লাকসাম রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বেপরোয়া কিশোর- সুফিয়ান সিন্ডিকেট

0
135

এক জায়গায় ১৮ বছর পার,অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্বেও প্রশাসন নিরব!

নিজস্ব প্রতিবেদক : রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত লাইনম্যন সুফিয়ানুর রহমান ১৮ বছর ধরেই পড়ে আছেন রেলওয়ে পুর্বাঞ্চলের লাকসামে। ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে ইলেকট্রিক খালাসী পদে লাকসাম কাজে যোগদান করেন। পরবর্তী খালাসী পদ হতে  ৫বছর পর প্রথম পদোন্নতি পেয়ে সহকারী ওয়্যারম্যান দ্বিতীয় পদোন্নতি আবারও ৫ বছর পর লাইনম্যান গ্রেড -২ পদে পদোন্নতি পেয়ে একই জায়গায় অর্থাৎ লাকসামেই পোস্টিং হয়ে দীর্ঘ ১৮ বছর পার করছে। 

অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী,পদোন্নতি কিংবা একই স্থানে চাকুরী ৩ তিন বছরের বেশি এক কর্মস্থলে থাকার নিয়ম নেই।

অথচ বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী চট্রগ্রাম এর অধীনে কর্মরত অন্যান সকল কর্মচারীদের পদোন্নতি কিংবা একটানা একই স্থানে চাকুরী করার ফলে তাদের অন্যান জায়গায় বদলী করা হলেও অদৃশ্য শক্তির কারনে সুফিয়ানের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্বেও তার একবারও হয়নি বদলী কিংবা বিভাগীয় শাস্তির আদেশ।

অভিযোগ রয়েছে নিজের নামে বরাদ্দ হওয়া কোয়ার্টারে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে তা বহাল তবিয়তে ব্যবহার করছেন ১০ বছর ধরে। যার ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা।

নিজের নামে রেলওয়ের বরাদ্দকৃত কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে ৫/৬ মাস আগে লাকসাম রেলওয়ের সরকারি রেস্ট হাউজের পাশে (টি/৭-সি) বাসা সিলগালা অবস্থায় তালা ভেঙ্গে দখল করে সেখানে সপরিবারে থেকেছেন। একই কর্মচারী দুটি বাসা নিজের কাছে দখল করে তাও সরকারী সিলগালা ভেঙ্গে ভোগ করা আইন অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। এতেও সরকার রাজস্ব হারিয়েছে। সুফিয়ানের নামে বরাদ্দকৃত বাসা হতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ লাইন আবুল কালামের ছেলে কামালকে দিয়ে রাতারাতি গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

জানা যায়, সুফিয়ানের নামে বরাদ্দকৃত কাঠালবাগান কলোনিতে বাসা (ই/৫৮ডি) বরাদ্দ হয় সুফিয়ানের নামে। সুফিয়ানের বাসায় কামাল নামের এক ব্যক্তির মা-বোন ভাড়ায় থাকেন। অন্যদিকে সুফিয়ানের দখলকৃত বাসা রাতারাতি নিজেই খালি করে নিজে তালা মেরে আপাতত পরিবার নিয়ে লাকসাম বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত নব নিয়োগ খালাসী তুষার মিয়ার নামে বরাদ্দকৃত লাকসাম ট্রাফিক কলোনীতে পরিবার নিয়ে উঠেন। খালাসী তুষার মুলত সুফিয়ানের সান্নিধ্য পেতেই সুফিয়ানের পরিবারকে বিনাভাড়ায় জায়গা দিয়ে লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসের পাওয়ার হাউজে কষ্ট করে থাকেন।

সুফিয়ান এই লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসে দীর্ঘ ১৮ বছরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে গ্রাহক হতে লক্ষ লক্ষ টাকা। অবৈধ বিদ্যুতের আয়ের টাকা দিয়েই তার আপন দুই বড় ভাইকে রেলওয়ে মেকানিক্যাল বিভাগে সিলেট জেলায় খালাসী পদে চাকরি দিয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলায় জায়গা সম্পত্তিও কিনেছে।

সুত্র আরও জানা যায়, ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যুৎ লাকসাম কিশোর চন্দ্র দেববর্মা কে পুঞ্জি করে একক আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে এই সুফিয়ান।

অনুসন্ধানে জানা যায়,লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসে নতুন কোন কর্মচারী কাজে যোগদান করতে আসলেই তার গতিবিধি প্রখর ভাবে লক্ষ্য করে  সুফিয়ান সিন্ডিকেট। এছাড়া কোন কর্মচারী ছুটি/ বিশ্রাম নিতে গেলে সুফিয়ানের অনুমতি লাগে।  কখন- কাকে, কোথায়? ডিউটি করাবে তা কিশোরের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুফিয়ান নিজেই একক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকে তাও একজন গ্রেড -২ কারিগর হয়ে।

অভিযোগ রয়েছে তার উপরে সিনিয়র কারিগর কিংবা মিস্ত্রিদেরকে কিশোর – সুফিয়ান সিন্ডিকেট কোন মুল্যায়ন করেন না বরং তাদের ওপর আধিপত্য খাটায়। 

সুফিয়ান পরিবার লাকসাম আনার আগে অফিসের একটি রুমে ব্যাচেলর হিসেবে থাকতেন থাকাকালীন টিএলআর খালাসীদের কে ডিউটি না করিয়ে তার খাবার তৈরী, বাজার কিংবা ব্যক্তিগত কাজ করাতেন এই সুফিয়ান। এছাড়াও কোন কর্মচারীকে কোথায় কখন কিভাবে ডিউটি করাতে হবে তার সিদ্ধান্ত সুফিয়ান নিজেই করে থাকেন। সুফিয়ানের সিদ্ধান্ত ঊর্ধতন উপসহকারী প্রকৌশলী কিশোরচন্দ্র দেববর্মা একমত পোষণ করেন। সুফিয়ানের সিদ্ধান্তই কিশোরের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

লাকসাম ঊর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তারা ভিজিট করতে আসলেও সেখানেও চলে সুফিয়ানের কর্তৃত্ব। কিশোর দাঁড়িয়ে থেকে সুফিয়ান কে লেলিয়ে দেয়। এছাড়া কিশোর বাবু দেশের বাইরে গেলেও নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসাবে কর্তৃপক্ষ যাকে দায়িত্ব নিযুক্ত করতো তিনিও ঠিক মতো অফিসে আসতো না সুফিয়ান না বলা পর্যন্ত। কিশোরের সরকারি মোবাইল সিম কিশোর সুফিয়ানের নিকট হস্তান্তর করে যেত। বর্তমানে লাকসাম বিদ্যুৎ অফিসে কিশোর- সুফিয়ান অত্যন্ত কৌশলী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে।

এছাড়াও সুফিয়ানের বিরুদ্ধে রয়েছে বৈদ্যুতিক সংযোগ বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অভিযোগও। নিজেও মিটার ব্যবহার না করে বছরের পর বছর অনিয়ম করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে রেলের এ কর্মচারি। বর্তমানে দখল করা বাসায় কোন বিদ্যুৎ মিটার ছিল না। মূল সংযোগ থেকে বৈদ্যুতিক তার বাইপাস করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে সুফিয়ান। তার এ অনিয়ম ও দখলের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গত ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্র পাঠায় রেলওয়ে কাঠালবাগান কলোনির বাসিন্দারা। অদ্যবদি রেলওয়ের পক্ষ হতে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

“সুফিয়ান প্রকাশ্যে বলে বেড়ায় আমার নামে পত্রিকায় লেখালেখি করে আজ পর্যন্ত কোন লাভ হয়নি। সাংবাদিককে তথ্য দিয়ে যারা সহযোগিতা করেছে বরং উল্টো তাদেরই ক্ষতি হয়েছে। সাংবাদিকরা হলো টাকার পাগল। টাকা দিলেই সুর সুর করে লেখালেখি বন্দ করে দেয় আবার বলেও দেয় কে তাকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। নাম না বলা সত্বে সুফিয়ান বলে আমার বিরুদ্বে স্থানীয় এক সাংবাদিক কিছুদিন অনেক লেখা লেখি করেছে।

পরে সে যখন দেখছে প্রশাসন আমার পক্ষে তখন টাকা খাওয়ার জন্য আমার সঙ্গে সমঝোতায় বসে। টাকা নিল ২০ হাজার আবার পরিবারের জন্য হোটেল হতে গ্রীল সহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে যেত। তাকে নিউজের জন্য কে সহযোগিতা করেছে জানতে চাওয়ায় তার নাম বলে দিয়েছে। তাকে যে সহযোগিতা করেছে তার কি লাভ হয়েছে? উল্টো ডিপাটমেন্ট তাকে ডিভিশন হতে বদলী করে দিয়েছে।

প্রশাসন কি চায়? সেটি আমি প্রতিমাসে পাঠিয়ে দিচ্ছি।  তাই প্রশাসন আমার কিচ্ছু করতে পারবেনা এবং কিচ্ছু হবেও না। আমার পিছনে যে লাগবে তার অবস্থা এর চেয়ে খুব খারাপ হবে।   সব টাকার ভাগ আমি সুফিয়ান একা খাই না ফোরম্যান স্যার (কিশোর বাবু) এবং ডিইই এবং সিইই সহ সকল কর্মকর্তাদের কে দেই। এছাড়া স্টাফ হুগোলরে সবাইকে কম-বেশী দেই এরপরও আমার বিরুদ্ধে কেন নিউজ হবে?  সুফিয়ানের এরকম আচরনের কথাবার্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেল কর্মচারী তার অগোচরে শুনে ফেলে।

এই বিষয়ে লাইনম্যান সুফিয়ানের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি ফোন কেটে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × four =