হিংসা বিহীন হৃদয় গড়ি

0
707

হায়াত মাহমুদ: হিংসা: حسد আরবী শব্দ এর বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে হিংসা , অপরের সুখ দেখে রোষে পুড়ে মরা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় , অপরের সুখ ও সাফল্য দেখে তার ধ্বংস কামনা করা এবং সেই সুখ নিজের হোক বা না হোক তার অবমাননা করার প্রচেষ্টা-ই হলো حسد  ( হিংসা )। হিংসা একটি জঘন্যতম পাপ কাজ। হিংসুক ব্যক্তি কখন সফলতা অর্জন করতে পারে না। আর সফলতা অর্জন করলে ও তা বেশী দিন স্থায়ী হয় না।

হিংসুক ব্যক্তির হৃদয় সব সময় সংকীর্ণতায় পরিপূর্ণ থাকে।সে কখন উদার হৃদয়ের অধিকারী হতে পারে না।তার হৃদয় অবিরাম অন্যের সফলতা দেখে রোষে পুড়ে মরতে থাক। হিংসুক ব্যক্তি হিংসার কারনে অনেক সময় অন্যের সফলতার পথ রুদ্ধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। ইতিহাস সাক্ষ্য যে, ইহুদী,খ্রিষ্টান ও মুনাফিকরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা মুসলিমদের সফলতা দেখে তাদের অন্তর জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে থাকতো। কাফিরদের অন্তর মুসলিমদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, সফলতা, অগ্রবর্তী হওয়া মেনে নিতে পারেনি।তাই তারা নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি হিংসার বশবর্তী হয়ে যাদু করে  নিঃশেষ করে দিতে চাইল।

 মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা ফালাক এর ৫ নং আয়াতে জানিয়েছেন-

وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

অর্থাৎ হিংসুক ব্যক্তিরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে হিংসার বশবর্তী হয়ে যাদু করে ছিল তা এই আয়াত দ্বারা প্রতিয়মান হয়। হিংসা একটি জঘন্যতম অপরাধ এবং পাপ কাজ।নিচের হাদিসটি হিংসামুক্ত মানুষের বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ বহন করে।

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু  হতে বর্ণিত।তিনি বলেন , রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলা হল , সবচেয়ে ভাল মানুষ কে? তিনি বলেন , ‘প্রত্যেক হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং সত্য কথার অধিকারী ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম মানুষ’। সাহাবীগণ বললেন , আমরা সত্য কথার অধিকারী জানি। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তর কি জিনিস তা জানি না। তিনি বললেন , যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পরহেযগার। যার মধ্যে (১) পাপ নেই , পাপ হলেই ক্ষমা চায় (২) সীমালংঘন নেই (৩) খিয়ানত নেই (৪) হিংসা নেই (ইবনু মাজাহ হা/৪২১৬)।

এই হাদিস দ্বারা বুঝা গেল যে , প্রত্যেক হিংসা ও বিদ্বেষ মুক্ত মানুষ সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হিসেবে আল্লাহ তায়ালার কাছে চিহ্নিত হয়ে থাকে। আপনি অন্যের সুখ -স্বাচ্ছন্দ্যবোধ , সফলতা , অগ্রবর্তী দেখে হিংসা করবেন না। বরং তার জন্যে দোআ করবেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকেও সফলতা দান করবেন।

 হযরত বারা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন , আমি নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি , মু’মিন ছাড়া আনসারদেরকে কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ছাড়া কেউ তাঁদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে না। যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালবাসবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ভালবাসবেন আর যে ব্যক্তি তাঁদের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে ঘৃণা করবেন।  [ সহিহ বুখারী :  ৩৭৮৩ ]

হযরত আনাস ইবনু মালিক  রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু হতে বর্ণিত। নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন , আনসারদের প্রতি ভালবাসা ঈমানেরই নিদর্শন এবং তাঁদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখা মুনাফিকীর নিদর্শন।[ সহিহ বুখারী  : ৩৭৮৪ ] উপরোক্ত হাদীসদ্বয় দ্বারা বুঝা গেল যে , এক মুসলিম আরেক মুসলিমের প্রতি হিংসা -বিদ্বেষ পোষন করতে পারবে না। যখনই সে অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হিংসা অন্তরে পোষন করবে তখনই তার প্রতি আল্লাহ তাআলার ঘৃনা বর্ষিত হয়। আর তার মধ্যে মুনাফিকির চরিত্র ফুটে উঠে। তাই অপরের প্রতি হিংসা নয় বরং তার কল্যাণ কামনাই হোক আমাদের চরিত্র।

প্রিয় পাঠক , আপনি হয়ত ভেবেছেন এভাবে যে ;

সম্পদশালী ,  বিজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার , সুদর্শন ,   সেরা কবি ,  সেরা সাহিত্যিক  ,  দার্শনিক ,  বেশি আমলকারী ,  শ্রেষ্ঠ বাকপটু , বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী স্টুডেন্ট ,  বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে সেরা শিক্ষক , শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ  , রাজনীতিবিদ , পার্লামেন্ট মেম্বার।

 আপনি একটু চুপ থাকুন।অতঃপর চিন্তা করুন।আপনি যাদের সাথে হিংসা করেছেন  তাতে আপনার লাভ হয়েছে কি ? নিশ্চয় লাভ হয়নি বরং আপনি যেমন ছিলেন তার চেয়ে অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। হিংসা একটি মারাত্মক ব্যাধি যা মানুষের হৃদয়কে তুষের অনলের মতো জ্বালিয়ে দেয়। হিংসা করে আপনি সেরা জ্ঞানী, মেধাবী স্টুডেন্ট , কবি , দার্শনিক , সাহিত্যিক , মানুষ গড়ার কারিগর  শিক্ষক ইত্যাদি  হতে পারবেন না। আর যদি উপরে  উল্লেখিত কোনো একটি ও হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চেয়ে ও সেরাদের সাথে  অথবা আপনার মতো কেউ হতে চায় এমন কোনো ব…

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + seventeen =