কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় থেকে ছুটি না নিয়ে কক্সবাজার আনন্দ ভ্রমনে যাওয়ায় গত সোমবার থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে কুয়াকাটা পৌরসভা। এতে পৌরসভা কার্যালয়ে নাগরিক সেবা নিতে আসা মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। পৌর ভবন পাহারায় রয়েছেন অবৈতনিক এক নাগরিক। পৌরসভার পিয়ন থেকে শুরু করে কর্মকর্তা কর্মচারী কাউকেই পাওয়া পৌর ভবনে। মেয়র অনুসারী ঠিকাদারদের অর্থায়নে পৌর পরিষদের ১ সপ্তাহের এ আনন্দ ভ্রমন নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে কুয়াকাটা পৌরসভার নাগরিকদের মধ্যে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের কাছ থেকে কোন ধরনের অনুমতি কিংবা ছুটি না নিয়ে শুধু মাত্র পৌর পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে গত ৩০ নভেম্বর থেকে পৌরসভা কার্যালয় তালাবদ্ধ রেখে পৌর মেয়র ও কাউন্সিলররা পৌরসভার ষ্টাফদের নিয়ে কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, হিমছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, সেন্টমার্টিন ভ্রমনে যান। এ সফরে মেয়রের সাথে রয়েছেন তার স্ত্রী, মেয়ে, ২ ছেলে, ২ নাতি, মেয়রের মালিকানাধীন হোটেলের ম্যানেজার, গাড়ীর ড্রাইভার সহ পৌর নির্বাচনে অর্থায়ন করা ক’জন ঠিকাদার ও শুভাকাঙ্খী। অসুস্থতা জনিত কারণে ভ্রমণে যাননি ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ ফজলুল হক খান এবং ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাবের হোসেন।পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নাগরিক মো: জাহিদুল ইসলাম (৩৮) বলেন, ’গত মঙ্গলবার পৌরসভায় গিয়ে দেখি অফিস তালা বদ্ধ। মেয়র, কাউন্সিলররা কক্সবাজার ভ্রমনে গেছে। এতে আমি আমার ৪ বছরের মেয়ে নাদিয়া ও ৪ মাস বয়সের মেয়ে তাকিয়া’র জন্ম নিবন্ধন নিতে পারিনি।’ ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিক মো: নুরজামাল (৩৭) বলেন, ’ বুধবার পরিচয় পত্র নিতে এসে দেখি পৌরসভার প্রধান ফটকের বাহির ও ভেতর থেকে তালাবদ্ধ। কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাই। সবাই ভ্রমনে গেছে।’ ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অপর নাগরিক মো: আলাউদ্দিন (৪৫) বলেন, ’আমার মেয়ে তানিয়া (১৭) ও সোনিয়া (১৪)’র জন্ম নিবন্ধন করা হয়নি। বৃহস্পতিবার পৌরসভা কার্যালয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে এসে দেখি পৌরসভা ভবনের গেটে তালা। মেয়র, কাউন্সিলর কেউ নেই।’
পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সুপারভাইজার মো: ইউসুফ (৪৫) জানান, ’কাউন্সিলর সাবের আকন, ফজলুল হক খান ও বড় ইঞ্জিনিয়ার স্যার ছাড়া পৌরসভার সবাই কক্সবাজার গেছে। তাই অফিস বন্ধ।’ পৌরসভার সচিব কাব্যলাল চক্রবর্ত্তী বলেন, ’পৌর পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা কক্সবাজার গেছেন। কাব্যলাল’র দাবী গত তিন অফিস নিয়মিত খোলা ছিল। তিনি অফিস করেছেন কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা বলেন, ’মেয়র একদিনের জন্য কোথাও গেলে প্যানেল ১, ২ অথবা ৩ কে দায়িত্ব দিয়ে যেতে হয়। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিতে হয়।’ বারেক মোল্লা আরও বলেন,’ এভাবে সব কাউন্সিলর, ষ্টাফ নিয়ে বিনোদন ভ্রমনে যাওয়া ইতিহাস ব্রেক। শুধু একজন সুইপার আছে যে গত ৩ দিনে একদিন ভোরে মাত্র একবার অফিসের তালা খুলেছিল। কিছুক্ষন পর আবার তালা বন্ধ করে চলে যায় কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ’মন্ত্রনালয় থেকে অনুমতি কিংবা যৌক্তিক কারন ছাড়া পৌরসভা তালাবদ্ধ রাখার কোন সুযোগ নেই।কলাপাড়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, এটা তো অসম্ভব। অফিস এভাবে তিন দিন বন্ধ থাকতে পারে না।স্থানীয় সরকার, পটুয়াখালী’র উপপরিচালক মো:হুমায়ুন কবির বলেন, কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র কাউন্সিলররা অফিস বন্ধ রেখে এভাবে যেতে পারে না। খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।কুয়াকাটা পৌরসভার ঠিকাদার মো: মামুন বলেন, আমার শরীর ভাল না থাকায় আমি যাইনি। মেয়র আমার কাছে টাকা চেয়েছিল আমি দেইনি। তবে কাউন্সিলর আবুল ফরাজীকে আমি ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। তাঁর দাবী এটি তাঁর কাছে সে পেত।কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো: আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ’আমার পরিষদ খোলা আছে। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফজলুল হক খান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আকনকে দায়িত্ব দিয়ে এসেছি। আমার পরিষদ খোলা আছে। ইঞ্জিনিয়ার সাহেব, সচিব সাহেব আছেন। এছাড়া ডিসি মহোদয় বরাবর লিখিত আবেদন করে এবং ফোনে মৌখিক ভাবে অনুমতি নিয়ে আমরা ভ্রমনে এসেছি। ###