সন্তানকে রেখে চলে গেছে না ফেরার দেশে । সহায় সম্বল বলতে কিছু নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর ৪০ দিনের মাটিকাটা কাজ করে তিন মেয়েকে নিয়ে ভাঙা একটি টিনের চালায় খুব কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে ফাতেমা বেগম। টিনের চালাটি ঝড়-বৃষ্টির দিনে যে কোন সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা। আশ্রয়স্থল যদি ঠিক না থাকে তাহলে দিনরাত পার করা খুব মুসকিল। জীবন-যাপন করার জন্য মোটামুটি ভালো আশ্রয়স্থলের একটি ঘর তার খুব প্রয়োজন। স্থানীয়দের প্রশ্ন এতদিনে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘরগুলো আসলে পাচ্ছে কারা?
ঐ বিধবা নারী ও তার সন্তানদের মাথা গোজার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা। এব্যাপারে প্রতিবেদক কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তার মুঠো ফোনে কল করলে তিনি কল ধরেননি। এব্যাপারে প্রতিবেদক জেলা প্রশাসককে তার মুঠো ফোনে কল করলে তিনি বলেন, আমরাতো তার জমিতে ঘর করে দিতে পারবো না, সরকার যেখানে ঘর তৈরি করে দিচ্ছে সেখানে তারা যাবে না, আমরা ঘর দেয়ার জন্য লোক পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, উপজেলায় যোগাযোগ করতে বলেন, ওখানে কমিটি করে সবকিছু করা হচ্ছে। আশা করি অসহায় হলে ঘর পেয়ে যাবে।