জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা

0
463

জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম-এর উদ্যোগে আজ রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১ সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে  অনলাইন আলোচনাসভা ও সম্মাননা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান জনাব নাছিমা বেগম এনডিসি। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডা. ছামিল উদ্দীন শিমুল এমপি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসন এবং সদস্য, পার্লামেন্টারিয়ান ককাস অন চাইল্ড রাইটস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এবং আদিবা আঞ্জুম মিতা এমপি, সদস্য, পার্লামেন্টারিয়ান ককাস অন চাইল্ড রাইটস। সভাপতিত্ব করেন জনাব ড. বদিউল আলম মজুমদার, গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাবেয়া বেগম, সহ-স¤পাদক, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এবং নির্বাহী পরিচালক, শরীয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন নাছিমা আক্তার জলি, স¤পাদক, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম;  ওয়াহিদা বানু, কার্যনির্বাহী সদস্য, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম এবং নির্বাহী পরিচালক, অপরাজেয় বাংলাদেশ; বিথীকা হাসান জেন্ডার এক্সপার্ট, হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রাম, ইউএনডিপি, অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম, নির্বাহী পরিচালক, টিএমএসএস প্রমুখ।   নাছিমা বেগম এনডিসি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন যেমন বেড়েছে, তেমনি সহিংসতাও বেড়েছে। সহিংসতা এখন পৈচাশিক পর্যায়ে চলে গেছে।

কন্যাশিশু কারো কাছেই যদি নিরাপদ না হয়, তাহলে আমরা যাব কোথায়! তবে এখন কন্যাশিশুদের প্রতি যে অবিচারটি বিশেষভাবে লক্ষণীয় সেটা হলো অবিচার বাল্যবিবাহ। করোনার জন্য অনেকের আয় কমে গিয়েছে, যার জন্য অনেক অভিভাবক ভেবেছেন যে, মেয়েটার  বিয়ে দিলে একটা মুখ কমে যায়। বাল্যবিবাহ বেড়ে যাওয়ার এটা একটা কারণ। আমাদের এই জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে। 

ডা. ছামিল উদ্দীন শিমুল এমপি বলেন, করোনাকালে বাল্যবিয়ে আমাদের একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন এলাকাতে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন নারীনেত্রীরা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কাজ করার ফলে এখন বাল্যবিয়ের হার কমে এসেছে। এর থেকে বুঝা যায় যে, করোনাকালে নারী নেতৃত্ব অনেক ভালো ভ‚মিকা রেখেছে। আদিবা আঞ্জুম মিতা এমপি বলেন, আমরা এখনো অনেক ক্ষেত্রে  দীর্ঘদিন ধরে চলমান কিছু নিয়ম থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না।

আমরা মেয়েরাও অনেক সময় মেয়েদের শত্র“ হয়ে যাই।  নারীদেরকে একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে তবেই আমরা আরো এগিয়ে যেতে পারব।  হোসনে আরা বেগম বলেন,  নারীদের এগিয়ে চলার পথে যেসব পুরুষ সহযোগিতা করেছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই।

নারীর প্রতি তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে অনেক নারী এগিয়ে যাচ্ছে।  রাবেয়া বেগম বলেন, কন্যাশিশুদের অধিকার রক্ষার্থে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম সারাবছর বিভিন্ন কার্যক্রম করে থাকে। এক্ষেত্রে সরকারের সযোগিতা নিয়ে বর্তমানে নারীরা শিক্ষায়, পেশায় এগিয়ে এসেছে এবং নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, এতকিছুর পরেও তাদের চলার পথ নিরাপদ হচ্ছে না। চলার পথে নারীদের নানা বাধা পার হতে হয়। এসব বাধা অনেককে নিস্তেজ করে দেয়। এটা নিয়ে আমাদের ভাবা দরকার।

যারা সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আছেন  তাঁদের কাছে অনুরোধ, তারা বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। নারীরা যখন আর কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে না তখন আর সমস্যা থাকবে না। নারীরা দেশ এবং জাতিকে আরো অনেক কিছু দিতে পারবে। ওয়াহিদা বানু বলেন, মানুষের বেড়ে ওঠার অর্থাৎ আমাদের সামজিকীকরণ প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

যদিও এসব ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অর্জন থাকলেও সহিংসতা এসব অর্জনকে মলিন করে দিয়েছে। নারী পুরুষ সবাই সবাইকে মর্যাদা দিবে একে অপরের প্রতি সহনশীল হবে, তাহলে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে ওঠবে।   বিথিকা হাসান বলেন, দুটো কারণে এবারের নারী দিবস ¯েপশাল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন আরেকটা হচ্ছে কোভিড পরিস্থিতি।

আশা করছি এমন একটি সময়ে এবারের নারী দিবস আমাদের জন্য বিশেষ কিছু বয়ে আনবে। প্রত্যেকটি মানুষ অপার সম্ভবনা নিয়ে জন্মায়। তাদেরকে উপযোগী পরিবেশ দিতে পারলে মানুষের সম্ভাবনা বিকাশ লাভ করতে পারে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, ছেলে শিশুদের এর সঙ্গে যুক্ত করতে না পারলে গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না।      

অনুষ্ঠানে দুই জন নারীকে তাঁদের অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত দুজন হলেন বীরাঙ্গনা কানন গোমেজ এবং তরুণ নারী সাংবাদিক জনাব রাবেয়া আক্তার সুবর্ণা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 1 =