কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। শুক্রবার ও ( ৪ ফেব্রুয়ারী) কর্মবিরতি অব্যাহত রেখেছে তারা। গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। দফায় দফায় সংকটের মুখ থেকে ফিরে সেবার ধরন বদলানো হলেও এখনো কমেনি দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের দুর্ভোগ কমছে না। রয়েছে শয্যার সংকটও। শয্যার চেয়ে অধিক রোগী আসলেই হাসপাতালের ফ্লোরে রোগীদের স্থান দিতেও দেখা গেছে। গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের
বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক, মেডিকেল অফিসার ও অসহায় রোগীদের যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলেন ছয় নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ভুক্তভোগীদের বেতন-ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ নারী ইন্টার্ন চিকিসকদের। যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে সকাল থেকে কোনো ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা তাদের কাজে যোগ দেননি। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা হয়ে পড়েছে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা হাসপাতালের রোগিরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে ঘটনা নিরসনে অভিযুক্ত ডাক্তারকে বদলি করা হয়েছে।
কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মীর ম.ম. বিল্লাহ তকী জানান, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ তুলেন ৬ নারী ইনটার্ন চিকিৎসক।অভিযোগের ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের বেতন ভাতা কেটে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমন একটি পত্র বুধবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এরই প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ শাখার সদস্যরা। ফলে সকাল থেকে কোন ওয়ার্ডে ইন্টার্নরা তাদের কাজে যোগ দেয়নি। তবে জরুরী বিভাগের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল।
হাসপাতাল তত্বাবধায়ক বরাবরে দেয়া অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৬ নভেম্বর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীসহ অশালীন আচরণের কারণে অভিযোগ করেন ইন্টার্নরা। কিন্তু সে অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে প্রহসনমূলকভাবে তাদের এক্সটেনশন ও বেতন ভাতা তিন মাসের কেটে রাখার আদেশ জারি করে। এর প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে ইন্টার্নরা। যা এখনো চলছে। কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ২৬ নভেম্বরের অভিযোগ আমলে না নিয়ে উল্টো ইন্টার্নদের উপর চাপিয়ে দিয়ে ৬ ইন্টার্নের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ। যা প্রহসনমূলক ভাবে করা হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসক শুধু নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক নয় রোগীর স্বজনদের সঙ্গেও এমন আচরণ করেন। যা লিখিত আকারে দিয়েও কোন নেয়া হয়নি।
তিনি আরও জানান, ৬ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারিকৃত আদেশ প্রত্যাহার ও অভিযুক্ত গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এ কর্মবিরতি চলমান থাকবে। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুমিনুর রহমান জানান, ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে যৌন হয়রানি ও অশালীন অভিযোগে লিখিত অভিযোগ করেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানানো হলে কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানকে সরিয়ে নেন এবং অন্যত্রে বদলি করেন। হাসপাতালের চলমান কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত গাইনী ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমান মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনা যাচাই বাছাই করে সংবাদ প্রকাশ করবেন। মুঠোফোনে বিস্তারিত জানানো সম্ভব না। জানা যায়, সম্প্রতি চিকিৎসকদের উপর হামলা, যৌন হয়রানীসহ নানা অভিযোগে দফায় দফায় ধর্মঘটের পর আবারও পুরোদমে চালু হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। এরপর নতুনভাবে সাজানো হয় চিকিৎসা সেবার ধরণ। কিন্তু এতকিছুর পরও দুর্ভোগ কমেনি রোগীদের। কারণ বেড সংকট, লোডশেটিংসহ নানান কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও তার স্বজনদের। আগের মত কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলেও কমেনি দালালদের
কক্সবাজার জেলার অর্ধ কোটি মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল।জেলাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করা হয়। যা পরবর্তী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে স্বীকৃতি দেয়া হয়। সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যা উন্নিত করা হলেও ১৫০ শয্যা হাসপাতালেরও জনবল নেই এখানে। এতে সেবাদানে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে রোগী ও স্বাজনদের। প্রতিদিন সকালে আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালের কাউন্টারের সামনে গাদাগাদি করে নারী-পুরুষ অপেক্ষা করে টিকেটের জন্য। টিকেট নিয়ে রোগী ও স্বজনরা ভিড় জমান নির্দিষ্ট রোগের ডাক্তারদের সামনে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা পর কেউ কেউ সাক্ষাৎ পান, অনেকে আবার সাক্ষাৎ না পেয়ে বাড়ি ফিরে যান। এর মধ্যে কেউ কেউ সঠিক সময় চিকিৎসা পেয়ে বেজায় খুশি। কারো কারো মুখে শোনা যায় আক্ষেপ।
রোগী ও তার স্বজনরা জানান, হাসপাতালের ৪র্থ তলা মহিলা ওয়ার্ডে সারা বছরই রোগীদের ভিড় থাকে। এতে চরম দুর্ভোগে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। স্থান সংকুলন না হওয়ায় এক বেটে ২ মহিলাকে চিকিৎসা দিতে হয়। আবার বিছানা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝে-বারান্দায় থাকতে হয়। ফলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসক ও নার্সদের।