মিলি সিকদারঃ ভোলা জেলার প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ভরসারস্থল ভোলা সদর হাসপাতাল। প্রয়োজনীয় জনবল সংকটে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে অনেকাংশে। প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞ জনবল সংকটে ব্যবহার না হওয়ায় প্রায় অকেজো অবস্থায় পরে রয়েছে কোটি কোটি টাকার আধুনিক মেশিনারিজ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভোলা সদর হাসপাতালে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী রোকসানা আক্তার,কনিকা রানী দে, ওয়ার্ড বয় পারভেজ কে দিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। কোমলমতি শিশু ওয়ার্ডের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় কর্তব্যরত নার্স মৌসুমী রায় দাঁড়িয়ে থাকা কালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ধারা শিশুদের কে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আর এ সকল কাজ দেখেও যেন না দেখার ভান করছেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ।
ভোলার সুনামধন্য এ হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অভিযোগের সুরে নাজমা নামের এক নারী বলেন, সরকারি হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে বে-সরকারি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন জেলার চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী জেলা ও উপজেলা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে এখন বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তুলেছেন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
এ বিষয়ে ভোলার সিনিয়র সাংবাদিক মোকাম্মেল হক মিলন অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ভোলা একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জেলা। এই জেলায় চিকিৎসা সেবার একমাত্র স্থান হচ্ছে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালটি। একমাত্র চিকিৎসার স্থল সে হাসপাতালটি যদি এত সমস্যায় জর্জরিত হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আফনান মাসুদ বলেন, এ হাসপাতালটি ভোলার চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের সঠিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভোলার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ এ বিষয়ে অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জোরালো আবেদন জানান, তারা যেন অতি দ্রুত হাসপাতালটির এই ধরনের সকল সমস্যা সমাধান করে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারেন সেদিকে তাদের কে সজাগ দৃষ্টি দেওয়া জন্য।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হসপিটালে ৬০ জন বিশেষজ্ঞ এমবিবিএস ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সেখানে ডাক্তার আছেন মাত্র ২৩ জন। হাসপাতালটিতে রোগীদের নিরবিচ্ছিন্ন স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য মোট নার্সের প্রয়োজন ৮৬ জন, অথচ সেখানে নার্স রয়েছেন ৬০ জন তার মধ্যে ছুটিও বিভিন্ন কোর্সে হাসপাতালের বাহিরে আছে ১৫ জন।
এ বিষয়ে ভোলা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মু.মনিরুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও গুলো দেখেছি। ভিডিও গুলো দেখে আমি সাথে সাথে ই হাসপাতালের আরএমও তৈয়বুর রহমান কে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছি।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হসপিটালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মু.মনিরুল ইসলাম এর দেওয়া নির্দেশনার বিষয় জানতে চাইলে হাসপাতালের আরএমও তৈয়বুর রহমান জানান, উক্ত বিষয়টি আমলে নিয়ে এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নার্স ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের শোকজ করা হয়েছে। উক্ত শোকজ এর যদি তাহারা সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারে তাহলে আমরা আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করব এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ যেন আর কখনো না ঘটে সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।