ঝিনাইদহে ছাই কারখানায় ভয়াবহ আগুন, ফায়ারম্যান আহত

0
520

ঝিনাইদহের অনিন্তা নগর গ্রামে তাজী এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ ছাই কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ, মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

এদিকে আগুন নেভাতে গিয়ে ঝিনাইদহ ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান মহব্বত আলী আহত হয়েছেন। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শামীমুল ইসলাম জানান, আগুন লাগার পর কয়েকটি টিম নেভানোর কাজ করছে। এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। কখন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে তা-ও বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, এই কারখানার ভেতর নতুন আরও একটি গোডাউন তৈরির কাজ চলছিল। সেসময় ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে ক্ষক্ষতির মাত্রা আগুন নির্বাপণ শেষ না করে বলা যাবে না।

‘এই কারখানার ফায়ার লাইসেন্স ছিল কি-না, তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, কারখানার পাটকাঠির সঙ্গে দাহ্য কোনো রাসায়নিক মেশানো থাকতে পারে। কেননা ছাইতে পানি দিলেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে’, বলেন ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক শামীমুল ইসলাম।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাই বলেন, ‘আমরা বারবার এই কারখানা বন্ধের কথা বলেছি, সবাই মিলে বাধা দিয়েছি। কিন্তু প্রভাবশালীদের দ্বারা, প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় তারা এ গুলো চালিয়ে যাচ্ছেন।’

অপর বাসিন্দা ছবিতা খাতুন বলেন, ‘এখানে পাটকাঠি পুড়িয়ে ছাই তৈরি করেন চীনা নাগরিক ও কিছু বাংলাদেশি। পরে এগুলো বস্তাবন্দি করে জাহাজযোগে চীনে পাঠিয়ে দেয়া হতো। প্রায় ১০ বছর কারখানাটি চলছে। মাঝে মাঝেই আগুন লাগে, ব্যাপক ক্ষতি হয় কিন্তু প্রশাসনের নজরে আসে না। আমাদের ক্ষতি হতেই থাকে।’

তিনি আরও জানান, যখন পাটকাঠিতে আগুন দিয়ে ছাই তৈরি করা হয় তখন পুরো এলাকাটা কালো ধোঁয়াই ছেয়ে যায়। এতে শিশুদের হাঁপানিসহ সব বয়সের মানুষ নানা সমস্যায় পড়ে।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক নাসিমুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ ধরনের কারখানাগুলো জনবসতি স্থানে কখনোই করা উচিত না। গ্রামের মাঝে কারখানাটি কিভাবে গড়ে উঠেছে প্রশাসন কি এটা দেখে না?’

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. লিমন পারভেজ জানান, আহত ফায়ারম্যানের মুখমণ্ডল আগুনের তাপে ফুলে গেছে। এখনই বলা যাচ্ছে না অবস্থা আশঙ্কাজনক কি-না।

কারখানাটির চীনা নাগরিকদের সঙ্গে মালিকানায় থাকা নাজমুলের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কিছু না বলে ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করেন।

এর আগে ২০১৫ সালের শেষের দিকে কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ডে এক চীনা নাগরিকসহ গুরুতর দগ্ধ হন চারজন। সেসময় দুদিন চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পরিবেশের ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্স না থাকা ও ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় কারখানাটি স্থায়ী বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারো সেটি চালু করে কাজ করে আসছিল। তার আগে ২০১৫ সালের প্রথম দিকে আবারো আগুনের ঘটনা ঘটেছিল।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − 2 =