দিনে প্রাণচঞ্চল বস্তিটি রাতের আগুনে পুড়ে ছাই

0
377

রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে খানিকটা সামনে গেলেই গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার হাজী মাজার বস্তি। প্রায় ১০ হাজার বাসিন্দাদের আবাসস্থল গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্তও ছিল প্রাণচঞ্চল। কিন্তু মধ্যরাতের অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে পুরো বস্তি।

শুক্রবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে বস্তির একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আজ শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাতের আঁধার পেরিয়ে আজ সকাল হতেই সেখানে হাহাকার। পুরো বস্তি পুড়ে ছাই। বাসিন্দারা ঘরছাড়া। নেই খাবারদাবার, এমনকি বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

আজ সকাল দশটার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, আগুনে পুড়ে বস্তিটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যেখানে–সেখানে পড়ে আছে টিন, কাঠ, ঘরের চালাসহ নানান আসবাব। কোনো রকম জীবন নিয়ে ফেরা বস্তিবাসীরা ধ্বংসস্তূপের পাশে বসেই বিলাপ করছেন।

ফ্রজিনা বেগম তাঁর মেয়ে জুয়েনাকে নিয়ে বস্তির ২ নম্বর গলির একটি ঘরে থাকতেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল রাতে মা-মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মধ্য রাতে মানুষজনের চিৎকারে ঘুম ভাঙলে দেখতে পান, ঘরের সামনেই আগুন। পরনে যা ছিল, তা নিয়েই কোনোরকমে জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। এরপর পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ফ্রজিনা বলেন, ‘আমার সব শেষ। আমি গরিব মানুষ, আমি এহন মেয়েডারে নিয়া কই যামু! আল্লাহ এত বড় বিপদ আমারে দিলো!’

বস্তির আরেক বাসিন্দা মো. আক্কেল আলী বলেন, গতকাল রাতেই সবকিছু ঠিক ছিল। আর আজ সকাল হতেই সব শেষ। এখন কারও থাকার ঘর নাই। জামাকাপড় নাই। এমনকি একটু পানিও নাই।

আগুনে বাড়ি পুড়ে যাওয়ায় অসহায় হয়ে বসে আছেন এক নারী

টঙ্গী ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আগুন লাগার পরপরই টঙ্গী, উত্তরা, কুর্মিটোলা ও পূর্বাচলের নয়টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেছিল। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চারদিক থেকেই আগুনকে ঘিরে ফেলেছিলেন। তাই দ্রুতই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনো আগুনের কারণ বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় কোনো হতাহতও নেই।

স্থানীয় কাউন্সিলর মো. গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ওই বস্তিতে প্রায় এক হাজার ঘর ছিল। সেখানে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ থাকতেন। চোখের পলকেই সব পুড়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের খাবারসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছি।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 + 13 =