বিএনপি কৌশল বুঝে উঠার আগেই হতে পারে আওয়ামীলীগের নির্বাচন

0
319

মোহাম্মদ মোশাররাফ হোছাইন খানঃ বেলজিয়াম সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ অক্টোবর সাংবাদিকদের সাথে দীর্ঘ সময় মতবিনিময় করেন।বাংলাদেশের রাজনীতিতে বৈশ্বয়িক প্রেক্ষাপট বিশেষতঃ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নিয়ে অবস্হান, বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খুটি নাটি সব বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় সব কিছুই স্পষ্ট করেছেন।

সেখানে তাকে বেশ আত্ম বিশ্বাসী দেখা গেছে, কথায়ও তা প্রকাশ পেয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর কথায় এটি স্পষ্ট যে, তার অধিনে নির্বাচনে যদি বিএনপি আসে তো আসলো, যদি না আসে আন্দোলনের মাঠে বিএনপিকে কোন অবস্হাতে দাড়াতে দেয়া হবে না।নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে যখন যে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার তাই করা হবে।

গত পনের বছরে সুনিপুনভাবে বিএনপির মেরুদণ্ড বলতে যা বোঝায় তা ভেংগে চুরমার করে দেয়া হয়েছে। দলটির দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামী, সাজার বোঝার উপর তিনি অসুস্হতায় সহ্যাশায়ী, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কথিত দূর্নীতি মামলার সাজা সহ বিদেশে দীর্ঘদিন অবস্হান করছেন।

বাহ্যত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরই বিএনপির মহা সচিব কাম দলীয় প্রধানের দায়ীত্ব পালন করছেন। মির্জা ফখরুল একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ।কথা-বার্তা, আচার-আচরনে যথেষ্ঠ ভদ্রলোক হিসেবে সর্বমহলে প্রশংসিত।

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ কেন্দ্রিক সৃষ্ট গন্ডগোলের জেরে সরকার তাকে সহ মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সহ কেন্দ্রীয় এবং দেশ ব্যাপী বহু সংখ্যক নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বাসা থেকে গ্রেফতার হওয়া নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন মহলে কানাঘুষাও বিস্তর।বিভিন্ন মহলে এমনও শোনা গেছে, এমন গুরুত্ব পূর্ণ নেতাদ্বয় কেন রাজপথ থেকে গ্রেপতার না হয়ে বাসা থেকে গ্রেফতার হলেন।মির্জা আব্বাসদের মন্চ কাপানো বক্তব্যের অগ্নি ঝড় রাজপথের আন্দোলনে কর্মীহীন উপস্থিতিও ইতোমধ্যেই দলের বিভিন্ন মহলে নানামূখী প্রশ্নের সূত্রপাত হয়েছে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ  বিএনপির বহুল প্রতিক্ষিত একটি মহাসমাবেশ ছিলো। সমাবেশ শুরুর এক ঘন্টার মধ্যেই পুরো মহাসমাবেশকে প্রশাসন পুরোপুরি লন্ড ভন্ড করে দিতে স্বক্ষম হয়। অপর দিকে, আরামবাগে জামাআত ইসলামী অনুমতি ছাড়াই তাদের ঘোষিত সমাবেশ তাদের প্রোগ্রামসূচি অনুযায়ী শেষ করেছে। সমাবেশটি চলাকালীন পুলিশের সাথে কিছুটা ধস্তাদস্তি হলেও তা ব্যাপক ভিত্তিক রূপ লাভ করেনি।

এদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশর সার্বিক প্রস্তিতি নিয়েও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা চুলচেরা বিশ্লেষন করে দেখছেন। তারা বলেছেন,বিএনপির এত বড়ো একটা মহা সমাবেশ করবে অথচ এতে তাদের বহুমুখী পরিকল্পনা থাকার কথা কিন্তু প্রোগ্রামের দিন তা লক্ষ্য করা যায় নি।তাদের বলেন্টিয়ার ব্যবস্হা যদি পরিকল্পনা মাফিক সাজানো হতো, তা হলে ডামাডোল পিটানো মহাসমাবেশের এই পরিস্থিতি নাও হতে পারতো।

গন্ডগোল শুরুর পর পরই কেন্দ্রীয় নেতাদের মন্চ ছেড়ে পলায়ন করার বিষয়টিকে রহস্য জনক বলেও মনে করছেন অনেকে। গন্ডগোল শুরু হতে না হতেই কর্মীদের বিপদে রেখে কোন ঘোষণা বা কিছু না বলে মন্চ ছেড়ে চলে যেতে হলো, কী এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটল যে মূহুর্তেই লাখ লাখ কর্মী মাঠে রেখে কেন্দ্রীয় নেতাদের সরে যেতে হলো? এরচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেও বিএনপি কয়েক ঘন্টা মাঠে টিকে ছিলো এমন নজিরও কম নেই।সেদিন কেন এত সহজে মাঠ সরকারের দখলে দিয়ে দেয়া হয়েছ্ এ নিয়েই পর্যবেক্ষক মহলে চলছে প্রশ্ন পাল্টা প্রশ্ন?জনসভার মাঠে অবস্হানে থাকাবস্হায় নেতাদের গ্রেফতার করা হলে এমন প্রশ্ন আসাটা ছিল অবান্তর।

২৮ অক্টোবর জামাআতের জনসভা ছিলো চেলেন্জিং একটি সমাবেশ । সে চ্যালেন্জে জামাআত তাদের পুরোপুরি অবস্হান জানান দিয়ে দিয়েছে।তাদের শক্ত ভীতের সামনে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে নিরব থাকতে হয়েছে।বিএনপির তুলনায় জামাআতের নেতা কর্মী সংখ্যা কয়েকগুন কম ছিল একথা সত্য কিন্তু জামাতের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিলো তারা সমাবেশ করেই ঘরে ফিরবে ঠিক তারা সমাবেশ করেই ঘরে ফিরেছে।

অপরদিকে, বিএনপির সমাবেশে লাখ লাখ লোক জমায়েত হয়েছে, তবে বাহ্যত তাদের কোন দিক নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনাও ছিলো বলে মনে করেন না অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।

বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে সরকারের যে মহাপরিকল্পনা ছিলো তা এতোটা সহজেই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে তা চিন্তায়ই ছিল না সরকারের এমন মন্তব্যই করছেন অনেকে।

২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ সফলভাবে পন্ড করে দেওয়ার পর সরকারী দল আওয়ামীলীগ এখন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই আছে।দলটি  নির্বাচনী রোড মার্চে এখন অগ্রসর হচ্ছে নির্বিঘ্ন গতিতে।এই গতি  নির্বাচন সফলভাবে সম্পাদন করেই শেষ হবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

অনেকে আবার এমনও মনে করছেন যে, আওয়ামীলীগের পরবর্তী কৌশল কী হবে তা বিএনপি বুঝে উঠার আগেই এমন আরেকটি কৌশলে নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার গঠন করে নিবে।

বিএনপির এক্টিং চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে কৌশলে বিএনপি চালাচ্ছেন তার এ কৌশলে বিএনপির ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার দিকেই যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।তাকে কৌশল গ্রহনে আরো বেশী দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ বলেছেন, তাকে মনে রাখতে হবে এখন সম‌য়টি ১৯৯১ সাল  কিংবা ২০০১ সাল নয়। এখন ২০২৩ সাল, শেখ হাসিনার একটানা শাসন কার্য পরিচালার ১৫ বছর।যেনতেন আন্দোলন করে তার সরকার ফেলে দেয়া যাবে এমন ভাবনা হতে পারে আর্বাচিনদের ভাবনা।ইস্পাত কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হলে শেখ হাসিনা সরকারের টনক নড়তে পারে। নতুবা মাঠেই হতে পারে বিএনপি আন্দোলনের সলিল সমাধি।২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ভন্ডুল করে দেয়ার পর কার্যতঃ হরতাল, অবরোধ জনসাধারণকে পালন করার প্রবনতাই লক্ষিত হচ্ছে।ঢাকায় বিএনপির মাঠ পর্যায়ে উপস্থিতি চোখের পড়ার মতো নয় তবে ঢাকার বাহিরের চিত্রটা ভিন্ন।গত তিন দিনের সর্বাত্মক অবরোধ, আগের হরতালে যুবদল ছাড়া দলটির ছাত্রদল,কৃষকদল,শ্রমিকদল, সেচ্ছাসেবক দল, মৎসজীবি দলসহ অন্যান্য অংগ সংগঠন সমূহের আন্দোলনে কোন ভূমিকা চোখে পড়ার মতো না। বিশেষ করে ছাত্রদল, শ্রমিকদল যেখানে আন্দোলনের মাঠে উত্তাল থাকার কথা সেখানে ছাত্রদল নামে বিএনপির একটি অংগসংগঠন আছে কিনা এমনই প্রশ্ন করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =