দেহ তল্লাশির নামে রাস্তায় পুলিশের হয়রানি

0
452

ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হওয়ার কারণে এই চৌকির সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। উদ্দেশ্য সন্দেহভাজন লোকদেরকে তল্লাশি করা এবং বেআইনি কিছু পেলে তা উদ্ধার করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ও জননিরাপত্তা বিধান করার জন্য এটি নিসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এই ভালোর ভেতরে যদি কিছু খারাপ ঢোকে তবে তা সমালোচনার জন্ম দেয়। রাজধানীর অনেক স্থানে দেখা যায় হেঁটে যাওয়ার সময় থামিয়ে বা গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশ দেহ তল্লাশি ও ব্যাগ হাতাচ্ছে। যুবক ছেলে দেখলে দূর থেকে পুলিশ সিগনাল দিয়ে রিক্সা থামায়, ধমকি দিয়ে নামায় তারপর একের পর এক দেহ তল্লাশি করে ও সাথে থাকা ব্যাগ থেকে মালামাল নামিয়ে সব দেখতে থাকে। মানি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে সব কিছু উল্টপাল্ট করে ফেলে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে সব বের করে দেখতে থাকে। এত তল্লাশির পর কিছু না পেলে শুরু হয় একের পর এক প্রশ্ন। কোথায় থাক, কোথায় যাবে, দেশের বাড়ি কোথায়, এখানে কিসের জন্য আসলে ইত্যাদি প্রশ্ন করে নাজেহাল করার অপপ্রয়াস চলে। একবার নারভাস করতে পারলে পুলিশের লাভ। কারণ যুবকদেরকে নারভাস করতে পারলে পুলিশের যে কোন প্রস্তাবে রাজি হবে। আর রাজি না হলে ধরে থানায় নিয়ে গেলে আরও বেশি খেসারত দিতে হবে। তাই সময়ের এক প্রহর অসময়ের দশ প্রহরের চাইতে ভাল। তল্লাশি করার দায়িত্বে থাকা পুলিশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে রাস্তায়ই ফায়সালা করা ভাল। কারণ থানায় গেলে আরও বেশি মাশুল গুনতে হবে। সিআরপিসি’র ১০৩ ধারা অনুযায়ী পুলিশ কোন সন্দেভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি করতে হলে স্থানীয় তিনজন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে সাথে রাখতে হবে এবং এই তিনজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সামনে তলালাশি করতে হবে। কোন আপত্তিকর কিছু পেলে তা সিজ করে সিজার লিস্টে তিনজন গণমান্য ব্যক্তির স্বাক্ষর নিতে হবে। অথচ বাস্তবে হচ্ছেটা কি? পুলিশ কি তার নিজের আইন নিজেরাই মানছে? পথচারি বা গাড়ি থেকে নামিয়ে পুলিশ এভাবে মানি ব্যাগ ও পকেটে হাত ঢুকিয়ে ভীতি সৃষ্টি করতে পারে? ঢাকার যাত্রাবাড়ি চৌরাস্তা থেকে একটু সামনে যাত্রাবাড়ি আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের পূর্ব পাশে মেইন রোডের পাশে পুলিশ এভাবে তল্লাশি করছে। আরেকটু সামনে স্বামিবাগ মিতালি স্কুলের দক্ষিনে মেইন রোডের পাশেও একই চিত্র দেখা যায়। চার পাঁচজন পুলিশ রিক্সা থামিয়ে যাত্রির পকেটে হাত ঢুকিয়ে কি যেন খুঁজছে। সুত্রাপুর থানাধীন দয়াগঞ্জ চৌরাস্তার পাশে পুলিশ তল্লাশি চৌকি বসিয়ে পথচারি থামিয়ে দেহ তল্লাশির নামে একই কান্ড করছে। এদিকে গাড়ির কাগজ সঠিক আছে কি না ? তা দেখার জন্যও আরেক তান্ডব চলছে। ঢাকার মতিঝিলে সোনালী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের পূর্ব দিকে ইউ টার্ন নেয়ার ব্যস্ত এলাকায় মোটর সাইকেল ও প্রাইভেট কার থামিয়ে ট্রাফিক পুলিশ কাগজ পরীক্ষা করছে। এ সময় ব্যস্ত এলাকাটিতে যানজট লেগে জণহয়রানি চলতে থাকে। এমন একটি ব্যস্ত এলাকায় গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করার জন্য ট্রাফিক পুলিশকে অনুমোদন কে দিয়েছে তা প্রশ্নবিদ্ধ। তল্লাশির নামে এধরনের হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 2 =